বৃদ্ধের পা ধরে কি বলতে চাইছেন এই মহিলা, কেন তিনি এমনটা করছেন

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল                                                    ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: মার্চ ২৭, ২০১৮ @ ১৭:৪২

এসপিটি নিউজ, লালগড়, ২৭ মার্চঃ বাঘের দেখা নাই রে বাঘের দেখা নাই।সত্যি, এ এক বড় জ্বালায় পড়েছেন বন দফতরের কর্তারা। প্রায় এক মাস হতে চলল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যে মোটেই ধরা দিতে চাইছে না।কিন্তু তাই বলে কি জঙ্গলের কাজকর্ম আটকে থাকবে? বাঘ ধরা না ধরা সম্পূর্ণ ভাবেই বন দফতরের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু জঙ্গলের কাজকর্মে আদিবাসীদের বাধা তারা কোনওভাবেই দিতে পারে না।

তার উপর সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বন দফতরের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছেন তাতে করে বন আধিকারিকদের চাপ যে বেড়ে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেভাবে সুন্দরবনের একাধিক বোটের লাইসেন্স রিনিউয়ালের ক্ষেত্রে বন দফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সভাধিপতিকে ধমক দিতেও পিছপা হয়নি।মুখ্যমন্ত্রী তো সভাধিপতিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন, কেন এদের লাইসেন্স রিনিউয়াল করা হয়নি। বন দফতরের কথা মতো চলতে হবে নাকি। বন দফতর সব ঠিক করে দেবে! তারপরই মুখ্যমন্ত্রীর সাফ নির্দেশ, ওরা যেভাবে সুন্দরবন যাচ্ছে সেভাবেই যাবে। আমি বলে দিয়ে গেলাম।

এরই মধ্যে জঙ্গলমহলে শিকার উৎসব শুরু হয়েছে।এদিকে আজ পর্যন্ত বন দফতর সেই বাঘটিকে ধরতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। নানাভাবে তারা মানুষকে জঙ্গলে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ করে চলেছে। কারণ, সেই বাঘ। এখন এই বাঘের ভয়ে যদি আদিবাসীরা জঙ্গলে যেতে না পারে তবে এদের পেট চলবে কী করে? এই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এই শিকার উৎসব। যার জন্য জঙ্গলবাসীরা সারা বছর মুখিয়ে থাকে। এখন বাঘের জন্য তাদেরও আটকানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে।

বন দফতর একটা কথাই বলে চলেছে যে বাঘটিকে যতক্ষন পর্যন্ত তারা না ধরতে পারছে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ যেন জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ না করে। কারণ, বন দফতর এক এক সময় একটা জঙ্গলের কথা বলছে যেখানে বাঘ অবস্থান করছে। এদিন যেমন বলা হয়েছে বাঘটি লালগড়ের কামরাঙ্গির জঙ্গলে ঘাঁটি গেঁড়েছে। আর তাই তারা বন কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ দিয়ে গোটা কামরাঙ্গির জঙ্গল চারিদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। কাউকে সেখানে তারা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

যদিও বন দফতরের এই নির্দেশ জঙ্গলবাসীরা মেনে নিতে পারছে না। তাহলে তাদের জঙ্গল উৎসব যে মাটি হয়ে যাবে। সেটা তারা কোনওভাবেই হতে দিতে পারেন না। সেই মতো মঙ্গলবার সকাল থেকেই সবাই জঙ্গলমুখী হয়ে পড়েন। হাতে লাঠি-বর্শা-বল্লম নিয়ে তারা জঙ্গলের পথে পা বাড়ান। আর এমন ভাবে হাজার হাজার জঙ্গলবাসীকে জঙ্গলের দিকে যেতে দেখে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বন দফতরের এডিএফও পূরবী মাহাত। এই বন আধিকারিক এখন লালগড় রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার। ইতিমধ্যে তার এলাকায় বাঘ ধরতে এসে দুই বনকর্মীর অকাল মৃত্যু হয়। সেই ক্ষত এখনও শুকোয়নি। এরই মধ্যে জঙ্গলের ভিতর গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এসব ঘটনা এই মহিলা বন আধিকারিকের যে রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।তিনি নিজেও চাইছেন সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মেই চলুক। কিন্তু সব কিছু যে ভেস্তে দিচ্ছে ওই রয়াল বেঙ্গল টাইগার! এটা এই মহিলা আধিকারিককে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে। একদিকে সাধারাণ মানুষের প্রাণ আর একদিকে দফতরের উপর তলার চাপ উভয় সঙ্কটে পড়ে এখন পূরবী মাহাতর খুব অসহায় দশা।

আর তাই নিজে একজন সরকারি আধিকারিক হয়েও সামান্য এক জঙ্গলবাসীর পা ধরে কান্নাকাটি করে তাকে অনুরোধ জানাতেও পিছপা হননি তিনি। কারণ তিনি মনে করেন, ঐ বৃদ্ধ বয়সে তার চেয়ে অনেক বড়। তাছাড়া উনি শিকারি দলের নেতাও। তাই তাকে অনুরোধ করে যদি কিছু উপায় হয়, মানুষ যদি তাদের সিদ্ধান্ত বদলায় তাহলে সবাই রক্ষা পায়। কারণ, বাঘটি যে অবস্থায় আছে তাতে যে কোনও মুহূর্তে যে কারও উপর আক্রমণ করতে পারে। তাই আমাদের আগে থেকে সতর্ক থাকা দরকার। তাই তিনি ঐ বৃদ্ধ শিকারির পায়ে ধরে বলতে চেয়েছেন, “আপনারা দয়া করে জঙ্গলের ভিতর ঢুকবেন না। সেখানে বাঘ আছে> এতে বিপদ আরও বাড়বে। আপনারা দয়া করে আমার কথা শুনুন।”

একটা বড় অংশের শিকারিদের ফেরানো গেলেও কিছু শিকারি এখনও জঙ্গলের ভিতর আছে। তাদেরকে কিভাবে ফেরানো যায় তারই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বন ও পুলিশ প্রশাসন।

Published on: মার্চ ২৭, ২০১৮ @ ১৭:৪২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 14 = 17