Published on: জুলা ২৫, ২০১৯ @ ১৬:০১
এসপিটি নিউজ ডেস্ক: কারগিল বিজয়ের বীরযোদ্ধাদের গল্প আজও নানা রঙে অবিস্মরণীয় এবং আবেগ পূর্ণ হয়ে আছে।বিশেষ পরিস্থিতিতে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করা বীর যোদ্ধাদের মধ্যে একজন হলেন রাহাতকের একটি গ্রাম খুরদাদের বাসিন্দা ক্যাপ্টেন প্রতাপ সিং। এই যুদ্ধের মুহূর্ত স্মরণ করতে গিয়ে আজও তিনি এখনও সমানভাবে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে যুদ্ধের সময় অবস্থাটা কত কঠিন ছিল। খিদে পেলে, তারা পাশে রাখা ভাজা ছোলা খেতেন আর তৃষ্ণা পেলে মুখে বরফের খন্ড ফেলে দিতেন।
অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেনের স্মৃতি রোমন্থন
প্রকৃতপক্ষে, 2 জুন, 1999, কারগিলের শত্রুদের সাথে যুদ্ধের জন্য 20 সৈন্যকে সৈন্যবাহিনীর সাথে পাঠানো হয়েছিল। ক্যাপ্টেন প্রতাপ সিং মালিক এই ২0 জনের মধ্যে ছিলেন। 4 জুন, শত্রুদের ছোঁড়া গুলি মাথায় লেগে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। যদিও দেশ কারগিল যুদ্ধে জয়লাভ করে আর প্রতাপ জীবনের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। কারগিলের বিজয়ের 20বছর পূর্ণ হওয়ার পর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন প্রতাপ সিং মালিক দৈনিক জাগরনের সাথে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছিলেন।আমরা তারই সূত্র ধরে বীরের কাহিনি শুনছি।
ক্যাপ্টেন প্রতাপ সিং মালিক বলেন যে 1978 সালে সৈন্য নিয়োগ করা হয়েছিল 4 -জাঠ রেজিমেন্টে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন। প্রথম তাকে পাঠানো হয়েছিল হিমালয় প্রদেশে। কিন্তু পরে তাকে কারগিল সেক্টরে কাকসরে পাঠানো হয়। 1999 সালে তিনি কারগিল সেক্টরে হাবিলদার হিসেবে কাজ করেন। তখন জানা গেছিল যে, ক্যাপ্টেন সৌরভ কালিয়া সহ 6 জন জওয়ানকে অনুপ্রবেশকারীরা 5299 পাহাড়ে আটক করে রেখেছে।
শত্রুর বোমার আঘাতে মাথায় চোট পেয়েও চাকরিতে ফিরে আসেন
তারা গোলাবারুদের অনুসন্ধানে যায়। তখন তাদের লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছোঁড়া শুরু হয়। পরে, সব মৃতদেহ পাওয়া যায়, যেখানে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। এই ঘটনায় সেনাদের জওয়ানদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল। এর পর, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অপারেশন বিজয় শুরু হয়। তিনি নিজেই এই অপারেশন জড়িত ছি্লেন কিন্তু তিনি ব্যাকআপ-এ ফিরে গিয়েছিলেন। আরোহণের উচ্চতা কোনো হুমকির চেয়ে কম ছিল না, কিন্তু সৈন্যদের প্রতিশোধ নেওয়ার দায়িত্ব এবং দেশের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বের সামনে সব মামুলি ছিল।
পাহাড়ের শীর্ষে আরোহণ করতে রাতকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল
ক্যাপ্টেন প্রতাপ সিং বলেছিলেন যে শত্রুরা উপরে বসে ছিল, তাই দিনের বেলায় পর্বত আরোহণ করা সহজ ছিল না। রাতে যখন পাহাড়ে আরোহন করা হত তখন শত্রুর নজর এড়ানো সহজ ছিল। কারণ, দূর থেকে দেখা সম্ভব ছিল না। ‘খাওয়ার জন্য আর কিছুই ছিল না, তাই ব্যাগগুলোতে ছোলাভাজা ভাজা রাখা ছিল। যখন খুব খিদে পেত তখন ওই ছোলা ভাজা খেতাম আর তেষ্টা পেলে মুখের মধ্যে বরফ টুকরা রেখে দিতাম। পাহাড় এত চড়াই ছিল যে আরোহণ করা কঠিন ছিল, তাই বেশি পরিমান খাদ্যসামগ্রী বহন করা সম্ভব ছিল না।’ বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন প্রতাপ সিং।
শত্রুর বুলেট মাথায় ছিল, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কয়েক মাস
ক্যাপ্টেন প্রতাপ সিং বলেন, 4 জুন তিনি পাহাড়ের মাথায় পৌঁছে যান। এটা রাতের সময় ছিল। শীর্ষে ওঠার সময় সময়, মাথা দিয়ে ঘাম ঝরছিল, যার ফলে হেলমেট কয়েক মুহূর্তের জন্য পড়ে যায়। এই সময়ে, শত্রুর দিক থেকে একটি গোলা এসে মাথায় লাগে, এবং তিনি গুরুতর আহত হন। শুধু আহত হন নি তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জওয়ানরা তাকে কারগিল হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখান থেকে তাকে শ্রীনগর বেসে পাঠানো হয়েছিল।
আজও শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে বীর যোদ্ধার
পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হওয়ায় তাকে দিল্লিতে সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেশ কয়েক মাস ধরে সেখানে তার চিকিৎসা চলে। প্রাণে বেঁচে যান প্রতাপ সিং, যখন তাঁর সম্বিত ফেরে তখন কারগিল যুদ্ধ বিজয়ের খুশির খবর মেলে।হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে কিছুদিন তিনি বাড়িতে বিশ্রামে কাটান। দ্বিতীয়বার কাজে যোগদানের সুযোগ পেতেই ভারত মাতার এই বীর সন্তান ফের কারগিল সেক্টরকেই বেছে নেন। কারগিল যুদ্ধের এক একটি মুহূর্ত তাই আজও তার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
Published on: জুলা ২৫, ২০১৯ @ ১৬:০১