বিবিসি-র চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট: ২০২৫ সালে পাক-ভারত পরমাণু যুদ্ধ, হতে পারে সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি

Main আবহাওয়া দেশ বিদেশ
শেয়ার করুন

  • কাশ্মীর ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগার সম্ভাবনা রয়েছে।আমেরিকার রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়-এর গবেষণায় এমনই ইঙ্গিত উঠে এসেছে।
  • নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, এই গবেষণা একেবারেই কাল্পনিক, যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।”
  • এই গবেষণার সাথে একমত প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানে কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাই। তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের সম্ভাবনা সবসময়ই আছে।”

 Published on: অক্টো ২০, ২০১৯ @ ২১:৪২

এসপিটি নিউজ ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফল নিয়ে বিবিসি রীতিমতো এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা লিখেছে যে কাশ্মীর ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ভয়াবহ সেই মারনঘাতী যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা আছে। গবেষণাটি করেছে আমেরিকার রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়।

বিবিসি বাংলা সংবাদটির শিরোণাম দিয়েছে-“পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ ২০২৫ সালে, সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি: যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট”। সেখানে তারা লিখেছে- যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অ্যালান রোবোক এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন- “ভারত ও পাকিস্তান তাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে। শুধু সংখ্যার বিচারেই নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণের শক্তিও তারা ক্রমাগত বৃদ্ধি করছে। ফলে তাদের আশঙ্কা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেই এই যুদ্ধের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।”

কিভাবে যুদ্ধ শুরু হবে তার কিছু কাল্পনিক দৃশ্যপটও তৈরি করেছেন গবেষকরা। কেমন সেই দৃশ্যকল্পগুলি-

দৃশ্য-কল্পঃ ১

ভারতের সংসদে হামলা চালাবে এক সন্ত্রাসী। নিহত হবেন ভারতীয় নেতারা। এর জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে আক্রমণ চালাবে। তখন আত্মরক্ষার্থে পাকিস্তান পারমানবিক বোমা ব্যবহার করবে। তখন ভারতও পালটা তাদের পারমানবিক বোমা ব্যবহার করবে। শুরু হবে দু পক্ষের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ।

দৃশ্য-কল্পঃ ২

কাশ্মীরে আক্রমণ করবে ভারত। যার ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তবে দুই দেশে যদি বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন নেতারা ক্ষমতায় থাকেন তাহলে হয়তো এমনটা কিছুই ঘটবে না, এবং সেকারণেই এখনও তেমনটা ঘটে নি।

কেন ২০২৫ বাছা হল

তবে এই যুদ্ধের কাল্পনিক সময়কাল কেন ২০২৫ সাল তা নিয়েও গবেষক রোবক তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন- “এই যুদ্ধ যেকোনো সময়ে লাগতে পারে, হতে পারে আগামীকালও। ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোন তথ্য থাকে না। কখন কী হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। সেকারণে আমরা কিছু দৃশ্য-কল্প ব্যবহার করেছি কী হতে পারে সেটা বোঝার জন্যে। সেই সম্ভাবনার কথা চিত্রিত করতে আমরা শুধু একটা সময়কে বেছে নিয়েছি।”

ভিন্ন মত ভারত-পাক মহলে

  • এই যুদ্ধ সম্পর্কে দুই ভিন্ন মত পোষণ করেছেন ভারত-পাকিস্তানের দুইজন। ভারতীয় সেনা বাহিনীর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “এই গবেষণা একেবারেই কাল্পনিক, যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।লোকেরা ভাবছেন দুটো দেশের আণবিক বোমা আছে, তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়, তার মানে পাঁচ ছ’বছর পর তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাবে। “তবে তিনি বলেন, ২০২৫ সালে না হলেও যেকোনো সময় এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ হতে পারে।
  • এই গবেষণার সাথে একমত প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানে কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাই। তিনি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধের সম্ভাবনা সবসময়ই আছে।”কোন পরিকল্পনা থেকে নয়, বরং দুর্ঘটনাবশতই এরকম যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। দুটো দেশের মধ্যে যদি অনন্তকাল ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে, এবং তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকে, তাহলে তো অনেক কিছুই ঘটতে পারে।”
  • উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “কাশ্মীরের পুলওয়ামার পর বালাকোটে যা হয়েছে, পাকিস্তান ‌এর আরো কঠোর জবাব দিতে পারতো। তখন ভারতও কিছু একটা করতো। এরকম একের পর এক ঘটনায় উত্তেজনা এতোটাই ছড়িয়ে পড়তে পারতো যে পারমাণবিক যুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারতো।”

অন্য কোথাও

বিবিসি বাংলা লিখছে- পারমাণবিক অস্ত্র আছে বিশ্বের মোট ন’টি দেশের। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র এই অস্ত্র তৈরি করে, তার পরে আজকের রাশিয়া। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চিনের হাতেও পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। কাকতালীয় হলেও এই পাঁচটি দেশ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। এর বাইরে ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল এবং উত্তর কোরিয়ারও পরমাণু অস্ত্র রয়েছে।এর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করেছে।

রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলছেন, “পরমাণু শক্তিধর এসব দেশের যেকোনো দু’টোর মধ্যেই পরমাণু যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবার পরমাণু শক্তিধর একটি দেশ এমন আরেকটি দেশে আক্রমণ করতে পারে যাদের পরমাণু অস্ত্র নেই।”

পরমাণু অস্ত্র নিয়ে কি ভাবছে বিশ্ব

বিবিসি বাংলার রিপোর্টে প্রকাশিত সংবাদে গবেষক অ্যালান রোবোক বলছেন, এর আগেও বেশ কয়েকবার পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।”ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তো আমি বলতে পারবো না। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে গত ৭৪ বছরে এই বোমা আর ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্বের অর্থ হচ্ছে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হতে পারে। আমরা যদি এসব ব্যবহার না করি, এগুলো ব্যবহারের যদি যৌক্তিক কোন কারণ না থাকে, তাহলে এসব ধ্বংস করে ফেলা উচিত।”

তিনি বলেন, “২০১৭ সালে জাতিসংঘে পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে একটি চুক্তি সই হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩২টি দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করেছে। ৫০টি দেশ অনুমোদন করলেই এটি কার্যকর হবে। তাই এখন বাকি বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।”

গবেষকরা বলছেন, পারমাণবিক বোমা যেখানে পড়বে, শুধু সেখানকারই মানুষই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যেই সেটা হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

পরিণতি ভয়াবহ হতে হতে পারে

  • পরিস্থিতি কি ভয়ানক হতে পারে তার বর্ণনা করেছেন জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যালান রোবোক। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, “পারমাণবিক বোমার ফলে আগুন লেগে যাবে, সেই আগুন থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হবে সেটা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এই ধোঁয়ার কারণে আমাদের এই গ্রহে সূর্যের আলোও ঠিক মতো এসে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে পৃথিবী অনেক ঠাণ্ডা আর অন্ধকারময় হয়ে পড়বে।”
  • “ধোঁয়া যখন পৃথিবীর আরো উপরের আবহমণ্ডলে চলে যাবে তখন সেটা সূর্যের আলোতে উত্তপ্ত হয়ে আরো বেশি ছড়িয়ে পড়বে যা সেখানে স্থায়ী হবে কয়েক বছর। বৃষ্টিপাত কমে যাবে। তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ঘটবে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনের ওপর। ফলে যুদ্ধের পরেও অনাহারে আরো বহু মানুষের মৃত্যু হবে।”

Published on: অক্টো ২০, ২০১৯ @ ২১:৪২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 + 4 =