“আমি ওখানে রবীন্দ্র সঙ্গীত চালাচ্ছি আর এখানে বিরোধী রাজনৈতিক দল যারা করছে তাদের মাথায় লাঠি মেরে ভাঙছি। এটাই এখানকার সংস্কৃতি হয়ে গেছে।” নাম না করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বারুইপুরে বললেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
Published on: ফেব্রু ২, ২০২১ @ ১৯:৫১
এসপিটি নিউজ, বারুইপুর, ২ ফেব্রুয়ারি: বিজেপিতে যোগদানের পর এই প্রথম বারুইপুরে বিজেপি-র মঞ্চে বক্তব্য রাখলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। আর গেরুয়া শিবিরে দাঁড়িয়ে একদিকে যেমন নাম না করে তৃণমূল সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন ঠিক তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও উগরে দিলেন ক্ষোভ। একই সঙ্গে বাংলায় বেকার যুবক-যবতীদের চাকরি না হওয়ার জন্য রাজ্যের বর্তমান শাসক দলকে দুষতেও ছাড়লেন না রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বর্তমান বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনীতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সভা-সমাবেশ করতেই পারে-রাজীব
“আমি এর আগেও বারুইপুরে এসছি। কিন্তু আজ এত মানুষ দেখে মনে হচ্ছে বারুইপুরের মাটি ভারতীয় জনতা পার্টির মাটি এটা দুর্জয় ঘাঁটি। আমি আজকে অবাক হলাম যে কী অবস্থায় এসছে দেখুন! আমরা একটা রাজনৈতিক দলে যোগদান করেছি। গণতন্ত্রের একজন মানুষ তাঁর পছন্দ মতো একট রাজনৈতিক দলে যোগদান করতেই পারে। তাতে কোথাও কোনও অপরাধ আছে বলে আমি মনে করি না।” বলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের পায়ের তলায় মাটি নেই এটাই প্রমাণ করে দেয়-রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়
“কিন্তু আমরা কী দেখছি যে বর্তমানে যারা শাসক দল যখনই দেখছে বিরোধী রাজনৈতিক দল আন্দোলন করছে কিংবা কোথাও সভা-সমিতি করতে যাচ্ছে তখনই তাদের মধ্যে একটা ভয় ভয় গেলো গেলো রব উঠে গেছে। কেন এত ভয় পাচ্ছে?কেন এত হতাশা? আজকে যখন আমি আসছিলাম ওখান থেকে আমার মনে হয় শুভেন্দু অধিকারী সহ আমাদের যারা নেতৃত্ব আসছিলেন আমি অবাক হয়ে দেখছি যে কিছু লোক কালো পতাকা নিয়ে নাড়াচ্ছে। আমি দেখলাম খুব ভালো কথা। ভাই, কোনও একটা পতাকা নিয়ে তো নাড়াচ্ছে। কালো পতাকা নিয়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। এটাই প্রমাণ করে দেয় বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের দেউলিয়া অবস্থা প্রমাণ করে দেয়। তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই এটাই প্রমাণ করে দেয়। এটাই প্রমাণ করে যে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার, সৌজন্যতা কোথাও আর বাকি নেই।”বলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই রাজ্য সরকারের আমলে প্রায় পাঁচ লক্ষের মতো স্থায়ী শূন্যপদ পড়ে রয়েছে
রাজীব বন্দ্যোপাধায়ায় এদিন রাজ্যের কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে বলেন- “আজকে কী করেছে দেশটার জন্য। আজকে রাজ্যটার অবস্থা কোথায় চলে গেছে – আজকে আমাদের ভাবতেও অবাক লাগে।স্থায়ী চাকরি হচ্ছে না। বাংলার বেকার যুবকরা স্থায়ী চাকরি পাচ্ছে না। বাংলার বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। জেনে রেখে দিন এই রাজ্য সরকারের আমলে প্রায় পাঁচ লক্ষের মতো স্থায়ী শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। একটাও চাকরি কেউ পাচ্ছে না। কয়েকটা কন্ট্রাকচুয়াল দিয়ে তাদেরকে কোনওভাবে বন্ধ করা হচ্ছে। আমি আজ দায়িত্ব নিয়ে বলে গেলাম যদি ভারতীয় পার্টির সরকার বাংলায় আসে তাহলে আমাদের কাজ হবে বাংলার যুবক-যুবতীদের স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা।”
মানুষের সাথে কেন আমি বেইমানি করব?প্রশ্ন রাজীবের
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে রাজীব বলেন- “উনি বলেন- আমি মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করি। যদি সত্যিকারের মানুষের স্বার্থে কাউকে রাজনীতি করতে হয় তাহলে মানুষের সাথে কেন আমি বেইমানি করব? আগে এই প্রশ্নটা করতে চাই। মানুষের জন্য যদি কাজ করতে হয়ে তাহলে কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া না করে আমার উচিত ছিল কেন্দ্রের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে বেশি করে টাকাপয়সা এনে মানুষের জন্য যাতে কাজ করা যায় তার ব্যবস্থা করা।তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করছেন বারবার। কখনো কোনও সদ্ভাব রাখেননি।তাদের নামে নানারকম কথা বলেন, কুৎসা করেন। আর ভাবেন কেন্দ্র এমনি এমনি সবটা দিয়ে দেবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই যে বাংলার মানুষ আজ চাইছেন যে কেন্দ্র-রাজ্য একসাথে চলুক।”
‘কেন্দ্রের প্রকল্প ইচ্ছেকৃতভাবে রাজ্যে ঢুকতে দিচ্ছে না’
রাজীব ফের বলেন- “আজকে ভাবুন তো- কেন্দ্রের অনেকগুলো প্রকল্প আছে সেগুলোকে ইচ্ছেকৃতভাবে রাজ্যে ঢুকতে দিচ্ছে না। কোথাও উনি বলছেন আমাদের ৪০ কিংবা ৬০ শতাংশ দিতে হয়। আরে যদি ৪০ -৫০ শতাংশ দিয়ে কেন্দ্রকে একশো শতাংশ দিতে হয় তাহলেও তো এই রাজ্যে ৫০ শতাংশ টাকা বেশি আসে। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। তিনি কি করলেন- উলটে কেন্দ্রের টাকা নিলেন না। যে ৫০-৬০ শতাংশ তারা সাহায্য করত সেই টাকা নিলেন না আর রাজ্যের কোষগার তিনি খালি করে দিলেন। ওই টাকা থাকলে আরও বাংলার মানুষের তিনি উপকার করতে পারতেন। তিনি সেই কাজটা করেননি।”
এটাই প্রমাণ করে দেয় তৃণমূল কংগ্রেস শেষ হয়ে গেছে-রাজীব
“বাংলায় কাজ পাচ্ছেন না। তাই শ্রমিকিরা ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। এই বাংলা সোনার বাংলা। এই বাংলার পরিবর্তন মানুষ ভেবেছিল? আমি ওখানে রবীন্দ্র সঙ্গীত চালাচ্ছি আর এখানে বিরোধী রাজনৈতিক দল যারা করছে তাদের মাথায় লাঠি মেরে ভাঙছি। এটাই এখানকার সংস্কৃতি হয়ে গেছে। আজকে ভাবতে হবে- বাংলার শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-কৃষ্টি কোনওদিনও এগুলোকে সমর্থন করে না। বিরোধী রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রে থাকবে। বিগত দিনে বামপন্থী দল যা করে গেছে আজকে এরা একই কাজ করে যাচ্ছে। আর এটাই প্রমাণ করে দেয় তৃণমূল কংগ্রেস শেষ হয়ে গেছে। আর কোথাও কিছু বলে আমি মনে করি না।” বলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘একশো দিনের কাজে এক নম্বর মানে বাংলা সর্বশেষ নম্বরে চলে গেছে’
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় একশো দিনের কাজ নিয়েও রাজ্যকে তোপ দাগেন । বলেন- “আজকে ভাবতে অবাক লাগে একশো দিনের কাজ দিয়ে আপনি ভাবছেন মানুষের উন্নতি সম্ভব? আজকে গর্ব করে বলে- একশো দিনের কাজে আমি এক নম্বর। আমি তো মনে করি এটা রাজ্যের ব্যর্থতা। আমি কাজ দিতে পারিনি। তাই একশো দিনের কাজ করতে হচ্ছে। ওইভাবে গাধার খাটনি খাটতে হচ্ছে। ওইভাবে নোংরা তুলতে হচ্ছে। আর একশো দিনের কাজে আপনি বলছেন এক নম্বর। আমার তো মনে হয় একশো দিনের কাজে এক নম্বর মানে বাংলা সর্বশেষ নম্বরে চলে গেছে।”
এ এক অদ্ভুত প্রাদেশিকতার আগুন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে-রাজীব
বহিরাগত প্রসঙ্গে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন- “এখন উনি কথায় কথায় বলছেন বাংলা আর বহিরাগত। আপনারা বলুন তো- এই শব্দ সাধারণ বাঙালি মেনে নেবে? আমরা আজ বাঙালি নই? এখানে উপস্থিত যারা বসে আছেন কেউ বাঙালি নয়? তাহলে কার কথা বলা হচ্ছে। এ এক অদ্ভুত প্রাদেশিকতার আগুন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা তো শিখেছি – নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান বি্বিধের মাঝে দেখো মিলন মহান। এটাই তো ভারতবর্ষ। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। ভারতবাসী চিন্তা করে না কে বাঙালি আর কে অবাঙালি। আজকে কাজ দিতে পারছেন না তাই তারা বাইরে চলে যাচ্ছে। আমি তো মনে করি সাম্প্রদায়িকতার থেকেও বড় আগুন আপনি জ্বলাচ্ছেন।সাম্প্রদায়িকের থেকেও বড় বিষ আপনি ঢালছেন। আপনি যদি এই প্রাদেশিকতার আগুন জ্বালান- তাহলে ভেবে দেখুন আমাদের যারা বাংলার ছেলে-মেয়েরা অন্য রাজ্যে গেছে যদি সেখানেও এরকম প্রাদেশিকতার আগুন জ্বলে তাহলে সারা দেশটা পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবে। তাই দয়া করে এসমস্ত কথা ভাববেন না।”
Published on: ফেব্রু ২, ২০২১ @ ১৯:৫১