বাংলার উন্নয়নে মোদি সরকার ৩ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন, তা কোথায় গেল- প্রশ্ন অমিত শাহ’র

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

“হত্যার মামলায় বাংলা চতুর্থ স্থানে। হত্যার চেষ্টার মামলায় এক নম্বরে। রাজনৈতিক হত্যার মামলায় এক নম্বরে। আক্রমন করার মামলায় এক নম্বরে। হিংসার মামলায় তিন নম্বরে। মহিলা অত্যাচারে এক নম্বরে।”-কোচবিহারের সভায় অমিত শাহ

এসপিটি নিউজ, কোচবিহার, ১১ ফেব্রুয়ারি:  কোচবিহারে আজ বিজেপি-র পরিবতর্ন যাত্রার সূচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই উপলক্ষ্যে এক জনসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন অমিত শাহ। বললেন- ১০ বছর দীর্ঘ সময় দিয়েছে বাংলার মানুষ মমতা দিদিকে। কিন্তু কোনও সুফল মেলেনি। বাংলার উন্নয়নে মোদি সরকার ৩ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। এই টাকা কোথায় গেল? এ ভাইপোর গুন্ডারা লোপাট করে দিয়েছে। তাই এবার আপনারা মোদিজিকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখুন- বাংলাকে সোনার বাংলা গড়ে দেব।

‘এ হল পিসি-ভাইপোর দুর্নীতি সমাপ্ত করার পরিবর্তন যাত্রা’-অমিত শাহ

পরিবর্তন যাত্রা নিয়ে তৃণমূলের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন-“এ অন্য দল থেকে বিধায়ক নিয়ে আসার পরিবর্তন যাত্রা নয়। এ তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মন্ত্রীকে নিয়ে এসে মন্ত্রী বানানোর পরিবর্তন যাত্রা নয়। এ পরিবর্তন যাত্রা হল বাংলাকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসার পরবর্তন যাত্রা।আপনারা মানেন, মমতা দিদি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পেরেছে কি? এ অনুপ্রবেশ বন্ধ করার পরিবর্তন যাত্রা। আপনারা একবার পরবর্তন করুন। ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার বানান। আমি আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই যে মানুষ তো কী কেউ অনুপ্রবেশ করতে পারবে না। এ হল পিসি-ভাইপোর দুর্নীতি সমাপ্ত করার পরিবর্তন যাত্রা। এ পরিবর্তন যাত্রা হল বোমা-বাজি করার বদলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পরিবর্তন যাত্রা। এবার বাংলায় ২০০-র বেশি আসন নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার গড়বে।”

নারয়ণী ব্যাটালিয়ন

“বাংলার মানুষ অনেক সময় দিয়েছে মমতা দিদিকে। ১০ সাল ধরে শাসন করেছে। কিন্তু কোনও সুফল মেলেনি বাংলার মানুষের। একটা সুযোগ নরেন্দ্র মোদিজিকে দিয়ে দেখুন -পাঁচ বছরে আমরা সোনার বাংলা গড়ে আপনাদের দেব।এখানকার রাজবংশী সমাজ তাদের নারায়ণী সেনার অবদান ইতিহাসে আজও অক্ষয় হয়ে আছে। আমাদের বিজেপি-র মোদি সরকার নারায়নী সেনাকে আধাসামরিক বাহিনীতে নারয়ণী ব্যাটালিয়ন বানিয়ে এটি স্মরণীয় করে রেখেছে।” বলেন অমিত শাহ।

আড়াইশো কোটি টাকা খরচ করে স্মারক

“ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার স্মরণে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার হলে এখানে আড়াইশো কোটি টাকা খরচ করে তাঁর বিশাল এক স্মারক বানানো হবে। এখানে আমরা এক ট্যুরিস্ট সার্কিট বানাবো। যেখানে কোচবিহারে মদনমোহন মন্দির আছে, কামতেশ্বরী মন্দির, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মস্থান ঘিরে আমরা এক সারা ভারত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলবো।”

মমতা দিদি এবার বাংলায় ভোট ঐতিহাসিক হতে চলেছে-অমিত শাহ

অমিত শাহ ফের তোপ দাগেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে।বলেন-“গুণ্ডা নিয়ে ভোটে লড়াই করে তৃণমূল কংগ্রেস। ওদের কাছে গুন্ডা আছে। আমি বলতে চাই, মমতা দিদি এবার বাংলায় ভোট ঐতিহাসিক হতে চলেছে। আপনারা গুন্ডাদের সামনে আমাদের ভারতীয় জনতা পার্টির বুথ কর্মীরা লড়াই করবে। লড়াই আপনারা কখনোই জিতবেন না। বাংলার মানুষ স্থির করেই ফেলেছেন যে এবার আমরা পরিবর্তন করেই ছাড়বো।”

“বাংলায় জয় শ্রীরাম বলতে পারবে না তো কি পাকিস্তানে গিয়ে বলবে?”

“আরে মমতা দিদি, বাংলায় জয় শ্রীরাম বলতে পারবে না তো কি পাকিস্তানে গিয়ে বলবে? মমতা দিদির জয় শ্রীরাম স্লোগানে অপমান লাগে! কেন মমতা দিদি আপনার এতে কিসের অপমান? গোটা দেশ কোটি কোটি ভারতবাসী শ্রীরামের নাম উচ্চারণ করে সম্মান বোধ করে কিন্তু আপনার তা মনে হয় না। কারণ, আপনি স্বজন-পোষণ করে কোনও একটি সম্প্রদায়ের ভোট চান। তা এদের ভোট নেই? আপনাদের বলছি, ভোট শেষ হতেই দেখবেন, মমতা দিদিও জয় শ্রীরাম বলতে শুরু করবেন।”বলেন অমিত শাহ।

‘বাংলায় মোদির উন্নয়নের মডেল নাকি মমতা দিদির ধ্বংসের মডেল চান’- অমিত

অমিত শাহ বলেন- “এবার বাংলায় মোদির উন্নয়নের মডেল নাকি মমতা দিদির ধ্বংসের মডেল চান তা ঠিক করতে হবে। এবার বিজেপি ভোটের ময়দানে লড়বেই লড়বে। কোনও ‘মাইকে লাল কে’ ক্ষমতা নেই যে তাদের রোখে। আমার বেশ মনে আছে যে গত লোকসভা ভোটে আমি বলেছিলাম এখানে আমরা অনেক আসন পাব। তা নিয়ে উনি বলেছিলেন যে বড় ডিম আসবে। সেখানে আমরা বাংলায় ১৮ আসনে জিতি। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে উনি নিজেই ঠিক করে উঠতে পারছেন না যে কোথা থেকে লড়বেন। এক জায়গা থেকে লড়বেন নাকি দুই জায়গা থেকে লড়বেন।”

রাজনৈতিক হত্যার মামলায় এক নম্বরে-অমিত শাহ

অপরাধের তথ্য তুলে ফের একবার মমতা সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। বলেন- “হত্যার মামলায় বাংলা চতুর্থ স্থানে। হত্যার চেষ্টার মামলায় এক নম্বরে। রাজনৈতিক হত্যার মামলায় এক নম্বরে। আক্রমন করার মামলায় এক নম্বরে। হিংসার মামলায় তিন নম্বরে। মহিলা অত্যাচারে এক নম্বরে। এক নম্বর কিসে হতে হবে- ঘরে জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বর হওয়া উচিত। শৌচাগার তৈরি করুন। তাতে এক নম্বর হন। গরিবকে ঘর দিন- সেখানে এক নম্বর হন। গরিবের ঘরে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দিন তাতে এক নম্বর হন।স্বাস্থ্য প্রকল্প করুন- তাতে এক নম্বর হন। আমার রাজবংশী ভাইদের চাকরি দিন- তাতে এক নম্বর হন।”

কোথায় গেল এই টাকা

“বাংলার উন্নয়নে মোদি সরকার ৩ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন। এই টাকা কোথায় গেল? এ ভাইপোর গুন্ডারা লোপাট করে দিয়েছে। বাংলার মানুষের কাছে এই টাকা তাই পৌঁছয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ভাইপোর লোকজন তোলাবাজি আর দুর্নীতিতে এই টাকা খেয়ে নিয়েছে। আপনারা এমন সরকার আনুন যা মোদি টাকা পাঠাবে আর তা আপনাদের কাছে যাবে।” বলেন অমিত শাহ।

মমতা দিদি খালি মোদিজির সঙ্গে ঝগড়া করেন-অমিত শাহ

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিবস উপলক্ষ্যে জয় শ্রীরাম স্লোগানে অসন্তুষ্ট হয়ে বক্তৃতা না দিয়ে নেমে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিনের ঘটনার রেশ টেনে ফের খঁচা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বলেন- “আচ্ছা আপনারা বলুন তো, ভারত সরকার বাংলাকে সাহায্য করবে – এটা ভালো না খারাপ? মমতা দিদি খালি মোদিজির সঙ্গে ঝগড়া করেন। সুভাষবাবুর কর্মসূচিতেও ঝগড়া করেছেন। আরে ওটা সুভাষবাবুর কর্মসূচি ছিল সেখানে আপনি রাজনীতি না করলেই পারতেন। এতে বাংলার ভালো হবে? এই সরকারকে পাল্টান। একটা ইঞ্জিন মোদিজির আর একটা ইঞ্জিন বাংলার বিজেপি সরকারের হওয়া দরকার। এই ডবল ইঞ্জিন সরকার বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এমন এক সরকার বানান যা বাংলাকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 1