ফূর্তির উচ্ছ্বাসে নয়, অনাথ-অসহায়-দুখীদের কাছে টেনে নিয়েই অভিনব বর্ষবরণে দিশা দেখাল সম্রাট

রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জানু ১, ২০১৮ @ ১৮:৩০

এসপিটি নিউজ, বারাকপুর, ১ জানুয়ারিঃ নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/সব চেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি/ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম/আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।

নচিকেতার গানের এই লাইনগুলি আজও বৃদ্ধাশ্রমের মানুষগুলির অসহায় জীবনের বার্তা বহন করে চলেছে। জীবনের নানা কঠিন মুহূর্তগুলিকে আগলে রেখে যারা একদিন তাঁদের ছোট্ট ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তুলবার শপথ নিয়েছিলেন আজ তাঁদের অসহায় জীবন যেন পিছনের সেই দিনগুলির নির্মমতাকেই আবার ফিরিয়ে আনে।আজ তাঁরা বড়ই একা। কেউ তাঁদের দেখতেও আসে না।জীবনের প্রান্তবেলায় দাঁড়িয়ে বড়ই অসহায় মনে হয় তাঁদের। বছরের প্রথমদিনে এমনই সব দুঃখী মানুষগুলির পাশে এসে তাঁদের সঙ্গে সময় কাটালেন সমাজসেবী সম্রাট তপাদার।গল্প করলেন। শুনলেন তাঁদের সুখ-দুঃখের নানা গল্প। তাঁদের সঙ্গে বসে সারলেন প্রাতঃরাশও। বারাকপুরে ভোলানন্দ বৃদ্ধাশ্রমের ৯২জন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের পাশে থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেন সম্রাট। তাঁর কথায়, এরা জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ের এক-একজন দক্ষ “সৈনিক”। না হলে নিজের জীবিনের এত ব্যাথা-বেদনা, যন্ত্রণা-কষ্ট কিভাবে দিনের পর দিন মুখ বুজে সহ্য করে চলেছেন তা চোখে না দেখলে বীশ্বাস করা যাবে না।একজন সৈনিক যেমন নিজের জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করেন এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও ঠিক একইরকমভাবে নিজেদের বৃদ্ধাশ্রমের ছোট্ট কুঠরির ভিতর ফেলে রেখে ছেলে-মেয়ের মঙ্গল কামনা করে চলেছেন।

৮৯ বছরের সুনীলা সাহা, নবদ্বীপ থেকে এসে বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন। তাঁকে রেখে দিয়ে গেছেন তাঁর আদরের সন্তান। আজ তিনি পুরোপুরি প্যারালাইসিস রোগী। তাঁকে এখন খাইয়ে দিতে হয়। একইরকমভাবে দেখা হল আরও এক মহান মানুষের সঙ্গে। ৭৫ বছরের নির্মলেন্দু গুহ ঠকুরতা। হুগলি থেকে তাঁকে এখানে দিয়ে গেছেন তার বাড়ির লোকজন। তিনি ছিলেন একজন অধ্যাপক। যিনি একদিন বহু ছাত্রকে জীবনের পাঠ পড়িয়ে ছিলেন, দিয়েছিলেন জীবনের শিক্ষা, শিখিয়েছিলেন বাবা-মা-কে সম্মান করবে, তাঁদের ভাল রাখবে। তাঁদের মনে কষ্ট দেবে না। হায়, সেই শিক্ষা… কোথায় চলে গেল সেইসব কিছু, উত্তর খুঁজেও মেলাতে পারেন না তিনি। সম্রাটকে জড়িয়ে ধরে প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলেন,বলছিলেন-আজ বহু দিন হয়ে গেল কেউ খোঁজও নিতে আসে না। জানতেও চায় না কেমন আছি!যাক, ভাল লাগল আপনারা আমাদের দেখতে এসেছেন।

নির্মলেন্দুবাবুর কথাগুলি শোনার পর ফের মনে পড়ে গেল নচিকেতার গানের সেই লাইনগুলি-স্বামী-স্ত্রী আর অ্যালসেশিয়ান জায়গা বড়ই কম/ আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।

এখান থেকে বেরিয়ে সম্রাট পৌঁছে গেছিলেন পলতার বিশ্বশুক অনাথ আশ্রমে। যেখানে তিনি ১২৬জন শিশুর হাতে তুলে দিলেন বস্ত্র আর লেখাপড়ার সরঞ্জাম। পাশাপাশি আশ্রমের দুটি শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্বও গ্রহণ করলেন। আজ যখন বহু মানুষ নিজেদের আনন্দের আতিশয্যে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন, যখন বহু মানুষ ছুটেছেন ভগবান-আল্লার আশীর্বাদ-দোয়া পেতে তখন সম্রাট মাথা ঝুঁকিয়ে প্রণাম করেছেন সেইসমস্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। বুকে টেনে নিয়েছেন অনাথ শিশুদের। যাদের আশীর্বাদ ও ভালবাসা ভগবানের আশীর্বাদের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।

বর্ষ শেষের রাতেও সম্রাট এক অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটিয়ে বারাকপুরের মানুষকে অবাক করে দিয়েছে। সম্রাট অশোক কিংবা সম্রাট আকবরের জীবনে এমন অনেক ঘটনার নজির আছে। যারা নিজেরা পথে বেরিয়ে অনাথ-অসহায় মানুষের গায়ে বস্ত্র তুলে দিতেন। মুখে তুলে দিতেন খাবারও। বর্ষ শেষের রাতেও বারাকপুরের রাস্তাতেও দেখা গেল সমাজবন্ধু সম্রাট তপাদারের অভিনব কীর্তি।তিনি তাঁর স্ত্রী চৈতালী তপাদারকে সঙ্গে নিয়ে শীতের রাতে রাস্তায় বেরিয়ে সেইসব মানুষ জনের কাছে পৌঁছে গেছিলেন।যারা ঠান্ডায় খোলা আকাশের নীচে ফুটপাতে শুয়ে খিদের কষ্টে কাতরাচ্ছিলেন।সেইসব মানুষদের হাতে কম্বল আর বিরিয়ানির প্যাকেট তুলে দিয়ে এক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করলেন-সেবাই আমাদের লক্ষ্য হয়ে উঠুক। সম্রাট বলেন-ঠাকুর শ্রীশ্রী “রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলতেন, মানুষের সেবাই হল বড় ধর্ম” -আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি মাত্র।

Published on: জানু ১, ২০১৮ @ ১৮:৩০

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

81 − 74 =