ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ – শৈশবের স্মৃতিগুলোই ওদের কাছে আজ অনুপ্রেরণা

খেলা বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: মে ২৯, ২০১৮ @ ১৫:৩৯

এসপিটি স্পোর্টস ডেস্কঃ রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ বহু খেলোয়াড়ের নানা মুহূর্তগুলি স্মরণীয় করে রাখবে। এবারের বিশ্বকাপে যেমন নজর থাকবে ব্রাজিলের নেইমার, ফ্রান্সের প্ল পোগবা, ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সন হিয়াংমিন এবং মেক্সিকোর জেভিয়ার হার্ন্ডেজের উপর। ফুটবল খেলার আগে তাঁরা সকলেই কিন্তু ফুটবলের ভক্ত ছিলেন।

তবে তাদের কাছে রাশিয়ায় ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ হতে চলেছে আসল পরীক্ষা। যেখানে তাদের সেরাটা উজার করে দিতে হবে বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের সামনে। তাদের জীবনের সুখ-দুঃখের নানা স্মৃতি আছে ঠিকই। তার মধ্যে বিশ্বকাপের স্মৃতি তাদের খেলোয়াড় জীবনকে করে তুলবে আরও বেশি উজ্জ্বল।

লুকা মডরিক(ক্রোয়েশিয়া মিডফিল্ডার)

“আমার বয়স তখন ১৩ বছর। জারদারে আমি আমার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ চলছে ফ্রান্সে। আমার দেশের প্রতিটি জয়ের পর আমরা শুধু আনন্দে আত্মহারা হয়েছি।খুব সুখ অনুভব করেছি। একই সময়ে এটা ক্রোয়েশিয়ার জন্য একটা মহান বিজ্ঞাপন ছিল। সারা বিশ্ব অবশেষে আমাদের সম্পর্কে জানতে পারল। আমি মনে করি, আমি যে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি যে একদিন আমিও আমার লক্ষ্যপূরণে সফল হব।”

থিয়েগো অ্যালকানতারা (স্প্যানিশ মিডফিল্ডার)

“আমার প্রথম স্মৃতি ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ। যেখানে আমার বাবা মাজিনহো ব্রাজিলের হয়ে জয়ের অংশীদার হয়েছিলেন। আমার বয়স তখন তিন বছর।তাই আমার ম্যাচটা সম্পর্কে কিছুই মনে নেই। তবে আমার স্মরণে আছে যে বাবা বাড়ি এলে তাকে স্বাগত জানাতে পরিবারের সমস্ত সদস্যরা মেতে উঠেছিলেন। আমার পরিষ্কার মনে আছে যে ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেনের সঙ্গে নেদারল্যান্ডের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের কথা। কি হাড্ডাহাড্ডা লড়াইটাই না হয়েছিল। আমার এখনও মনে আছে সেই ম্যাচে অ্যান্দ্রেস ইনিয়েস্তার গোল। যা স্প্যানিশ ফুটবলের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে। আমরা তখন অনুর্দ্ধ-১৯ দলে খেলছিলাম। যখন অ্যান্দ্রেস গোল করল স্পেনে তখন যেন এক অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। বাঁধনাহারা উচ্ছ্বাস গোটা দেশ জুড়ে। তেল আর ছুরি উড়ছে বাতাসে। মানুষ টিভির সুইচ বন্ধ করে রাস্তায় নেমে এসেছে।”

আলিরেজা জাহানবখস(ইরান মিডফিডার)

” আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়িতে বসে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ দেখার এক জোরালো স্মৃতি আমার জীবনে উজ্জ্বল হয়ে আছে।আমি তখন বাবার পাশে বসে টিভির দিকে চোখ রেখে আছি।বাবা সেইসময় বলে উঠলেন, জানিস-এটা আমার কাছে একটা বড় স্বপ্ন যে একদিন তুইও দেশের জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ খেলতে নামবি। আমরা তা দেখব।তখন আমি অনেক ছোট। ভাবিনি যে মাত্র আট বছর পরেই বাবার স্বপ্ন সার্থক হবে। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন যে আমারও স্বপ্ন।”

গ্যাব্রিয়েল জেসাস(ব্রাজিল স্ট্রাইকার)

“গত তিনটি বিশ্বকাপে আমি রাস্তায় রং করেছি। এটা আমাদের নিজস্ব শহর ফাভেলা, জার্ডিম পেরিতে সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী বিশ্বকাপকে স্বাগত জানাতে করতে হয়।এবার আমি ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে স্থান পেয়েছি। তাই আমি আশা করছি যে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাব, যা আমাকে আমার এতদিনের পরিশ্রমের মূল্য আনন্দের সঙ্গে ফেরত দেবে।”

র‍্যাডামেল ফ্যালকাও(কলম্বিয়া স্ট্রাইকার)

“আমার প্রথম বিশ্বকাপের স্মৃতি বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসবে ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপের কথা। যেখানে আমার দেশ কলম্বিয়া জার্মানির বিরুদ্ধে দারুন খেলেছিল।আমার বয়স তখন মাত্র চার বছর। যে ম্যাচে অসাধারন এক গোল করেছিলেন আমাদের ফ্রেডি রিনকন। আজও মনে আছে সেই গোল। পরে সেই গোল আমি যে কতবার দেখেছি তা বলা মুশকিল।”

জেভিয়ার হার্ন্ডেজ(মেক্সিকান স্ট্রাইকার)

“আমার প্রথম বিশ্বকাপের স্মৃতি ১৯৯৮ সাল। যে বছর খেলেছিলেন আমার আদর্শ ফুটবলার রোনাল্ডো। তবে ম্যাচের সময়সূচি এমন ছিল যে স্কুল থেকে আগেই ক্লাস শেষ করে বাড়ি চলে আসতে হত, টিভিতে খেলা দেখার জন্য।”

হার্ভ রেনার্ড(মরক্কো কোচ)

“আমার স্মরণে আছে যে ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ আমি টিভিতে দেখেছিলাম। সেসময় মারিও ক্যাম্পাস এবং তাঁর অনবদ্য খেলা আমাকে মুগ্ধ করেছিল।সাদা কাগজের টুকরো ঘাসের উপর পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। তবে আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক স্মৃতি হয়ে আছে ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ। যেবার  ফ্রান্স শ্যুমাখার আর ব্যাট্টিসতনের জার্মানির কাছে পেনাল্টিতে হেরে যায়।সেসময় দর্শকরা হতাশায় ভেঙে পড়েছিল তাদের জাতীয় দলের হারের ধাক্কা সামলাতে না পেরে। এটা খুবই দু;;খজনক। আমি অনুভব করেছিলাম আমার প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা।”

হ্যারি কেন(ইংলিশ স্ট্রাইকার)

আমার সবচেয়ে পুরনো স্মৃতি হল ২০০২ সালের বিশ্বকাপ। যেখানে আমি ব্রাজিলের রোনাল্ডিনহোকে দেখেছিলাম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে অনবদ্য এক গোল করতে। টপ কর্নার থেকে ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন তিনি। বল বাঁদিকে সুইং করে গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে জালের মধ্যে ঢুকে গেছিল। এমন গোলের স্বপ্ন আমিও দেখি।”

জুলিয়েন ড্রাক্সলার(জার্মানি মিডফিল্ডার)

“আমের পরিষ্কার মনে আছে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের কথা। তবে ২০০২ সালে আমি ছোট ছিলাম। তাই সেভাবে মনে নেই।কিন্তু ২০০৬সালে আমি ও আমার পরিবার বসে খেলা দেখেছি জার্মানির। সেইসময় জার্মান দল গোটা দেশকে প্রভাবিত করে ছিল উজ্জ্বীবিত করেছিল। তাদের প্রতিটি খেলাই ছিল এক একটি হাইলাইট।”

থিয়েরি হেনরি(বেলজিয়াম অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ও ফ্রান্সের বিশ্বজয়ী দলের সদস্য)

“আমার প্রথম স্মৃতি হয়ে আছে ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচ। যে ম্যাচে মারিয়াস ট্রেসর পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন। আমাদের সকলেই সেসময় লাফাচ্ছিলাম এবং সমস্ত কিছু ভেঙে ফেলছিলাম আনন্দে। ট্রেসর এসেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে। আর আমি সেসময় ছুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজেই ছিলাম। আমার তখন পাঁচ বছর বয়স। আমি যখন বাড়ি ফিরলাম তখন বুঝতে পারলাম সত্যি সত্যি ঘরটি বিস্ফোরিত হচ্ছে।”

ইগর অ্যাকিনফিভ(রাশিয়ান গোলকিপার)

আমার স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে ১৯৯৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ। তা ছিল এক অসাধারন অনুভূতি। প্রথমবার আমি বুঝতে পারি ফুটবল কি, তার প্রতিটি পদক্ষেপ আর গোটা খেলাটা। আমার সেরা স্মৃতি হয়ে আছে সেবার ক্যামেরুনের বিপক্ষে রাশিয়ার খেলা। যেখানে রাশিয়ার ওলেগ স্যালেনকো একাই তছনছ করে দিয়েছিলেন ক্যামেরুনের ডিফেন্স। তিনি নিজেই গোল করেছিলান পাঁচটি। রাশিয়া ওই ম্যাচে ৬-১ গোলে জয়ী হয়।”

সন হিয়াংমিন(কোরিয়া রিপাব্লিক ফরোয়ার্ড)

“আমার অনেক ভালো স্মৃতি আছে ২০০২ বিশ্বকাপে। সেবার স্পেনের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি-শুটআউটের পর সবাই খুব ভেঙে পড়েছিল। আমিও বিশ্বাস করতে পারনি। আমাদের প্রত্যেকে সেদিন লাল শার্ট পড়েছিল। আমিও পড়েছিলাম। তাই সেসময়ের কোনও একটি মুহূর্ত মনে করা সম্ভব নয়। ২০০২ সালের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল অপূর্ব।”

নেইমার(ব্রাজিল ফরোয়ার্ড)

“আমার প্রথম স্মৃতি ১৯৯৪ বিশ্বকাপ। তখন আমার দু’বছর বয়স।আমার প্রথম স্মৃতি টিভিতে খেলা দেখা। সেবার রোমারিওর গোলে ব্রাজিল জিতেছিল। আমার যতদূর মনে পড়ে, বেবেতো ক্রস করে আর রোমারিও প্রথম সুযোগেই তা কাজে লাগায়। হয়ে যায় গোল।”

পল পোগবা(ফ্রান্স মিডফিল্ডার)

“আমার স্মৃতিতে আজও জ্বলজ্বল করছে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জয়। আমি তখন ছোট। কত বয়স হবে-৬ কী ৭ বছর। বাড়িতে আমি অন্যাদের সঙ্গে বসে খেলা দেখছিলাম। ফ্রান্স জেতার পর ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসি। দেখি গাড়ির ভিতরে বসে সকলে চিৎকার করছে। গাড়ির হর্নের আওয়াজে তখন চারিদিকে এক খুশির আবহ।”

Published on: মে ২৯, ২০১৮ @ ১৫:৩৯

 

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 82 = 89