ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮- আড়ালে চলে যাওয়া সেইসব অবিস্মরণীয় গোল

খেলা বিদেশ
শেয়ার করুন

Published on: মে ৩০, ২০১৮ @ ১৭:১২

এসপিটি স্পোর্টস ডেস্কঃ ফুটবল সমর্থকরা সবসময় নিজের দলের জয় দেখতেই ভালোবাসেন। মাঠে গিয়ে তাদের সবসময় সেই ইচ্ছা পূরণ হয় না ঠিকই কিন্তু তারা এমন কিছু মুহূর্তের সাক্ষী থাকেন যা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। অনেকেই তার প্রিয় দলের কাছ থেকে গোল আশা করে। দেখা যায় সেই গোলের স্বাদ তারা পেয়েও যায়। কিন্তু শেষে সেই গোল তাদের কাছে কখনও সুখের কিংবা দুঃখের অনুভূতি তৈরি করে।

বিশ্বকাপের ৯০ বছরের ইতিহাসে প্রায় ২,৪০০ গোলের রেকর্ড আছে। সেইসব গোলের সবকটি দর্শনীয় হয়নি।কিন্তু কিছু গোল অপূর্ব কিংবা নাটকীয় হয়ে আছে। সেই গোলগুলিকে ফুটবল ভক্তদের কাছে বিশেষভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে।

ফিফা বিশ্বকাপের সেইসব অবিস্মরনীয় গোলগুলিকে নিয়ে এক ভিডিও সিরিজ তৈরি করেছে। নাম দিয়েছে “Hyundai Anatomy of a Goal”। যেখানে সেইসব আড়ালে চলে যাওয়া অসাধারন গোলগুলিকে ফুটবলপ্রেমীদের সামনে তুলে ধরে হয়েছে।

সেইসব গোলকারীদের তালিকায় কে নেই পেলে, মারাদোনা থেকে শুরু করে অচেনা সৌদি আরবের সৈয়দ আল ঐরান থেকে এমন আরও কতজন।

গোল একঃ  ১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে ব্রাজিল সুইডেনকে ৫-২ গোলে পরাজিত করে। সেই ম্যাচে ব্রাজিল যখন ২-১ গোলে এগিয়ে তখন পেলে সুইডেনের পেনাল্টি বক্সে পৌঁছে গেছে। বিপক্ষের কড়া ম্যান মার্কিং-এ প্রায় বন্দি আর তার মধ্যেই সতীর্থ বাড়াল বল। বলটা লাফিয়ে প্রায় ৩.২ মিটার উপরে উঠল। ফলো করে পেলে সেখানে পৌঁছে বলটাকে নামিয়ে প্রথম সুযোগেই ডান পায়ে মারল শট। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জালে জড়িয়ে গেল। ৫৫ মিনিটে পেলের করা সেই গোলে সারা মাঠ তখন আনন্দে লাফাচ্ছে।এই গোল আজও অবস্মরনীয় হয়ে আছে।

গোল দুইঃ  ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল। ব্রাজিল সেই ম্যাচে ইতালিকে ৪-১ গোলে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে করা কার্লোস আলবার্তোর করা শেষ গোলে ব্রাজিল জয়ের উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। বিপক্ষের বক্সে পেলের পায়ে ছিল বলটি। সামনে কড়া ডিফেন্স। সেই মুহূর্তে পেলে বলটি ঠেলে দেয় ডানদিক থেকে উঠে আসা তাঁর সতীর্থ আলবার্তোর দিকে। আলবার্তো বলটিকে নিয়ে ডান পায়ে ইনসুইং করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোলকিপারের ডান দিক ঘেঁসে বল জালে জড়িয়ে যায়। আজও সেই গোল অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

গোল তিনঃ  ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে রাউন্ড অফ সিক্সটিন ম্যাচে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জয়ী হয় মেক্সিকো।সেই ম্যাচে মেক্সিকোর হয়ে ৩৪ মিনিটে করা ম্যানুয়েল নেগ্রিটের গোল আজও বিশ্বকাপের সেরা গোলের তালিকায় থাকবে। ১.৫মিটার উঁচুতে থাকা বলটিকে প্রথম সুযোগেই বাঁ পায়ে যে ভলি করেন নেগ্রিটে তা ধরার সুযোগ তো দূরের কথা বুঝতেই পারেনি গোলকিপার। একেবারে জালে। গো-ও-ও-ও-ল।

গোল চারঃ  ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু ম্যাচের ৫৫ মিনিটে করা মারাদোনার গোল সত্যি মনে রাখার মতো। যেভাবে ৬৮মিটার দৌড়ে বল নিয়ে ইংল্যান্ডের গোলকিপারের কাছে পৌঁছে গেছিলেন অনেকেই তখন ভেবেছিল এবার বোধ হয় হবে না। কিন্তু তাঁর নাম যে মারাদোনা। শিলটন মারাদোনার দিকে এগিয়ে আসছেন। মারাদোনাও এগিয়ে চলেছেন। জায়গা ছোট হয়ে আসছে। মারাদোনার আক্রমনটা ছিল ডান দিক দিয়ে। বুদ্ধি করে মারাদোনা বলটা বাঁ পায়ে শিলটনের পাশ দিয়ে ঠেলে দিয়ে তাঁকে টপকে গিয়ে শট মারেন। শিলটন ছুটে যাওয়ার আগেই বল জালে জড়িয়ে যায়।

গোল পাঁচঃ  একইভাবে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ-ডি-র ম্যাচে যুগোস্লোভিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানির তিন নম্বর গোলটি। যে ম্যাচে জার্মানি ৪-১ গোলে জিতেছিল। অসাধারন দক্ষতায় জার্মান অধিনায়ক লোথার ম্যাথেউস ঘণ্টায় ৬৫মাইল গতির এক শটে বিপক্ষের গোলে বল ঢুকিয়ে দেন।

গোল ছয়ঃ  ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ এফ-এর ম্যাচে রীতিমতো ইতিহাস তৈরি করে ফেলে এশিয়ার ফুটবল শক্তি ইরান। ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথায় নিজের অসাধারন বল নিয়ন্ত্রণ রাখার দক্ষতা দেখিয়ে প্রায় ৬৯ মিটার দৌড়ে যেভাবে বেলজিয়ামের শক্তিশালী ডিফেন্সকে তছনছ করে দিয়ে ডান পায়ে যে শট মেরেছিলেন তা সোজা জালে গিয়ে আটকে গেছিল।সেই গোল আর শোধ দিতে পারেনি বেলজিয়াম। হতে পারে বিশ্বকাপের আসরে ইরান ছোট টিম, কিন্তু তাদের এই গোল কিন্তু ঢাকা পড়ে গেছে তারকাদের ভিড়ে। তবু অবিস্মরণীয় হয়ে আছে আজও এই গোলটি।

গোল সাতঃ  ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রিসের বিরুদ্ধে নাইজেরিয়া গ্রুপ ডি-র ম্যাচে জেতে ২-০ গোলে। দু’টি গোলই করেছিলেন অ্যামকচি। ২২ মিটার দৌড়ে ডান পায়ে অ্যামকচি যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শট নিয়েছিলেন তা সোজা ঢুকে যায় বিপক্ষের গোলে। ম্যাচের ৯০ মিনিটে করা এই গোলের ফলে নাইজেরিয়া ২-০ ব্যবধানে জিতে যায়। কিন্তু এই গোলও আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

গোল আটঃ  ১৯৯৮সালের বিশ্বকাপে রাউন্ড সিক্সটিন ম্যাচে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে জেতে ৪-৩ গোলে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ম্যাচের ফল ছিল ২-২। ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বতীয় গোলটি করেছিলেন মাইকেল ওয়েন। যা অনেক গোলের মধ্যে হারিয়ে গেলেও আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

গোল নয়ঃ ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল জার্মানি ও ক্রোয়েশিয়া। সেই ম্যাচে জার্মানিকে লেজে-গোবরে করে ক্রোয়েশিয়া ৩-০ গোলে পর্যুদস্ত করেছিল। ৩ নম্বর গোলটি নিয়ে আজও চর্চা হয়। কি অসাধারণ বুদ্ধিতে জার্মান ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে বাঁদিক দিয়ে গোলকিপারের সামনে চলে গিয়ে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গোলটি জালে ঢুকিয়ে ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার দাভর সুকের যা আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

গোল দশঃ ২০০২ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ ডি-র ম্যাচে শক্তিশালী পর্তুগালের মুখোমুখি হয়েছিল কোরিয়া রিপাবলিক। ৭০ মিনিটের আগে পর্যন্ত ম্যাচে খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। এই সময়ে পর্তুগালের ডিফেন্সের বাঁদিকে ৪২ মিটার দূর থেকে গোলমুখে ডানদিক লক্ষ্য করে কোনাকুনি এক লম্বা পাস উপর থেকে কোরিয়ান পার্ক জিসাং-এর উদ্দেশ্যে ভাসিয়ে দেন তাঁর সতীর্থ। পার্ক তখন ম্যান মার্কিং-এ। তার মধ্যে থেকে তিনি বেরিয়ে এসে উপর থেকে ভাসিয়ে দেওয়া বলটি বুক দিয়ে রিসিভ করে ডান পায়ে নামিয়ে বাঁপায়ে মারলেন গোল লক্ষ্য করে শট। গোলকিপার ধরতে গিয়ে পড়ে গেল। ব্যস, বল সোজা জালে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন গোল খুব কমই দেখা গেছে।এই গোলটিও অনেক গোলের মাঝে চাপা পড়ে গেলেও আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

গোল এগারোঃ ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ সি-র ম্যাচে শক্তিশালী আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়েছিল সার্বিয়া মন্টিনেগ্রোর বিরুদ্ধে। যে ম্যাচে আর্জেন্টি জয়ী হয়েছিল ৬-০ গোলে। ম্যাচের ৩১ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন এস্তেবান কম্বিয়াসসো। তাঁর গোলটিও অবস্মরণীয় হয়ে আছে এক বিশেষ কারণে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এত বেশি পাস খেলে গোল করার রেকর্ড খুব বেশি নেই। ২৭টি পাস খেলে ক্যাম্বিয়াসসোর পা দিয়ে আসে গোলটি।

গোল বারোঃ ২০১০ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচে উরুগুয়ে মুখোমুখি হয়েছিল জার্মানির বিরুদ্ধে। ম্যাচের ৫১ মিনিটে ফোরল্যানের করা অসাধারণ সেই গোলে ২-১ এগিয়ে যায় উরুগুয়ে। জার্মানির পেনাল্টি বক্সের ডান দিক দিয়ে ফোরল্যানের উদ্দেশ্যে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলটি। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে তিনজন ডিফেন্ডার। তিনি ছিলেন মাঝের জনের সামনে। ওই অবস্থায় ওই ভাসানো বলকে ডান পায়ে রিসিভ না করেই অসাধারন ক্ষিপ্রতায় গোলমুখে মারলেন। বল সোজা গিয়ে জড়িয়ে গেল জালে। যদিও সেই ম্যাচে উরুগুয়ে আর গোল করতে পারেনি। ম্যাচ হেরে যায় ৩-২ গোলে। ফোরল্যানের এই অবিস্মরণীয় গোলও তাই চাপা পড়ে যায়।

গোল তেরোঃ  ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ বি-র ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয়েছিল নেদারল্যান্ডের। ম্যাচের ২১ মিনিটের মাথায় ৫৫ মিটার দূর থেকে ভাসানো বলে যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার টিম ক্যাহিল গোল করেন তা আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।এই ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া ২-৩ গোলে হেরে যায়। ফলে চাপা পড়ে যায় সেই অবস্মরণীয় কীর্তি।

গোল চোদ্দোঃ বিশ্বকাপের আর এক অবিস্মরণীয় গোল ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে রাউন্ড সিক্সটিনের ম্যাচে। যেখানে উরুগুয়ের মুখোমুখি হয়েছিল কলম্বিয়া। ম্যাচের ২৮ মিনিটে সতীর্থের বাড়ানো বল জেমস রডরিগেজ ডান পায়ে রিসিভ করে পিছনে ফিরে বাঁপায়ে ২৫ মিটার দূর থেকে যে শট নিয়েছিল তার গতি ছিল ঘণ্টায় ৪৯ মাইল। গোলকিপার কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জালে জড়িয়ে যায়। কলম্বিয়া সেই ম্যাচ ২-০ গোলে জিতে যায়।

এবারের বিশ্বকাপেও আমরা এমন আরও অনেক অবিস্মরণীয় গোল দেখতে পাব। তবে এজন্য সব কটি খেলাই কিন্তু আপনাকে দেখতে হবে। লাইভ দেখার সময় না পেলেও হাইলাইটস কিন্তু মিস করবেন না। মনে রাখবেন, সেরা আর নামিরাই ভালো খেলে না অনামিরা কিন্তু মাঝেমধ্যে তাক লাগিয়ে দেয়।

Published on: মে ৩০, ২০১৮ @ ১৭:১২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

6 + = 15