Published on: মার্চ ২, ২০১৯ @ ০১:৩৪
এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ পুলওয়ামা হামলার পর থেকে যে গতিতে ভারত পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে এবং তার পরেও পাকিস্তান যে ভূমিকা পালন করে চলেছে তা নিয়ে গোটা বিশ্ব চিন্তিত। চিন্তার কারণ হল এটাই- যা বুধবার পাকিস্তান করেছে। পাকিস্তান স্বীকার করে যে তাদের কব্জায় এক ভারতীয় পাইলট আছেন। এ নিয়ে পাকিস্তান তিনটি ভিডিও রিলিজ করে। তার মধ্যে একটিতে পাইলটের সঙ্গে মারপিট করতে দেখা গেছে। দ্বিতীয় ভিডিওটিতে পাইলটকে কথা বলতে দেখা গেছে। তৃতীয় ভিডিওতে পাইলটকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে খোশ মেজাজে দেখা গেছে। তিনটি ভিডিও ভাইরাল হতেই পাকিস্তান প্রথম ভিডিওটি সরিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পাকিস্তান এমন একটা ভাব দেখাতে শুরু করে যে তারা শান্তি চায় ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় কিন্তু ভারত বসতে চাইছে না তারা এই বিষয়টিকে জিইয়ে রাখতে চাইছে।এটা সারা বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছে।এমনটা বলার চেষ্টা করে।
এরপর বৃহস্পতিবার পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংসদে ঘোষণা করেন ভারতীয় পাইলটকে শুক্রবার মুক্তি দেওয়া হবে। পাকিস্তান বলে এসেছে যে তারা নাকি শান্তি চায় অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা মানতে চাইছেন না। কিন্তু এটা কতটা সত্যি তা নিয়ে আলোকপাত করা জরুরী। একটি ন্যাশনাল হিন্দি দৈনিকের খবরের সূত্র ধরে জানা গেছে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন -এর প্রফেসর হর্ষ ভি পন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন যে পাকিস্তান ভারতীয় পাইলটকে গ্রেফতার করে ভোলাভালা মনোভাব দেখানোর মতো বড় ভুল করেছে। পাকিস্তানকে সাফ জানিয়ে দিতে চাই আজ না হয় কাল ভারতীয় পাইলটকে ছাড়তেই হত। এ ছাড়া পাকিস্তানের কাছে অন্য কোনও রাস্তা খোলা ছিল না। পন্ত এটাও জানান যে ভারতীয় পাইলট যুদ্ধবন্দি ছিলেন না। কিন্তু জেনিভা চুক্তি অনুসারে এ বিষয়ে স্পষ্ট বলা আছে। এতে অপর দেশের জওয়ানকে বন্দি বানালে সেক্ষেত্রে জেনেভা কনভেনশন লাগু হয়। পাকিস্তানকেও এজন্য কাজ করতে হয়েছে।
এরও পিছনে ছিল এই কারণগুলি- যার জন্য ভারতীয় পাইলট উইং কম্যান্ডার অভিনন্দনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল পাকিস্তান।
- কারণ ১- ভারতীয় পাইলটকে গ্রেফতার করার পর থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যে তারা যেন আমাদের পাইলটকে ছেড়ে দেয়। এছাড়াও পাকিস্তান সরকাররের আধিকারিক চিঠি পর্যন্ত লিখেছিল।
- কারণ ২-পাকিস্তান খুদ ভিডিও রিলিজ করে জানিয়েছিল ভারতীয় পাইলট তাদের কব্জায় রয়েছে। যার পর জেনেভা কনভেনশন চুক্তি অনুসারে ভারতীয় পাইলটকে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া পাকিস্তানের কাছে অন্য কোনও রাস্তা খোলা ছিল না।
- কারণ ৩-পাকিস্তান এটাও বেশ ভাল মতোন বুঝতে পেরেছিল যে ভারত যেমন তাদের পাইলটকে ছাড়ানোর ক্ষেত্রে পিছু হঠবে না ঠিক তেমনই আবার বালাকোটে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তারা কমজোরি হয়ে পড়বে। তাই পাকিস্তান বুঝে যায় তারা পাইলটের সাথে এমন কোনও কাজ করবে না যাতে নিজেদের হাত পোড়ে।
- কারণ ৪- পাকিস্তান এটাও ভাল মতোই বুঝে যায় এই পরিস্থিতিতে যেমন ভারতের পাশে গোটা বিশ্ব দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তেমনই তাদের পাশে আছে শুধু মাত্র ইসলামিক দেশগুলির সংগঠন।
- কারণ ৫- পাকিস্তান এটাও জানে যে বিশ্বের তিন শক্তিধর দেশ ফ্রান্স, আমেরিকা এবং গ্রেট ব্রিটেন জৈশ-ই-মহম্মদের মাসুদ আজহারেকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করতে রাষ্ট্রসঙ্ঘে প্রস্তাব এনেছে। যা খুব শীঘ্রই হতো মানা হবে।
- কারণ ৬- পরিস্থিতি সেই জায়গায় পৌঁছয় যে চিনকে বোঝানোর পর চিন রুশ এবং আমেরিকার সঙ্গে বৈঠকে জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা করেছে। পাকিস্তানের এই বিষয়টি নিয়েও ভয় ধরেছে এখন যদি চিনও তাদের পাশ থেকে সরে যায়।
- কারণ ৭- রাষ্ট্রপুঞ্জে কয়েক দিন আগে এমন একটি বিষয়ে হস্তাক্ষর করা হয়েছে যেখানে জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে। এই বিষয়ে চিন তার সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের বারে বারে চিনের থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয় দানা বেঁধেছে।
- কারণ ৮- পাকিস্তান এটা ভালমতোই জানে যে যদি মাসুদ আজহারের উপর নিষিদ্ধ করার মোহর লাগানো হয় তাহলে গোটা বিশ্বে শোরগোল পড়ে যাবে। এখানেই শেষ নয় এর ফল সুদূর প্রসারী হবে। ইতিমধ্যে এফএটিএফ -এ পাকিস্তান গ্রে লিস্ট-এ উঠে এসেছে। এবার মাসুদ আজহারকে ব্যান করে দিলেই পাকিস্তানকে ব্ল্যাকলিস্ট করা হবে।
- কারণ ৯- বালাকোটে যেভাবে ভারত ব্যবস্থা নিয়েছে যেখানে মাসুদ আজহারের আত্মীয়রা মারা গেছে তাতে পাকিস্তানের মধ্যে একটা পুরনো ভীতি ধরা পড়েছে যে আবার না জানি ওসামা বিন লাদেনের মতো কোনও অ্যাকশন আবার ভারত না নিয়ে বসে। এমনটা হয়ে গেলে পাকিস্তানের জনতার সামনেই তাদের মুখ দেখানো মুশকিল হয়ে যাবে।
- কারণ ১০- জঙ্গিবাদ নিয়ে পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গ পায়নি। ইতিমধ্যে সৌদি আরব পাকিস্তানকে আর্থিক দিক থেকে বাঁচাতে সাহায্য করেছে। কিন্তু জঙ্গিবাদের প্রশ্নে তারা কিন্তু ভারতকে সমর্থন করেছে।
- কারণ ১১-পাকিস্তান যদি ভারতীয় পাইলটকে না ছাড়ত তাহলে তারা ব্যবসায়িক দিক থেকে সঙ্কটের মুখে পড়ত। ইতিমধ্যে তারা এখন সার্ক সামিট দেশের থেকে আলাদা হয়ে গেছে।
- কারণ ১২- পুলওয়ামা হামলার পর থেকে গটা বিশ্ব কিন্তু পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলে বলছে যে এমন কিছু আর কোরো না যাতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। বিশ্ব এটাও বলছে পাকিস্তান জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আমেরিকা ইতিমধ্যে পাকিস্তানকে তার বার্তা দিয়ে রেখেছে।ছবি- দৈনিক ভাস্কর
Published on: মার্চ ২, ২০১৯ @ ০১:৩৪