প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের “পশু ক্লিনিক”-এ নৈশ-পরিষেবা দেওয়া কি শিক্ষকদের দায়িত্ব ? কে দেবে এর জবাব

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

সেই ব্রিটিশ সময় কাল থেকে এই পশু ক্লিনিকটি চলে আসছে।

২০১৫ সালে নাকি এখানে রাতের অর্থাৎ নৈশ-কালীন পরিষেবা চালু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-শিক্ষকরা এক যোগে বলেছেন এই জাতীয় পরিষেবা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জায়গাতেই চালু হোক তাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

যদিও এই রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিভাগের অধীনে থাকা কোনো পশু চিকিৎসালয়েই নৈশ কালীন পরিষেবা কিন্তু দেওয়া হয় না।

Published on: সেপ্টে ১০, ২০১৯ @ ১৭:০৯

এসপিটি নিউজঃ বেলগাছিয়ায় প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত “পশু ক্লিনিক”-এ নৈশ পরিষেবা কে দেবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক- শিক্ষক নাকি বিশেষভাবে নিযুক্ত প্রাণী চিকিৎসকরা? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস অবশ্য বলছেন- এই পরিষেবা দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই। কিন্তু বর্তমানে ওই ক্লিনিকে নৈশ পরিষেবা বন্ধ আছে। উপাচার্য্য অবশ্য বলছেন- তাঁকে অন্ধকারে রেখেই শিক্ষকরা এই পরিষেবা বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু ঘটনাটা ঠিক কি হয়েছে। এই পরিষেবা বন্ধ রাখার পিছনে শিক্ষকদের দিকে আঙুল তোলাটা কতটা সমীচিন, তা নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

আগে জানতে হবে এই “পশু ক্লিনিক” কি? কবে থেকে এর সূচনা।কারা এখানে দেখভাল করে আসছে। এর জন্য সরকারি দৃষ্টিভঙ্গী কি আছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে শিক্ষকদের দিয়ে ক্লিনিক চালানো যায় কি?এর উত্তর খুঁজতে হবে। এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে যেটা উঠে এসেছে তা হল- সেই ব্রিটিশ সময় কাল থেকে এই পশু ক্লিনিকটি চলে আসছে। ২০১৫ সালে নাকি এখানে রাতের অর্থাৎ নৈশ-কালীন পরিষেবা চালু হয়।তার আগে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লিনিকটি চলতো। এখন নৈশ পরিষেবায় শিক্ষকদের নিযুক্ত করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উপাচার্য্য বিষয়টি এমনভাবে তুলে ধরছেন যাতে সামগ্রিকভাবে দোষের ভাগীদার করা হচ্ছে অধ্যাপক-শিক্ষকদের। আদতে এটা কতটা ঠিক তা জানিয়েছেন সেই অ্ধ্যাপক-শিক্ষকরাই।

কি বলছেন অধ্যাপক-শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শক্তিপদ প্রধান ও অরুণ কুমার মণ্ডল এই বিষয়টি নিয়ে মূল ছবিটা তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেছেন- “প্রথমতঃ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন সংক্রান্ত ভিসিআই নির্দেশিত এমএসভিই-তে নন-ক্লিনিক্যাল বিষয়ের অধ্যাপকদের দিয়ে এই জাতীয় পরিষেবা্র কোনো সুযোগ নেই। দ্বিতীয়তঃ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে নিযুক্ত অধ্যাপকেরা সরাসরি কোনো জনসেবামূলক (বিশেষ করে নৈশ-কালীন) কাজের জন্য নিযুক্ত হন না। পঠন-পাঠন ও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষন মূলক কাজের জন্যই নিযুক্ত হন। তৃতীয়তঃ, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে শিক্ষকেরা নন-প্র্যাকটিসিং ভাতা পান যার সাথে নৈশকালীন জরুরী পরিষেবার কোনো সম্পর্ক নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-শিক্ষকরা এক যোগে এও বলেছেন যে তারা এই জাতীয় পরিষেবা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জায়গাতেই চালু হোক, অবলা জীবেরা পরিষেবা পাক, তাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। যদিও এই রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিভাগের অধীনে থাকা কোনো পশু চিকিৎসালয়েই নৈশ কালীন পরিষেবা কিন্তু দেওয়া হয় না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে- খোদ প্রাণী সম্পদ বিভাগেই যেখানে নৈশ পরিষেবা চালু নেই সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের উপর কেন এভাবে বাড়তি দায়িত্ব চাপিয়ে তাদের দোষের ভাগীদার করা হবে?

জবাব মেলেনি উপাচার্য্যের কাছ থেকে

প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা দুঃখের সঙ্গে বলেন- রাজ্যের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন তারা সেইসব থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত। শিক্ষকদের প্রমোশন বা পদোন্নতি প্রায় এক দশক ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না। উপাচার্য্যকে বারবার এই বিষয়ে জানানো হলেও তিনি বিভাগীয় দফতরের গাফিলতিকেই ঢাল হিসাবে তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত এলটিসি ও স্বাস্থ্যবীমার সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। কেন এগুলি এই অবস্থায় পড়ে আছে তার কিন্তু কোনও জবাবই মেলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্যের কাছ থেকে।

জবাব মেলেনি বিভাগীয় মন্ত্রীর কাছ থেকেও

গোটা বিষয়টি নিয়ে আজ রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে এই বিষয়ে কোনো সাড়াই মেলেনি। ফলে বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব অধরাই থেকে গেছে।

আমাদের সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়-এর উপাচার্য্য এবং রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রীর কাছে কিছু প্রশ্ন রাখলাম–

  • প্রশ্ন-১, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতর পশু ক্লিনিক চালাতে গেলে যে পরিকাঠামো দরকার, তার সব কিছু কি নিয়ম মেনে এখানে চলছে?
  • প্রশ্ন-২, একটা পশু ক্লিনিকে ঠিক যতজন চিকিৎসক থাকা প্রয়োজন, তা কি এখানে আছে?না থাকলে, তার দায় কার উপর বর্তাবে?
  • প্রশ্ন-৩, বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠনের কাজে নিযুক্ত অধ্যাপকদের কি পশু ক্লিনিকের কাজে লাগানো যায়?
  • প্রশ্ন-৪, নন-প্র্যাক্টিসিং ভাতা দেওয়ার অর্থ কি- সেসব অধ্যাপকদের এই পশু ক্লিনিকে রাতের ডিউটিতে কাজে লাগানো?
  • প্রশ্ন-৫, এই পশু ক্লিনিক আর বিশ্ববিদ্যালয় কি তবে একই অংশ?
  • প্রশ্ন-৬, এখানকার অধ্যাপকদের কি তবে নিয়োগের সময় নিয়োগপত্রে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল যে তাদের পঠন-পাঠনের পাশাপাশি পশু ক্লিনিকের দায়িত্বও সামলাতে হবে। প্রয়োজনে নৈশ-কালীন ডিউটিও করতে হবে?
  • প্রশ্ন-৭, রাজ্যে প্রাণী সম্পদ বিভাগ ভালো কাজ করছে বলে তারা দাবি করে থাকে, তাহলে রাজ্যের সমস্ত প্রাণী সম্পদ বিভাগের পশু চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে কেন নৈশ-কালীন চিকিৎসা পরিষেবা আজ পর্যন্ত চালু করা গেল না?
  • প্রশ্ন-৮, পশ্চিমবঙ্গের মতো অন্য রাজ্যের প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়েও কি একইরকমভাবে পঠন-পাঠনের কাজে নিযুক্ত অধ্যাপকদের পশু ক্লিনিকের নৈশ-কালীন দায়িত্ব সামলানো বাধ্যতামূলক রয়েছে?

খামোখা অধ্যাপকদের অভিযুক্ত করে কি আদৌ এই ধরনের সমস্যার সমাধান সম্ভব? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 3