মারাত্মক অভিযোগ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর: ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড বিলি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে

Main দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে বৈষম্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অভিযোগ নস্যাৎ করল কেন্দ্র

Published on: অক্টো ২, ২০২৩ at ২৩:৪১

এসপিটি নিউজ ব্যুরো: বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে দিল্লিতে আজ তৃণমূল কংগ্রেস ধরনা-অবস্থান করে।তার ঠিক সেইসময়- কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিং গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে বৈষম্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তোলা অভিযোগ বাতিল করে দিয়েছে। বিহারে এক সাংবাদিক বৈঠকে এদিন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন, ইউপিএ সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকারের আমলে গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ অনেক বেশি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিযোগ। মারাত্মক এক অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন- ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড বিলি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে।

গিরিরাজ সিং জানান, ইউপিএ সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছিল ৫৮ হাজার কোটি টাকা, সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে গত ৯ বছরে পশ্চিমবঙ্গ ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি পেয়েছে। তিনি বলেন, এর থেকেই স্পষ্ট যে, পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী কতখানি অঙ্গীকারবদ্ধ।

কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জানান, এমএনআরইজিএ-এর মতো প্রকল্পে গত ৯ বছরে পশ্চিমবঙ্গকে ৫৪ হাজার কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে, সেখানে ইউপিএ আমলে মাত্র ১৪,৯০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’য় ইউপিএ সরকারের আমলে যেখানে ৫,৪০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল, সেখানে মোদি সরকারের আমলে ১১,০০০ কোটি টাকার বেশি, অর্থাৎ দ্বিগুণ টাকা খরচ করা হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় ইউপিএ সরকারের আমলে খরচ করা হয়েছিল ৪,৪০০ কোটি টাকা, সেখানে মোদি সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আজ আরও বলেন, এনএসএপি-র অধীনে বর্তমান কেন্দ্রীয়  সরকার পশ্চিমবঙ্গকে দিয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা, সেখানে ইউপিএ-র আমলে এর অর্ধেক পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছিল। অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে ইউপিএ-র আমলে এই অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩,২০০ কোটি টাকা।

পরিসংখ্যান দিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী আরও জানান, ২০০৬-১৪ সময়কালে এমএনআরইজিএ-এর অধীনে ১১১ কোটি মনুষ্য দিবস সৃষ্টি হয়েছিল, ২০১৪ সালের পর তা বেড়ে ২৪০ কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। ইউপিএ-র আমলে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় মাত্র ১৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়েছিল, সেখানে মোদি সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গের গরীব মানুষের জন্য ৪৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় জীবনজীবিকা মিশন-এ ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক হয়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর ইউপিএ আমলে এই অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০০কোটি টাকা। একইভাবে, ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’য় ইউপিএ-র আমলে মাত্র ১৩ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে মোদি সরকারের আমলে তৈরি হয়েছে ২১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা। ২০১৪ পর্যন্ত স্বনিযুক্তি প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন ৪৮ হাজার দিদি, সেখানে বর্তমান সরকারের আমলে যুক্ত হয়েছেন ১১ লক্ষের বেশি দিদি। মহিলাদের ক্ষমতায়নের এটি সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

গিরিরাজ সিং বলেন, “মো্দি সরকার উন্নয়নের কাজে প্রথম থেকেই অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে এই সরকার কাজ করে না। মোদি সরকারের লক্ষ্য হল ‘অন্ত্যোদয়’ এবং ‘বিকাশ’।”

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ২৫ লক্ষ ভুয়ো এমএনআরইজিএ জব কার্ড বিলি করা হয়েছে, যার ফলে কোটি কোটি সরকারি টাকা বেহাত হয়ে যাচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গে এমএনআরইজিএ এবং গরিবদের আবাসন প্রকল্পে জালিয়াতির ঘটনা কেন্দ্রীয় সরকার তুলে ধরে চলেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার নজরদারি দল পাঠালেও তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্যকে বেশ কয়েকবার বিস্তারিত ব্যবস্থা গ্রহণ রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছিল, কিন্তু রাজ্য সরকার কিছুই করেনি। বরং, দোষীদের আড়াল করে একটি ব্যবস্থা গ্রহণ রিপোর্ট পেশ করেছিল। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে জিজ্ঞাসা করা হলে, দুর্নীতির ইস্যুতে কোনো জবাব মেলেনি। শ্রী সিং অভিযোগ করেন, তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রের সঙ্গে কোনোরকম সহযোগিতা করেনি।

কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করে, সরকারি নিয়ম ভেঙে দলীয় কর্মীদের নাম নথিভুক্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই কারণে কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনায় ১১.৩ লক্ষ বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিল এবং শর্ত হিসেবে বলা হয়েছিল, সরকারি নির্দেশিকা মেনে শুধুমাত্র উপযুক্ত পরিবারকেই এই প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রেও সাংসদ, বিধায়ক এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

গিরিরাজ সিং বলেন, মোদি সরকার এখন সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গে বছরের পর বছর ধরে চলছিল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই, সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেইসঙ্গে, সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প নিয়ে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগও এনেছেন সিং। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি কেন্দ্রকে সঠিকভাবে কল্যাণমূলক প্রকল্পে সহায়তা করত, তাহলে আজ উন্নয়নের নতুন কাহিনি তৈরি হত। সূত্রঃ পিআইবি

Published on: অক্টো ২, ২০২৩ at ২৩:৪১


শেয়ার করুন