পেট্রাপোল সীমান্তে যাত্রী দুর্ভোগ অব্যাহত, রাস্তায় দেড় কিলোমিটার লম্বা লাইনে হাজার হাজার মানুষ

Main দেশ বাংলাদেশ বিদেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: জুলা ১৫, ২০২২ @ ২১:৫০
Reporter Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৫ জুলাই: পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী মানুষরা চূড়ান্ত দুর্ভোগের সম্মুখীন। শুধুমাত্র ইমিগ্রেশনে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে। ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের সময় যে দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে ঠিক একইভাবে এদেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সময়ও তাদের একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আজ বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া প্রায় কয়েক হাজার মানুষের দেড় কিলোমিটারের লম্বা লাইন পড়ে ইমিগ্রেশন কাউন্টার পর্যন্ত। বিষয়টি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে অবিলম্বে এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রকের হস্তক্ষেপ  জরুরি হয়ে পড়েছে।

কোনওভাবেই যাত্রীদের দিক ভেবে দেখা হচ্ছে না

পেট্রাপোল চেকপোস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক ও ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য দীপক ঘোষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। তার অভিযোগ, “পেট্রাপোলে এখন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা অবস্থা। কোনওভাবেই যাত্রীদের দিক ভেবে দেখা হচ্ছে না। এই যাত্রীদের উপর আমাদের দেশের অর্থনীতির একটা অংশ নির্ভর করছে। ভারত-বাংলাদেশ বাস সার্ভিস চালু তারই একটা অঙ্গ। এতে দুই দেশেই লাভবান হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকেই বেশি মানুষ আমাদের দেশে আসেন বিশেষ প্রয়োজনে। কেউ আসেন চিকিৎসার জন্য কেউবা আসেন আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে। এখন তারা যদি হয়রানির শিকার হয় তাহলে কি তারা আর আসবে? তখন তো সীমান্তে ব্যবসা-বাণিজ্য সবই ক্ষতির মুখে এসে পড়বে। ”

মাত্র আটজন যাত্রী নিয়ে বাস ছেড়ে যায় কলকাতার দিকে

“গত তিনদিন ধরে চূড়ান্ত দুর্ভোগ হচ্ছে যাত্রীদের। ঢাকা-কলকাতা বাসে আমাদের ৯৩জন যাত্রী এসে পৌঁছয়  রাত আড়াইটে নাগাদ বাংলাদেশের বেনাপোল ইমিগ্রেশনে। তাদের মধ্যে মাত্র ১৩জনকে পাই আজ সকালে। ঐ ১৩জন যাত্রীকে দিয়েই সকাল ১০টায় একটি বাস কলকাতার উদ্দেশে ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। এরপর মাত্র আটজন যাত্রী নিয়ে দ্বিতীয় বাসটি ছেড়ে যায় কলকাতার দিকে। দুপুর তিনটে নাগাদ তৃতীয় বাস ছাড়ি ৩১জন যাত্রী নিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে তো ব্যবসা লাটে উঠতে আর বেশি সময় লাগবে না। তেলের দামও উঠবে না।” বলেন পেট্রাপোল সীমান্তের পিসিডব্ল্যুএ-র সক্রিয় সদস্য দীপক ঘোষ।

সারা দিন রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মানুষগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে-মনোতোষ সাহা

কলকাতায় ফ্রিস্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পরিবহন ব্যবসায়ী মনোতোষ সাহা এদিন অভিযোগের সুরে বলেন- “আজ পেট্রাপোলে ফের বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈ্রি হয়েছে। সকাল থেকে হাজার হাজার মানষ বিএসএফ-এর ক্যাম্প অফিস জয়ন্তীপুর বাজার থেকে লম্বা লাইন দিয়েছে ইমিগ্রেশনের জন্য। লাইন প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা। যার এক মাথায় দাঁড়ালে অন্য মাথা দেখা যায় না। সারা দিন রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মানুষগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তারা সকলেই বৈধ ভিসা নিয়েই এসেছে। এখন তারা বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছে। তারা এতটাই বিরক্ত যে বাস থেকে নেমেই বলছে- আর এখানে আসব না। অনেক হয়েছে। একবার ভাবুন, সত্যিই যদি এমনটা হয়ে তাহলে তো দু’দেশের মধ্যে পরিবহ্ন ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে আমাদের দেশ।”

যাত্রীদের প্রশ্ন-সমস্যা থাকলে এত ভিসা দিচ্ছে কেন

যাত্রীদের অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা একটাই কথা বলছেন যে এখানে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যদি সত্যি লোক কম থাকে তাহলে এক সঙ্গে এত হাজার হাজার মানুষকে ভারত সরকার ভিসা দিচ্ছে কেন? এভাবে খোলা আকাশের নীচে সারা দিন সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব? একটু জলের ব্যস্থা নেই। জল আছে সেই ইমিগ্রেশনের কাছে। সেখানে পৌঁছতেই তো রাতভর হয়ে যাবে। এভাবে বাচ্চা-বৃদ্ধ-অসুস্থ মানুষকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়?

সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর ফোন ধরেননি ইমিগ্রেশন কর্তা

যাত্রীদের কাতর আকুতি-মিনতিতেও ইমিগ্রেশন কিংবা পেট্রাপোল সীমান্তের দায়িত্বরত একজন কর্মীরও হৃদয় গলেনি। দীপকবাবু রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে বলেন- “আমার প্যাসেঞ্জারদের না ছেরে আমি তো এখান থেকে যেতেও পারব না। রাত হয়ে যাচ্ছে, কিভাবে সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকবে বলুন তো? ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা অ্যাডিশনাল ডাইরেক্টর-কাছে অনু্রোধ জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি।” আমরা সংবাদ প্রভাকর টাইমস একাধিকবার তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কথা বলা তো দূর অস্ত ফোনই ধরেননি।

Published on: জুলা ১৫, ২০২২ @ ২১:৫০


শেয়ার করুন