পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে মমতার ধমক দলীয় বিধায়ককে, বাদ গেলেন না দফতরের আমলাও

রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: মার্চ ২৬, ২০১৮ @ ২১:৫৬

এসপিটি নিউজ, পৈলান, ২৬ মার্চঃ গরম পড়তেই শুরু হয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। ডিপ টিউবওয়েল অনেক জায়গায় কাজ করছে না। জলের স্তর নেমে যাওয়ায় এই বিপত্তি। তার মধ্যে কিছুটা নিজেদের জন্য এই সমস্যা বড় আকার নিয়েছে। যেটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পৈলানে অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক বৈঠকে সকলের সামনে চলে এল। যার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ধমক পর্যন্ত খেতে হল মগরাহাট পূর্বর তৃণমূল বিধায়ক নমিতা সাহাকে।এমনকি কাজে ঢিলেমি দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে কড়া বার্তাও পেতে হল সংশ্লিষ্ট আমলাকেও।

সোমবার জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস পানীয় জলের সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পানীয় জলের খুব সমস্যা দিদি। এখানে পিএইচই-র কাজের গতি খুব মন্থর। যার ফলে পানীয় জলের প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে দেরী হচ্ছে। এ কথা শোনা মাত্রই রেগে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মুহূর্তে তিনি পিএইচই দফতরের সংশ্লিষ্ট আমলাকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন করেন-সৌরভ, তোমরা প্রজেক্টের কাজ খুব ধীর গতিতে করছো?

এরপর তিনি বলে ওঠেন- নেক্সট মনোজ পন্থ এটার দায়িত্বে আসবে। তারপরই মুখ্যমন্ত্রী বলে ওঠেন, মনোজ কোথায় গেল, সৌরভ চলে গেলে তুমি দায়িত্বে আসবে। পিএইচই-র জলের প্রবলেমগুলো একটু দেখে নাও তো!এখানেও ১২০০ কোটি টাকার স্কিম নিয়েছে। কিন্তু খরচা খুব কম হয়েছে। এগুলো হয়ে গেলে প্রজেক্ট গুলো হয়ে যাবে। অনেকগুলো বছর কেটে গেল, কিন্তু তোমাদের এত টাইম লাগছে কেন?

মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়ে সৌরভবাবু তখন বোঝানোর চেষ্টা করেন, ম্যাডাম, ৭৮ শতাংশ কমপ্লিট হয়ে গেছে। অক্টোবরের মধ্যে হয়ে যাবে। মমতা বলেন, জানি, কিন্তু করতে তো হবে। ফেলে রাখলে তো ম্যান পাওয়ার লাগে না। সামনে গরম আছে তো, যদি কিছু ডিপ টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ভালো হয়। গরমের জন্য, যেখানে খরায় গরমের প্রবলেম সেখানে কিছু ডিপ টিউবওয়েল, টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করতে হবে। আগে থেকে প্ল্যানিং করে নাও। শুধু এখানে নয়, সব জায়গার জন্য বলেছি কিন্তু।

এইসময় এই অভিযোগে আরও বেশি ক্ষোভ উগরে দেন স্পিকার বিমানবাবু। তিনিও বলেন, এই পানীয় জলের সমস্যা অনেক। এটা নিয়ে আমি টাইম টু টাইম ওদের ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।কিন্তু ভীষণ স্লো প্রোগ্রেস কাজের।সামনে এত গরম আসছে। গরমের মধ্যে গ্রামে গেলে মানুষরা ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায়। এগুলো আমার খুব অস্বস্তি লাগে।

স্পিকারের মুখে এসব শুনে ফের মমতা প্রশ্ন করেন সৌরভবাবুকে, কেন তোমাদের এত দেরী হচ্ছে কেন? এত টাইম লাগছে কেন? তখন সৌরভবাবুর ‘শ্যাম রাখি না কুল’ রাখি অবস্থা।  একদিকে মুখ্যমন্ত্রী অন্যদিকে স্পিকার। এবার তিনি স্পিকারকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলেন, স্যার, আপনি যে যে কাজ বলেছিলেন সে সে কাজ তো শুরু হয়ে গেছে।

এ কথা শুনে মমতা আবার বলেন, কাজ শুরু নয়, শেষ করছ না কেন? এইসময় নানাধরনের যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করতে গেলে তাকে থামিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেখো, সৌরভ, গ্রামের মানুষ তো এত টেকনিক্যাল কথা বুঝবে না। সামনে যাকে পাবে তাকে গালাগালি দেবে। তোমাদের তো গালাগালিটা খেতে হয় না। গালাগালিটা আমাদের খেতে হয়। সেইজন্য তোমাকে আমি বলি, বিষয়টাকে সিরিয়াসলি দেখো। আর যেখানে টাইম লাগবে সেখানে এখনই ডিপ টিউবওয়েল করে দাও। এই দু’মাসের মধ্যে। এরপর তিনি জেলাশাসককে নির্দেশ দেন, কোথায় কোথায় ডিপ টিউবওয়েল দরকার তাড়াতাড়ি সার্ভে করে বলবে। কোনও গাফিলতি চলবে না।

এরপর তিনি জেলার পিএইচই-র কর্তাদের ধরেন।তারাও সংখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে হচ্ছে হবের মতো কথা শোনানোর চেষ্টা করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাদের বলেন কি সমস্যা আছে। তারা বলেন বিদ্যুতের সংযোগ এলেই কাজ হয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী এবার তাদের জিজ্ঞাসা করেন, বিদ্যুতের সংযোগ আসছে না কেন? জবাবে তারা বলেন, ওনারা কাজ করছে। মুখ্যমন্ত্রী এবার ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ওঠেন, একসঙ্গে কাজটা করে নিলে তো দু’বার করে করতে হয় না। একবার বাড়ি তৈরি করবেন, একবার ইলেক্ট্রিকের লাইন করবেন, একবার জলের লাইন করবেন, আর একবার রঙ করবেন-তাহলে তো যেটা তিন মাস করার কথা সেটা ১২ মাস লাগবে। একসাথে সাইমাল্টেনিয়াসলি কাজটা করে নেওয়া যায় না! আবারও তিনি সৌরভবাবুকে জানিয়ে দেন, তুমি দেখে নাও। আমি কিন্তু দু’মাস বাদে আবার এসে ধরব? জল পাচ্ছে কিনা আমি দেখব। তোমরা আগে টেম্পোরাওরিলি রিলিফ দাও লোককে।

এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মগরাহাট পূর্বর তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নমিতা সাহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, তোমরা জলের লাইনগুলো ফাটিয়ে দিচ্ছো কেন? আমাদের আবার জুড়তে হচ্ছে। ফাটাচ্ছে কেন? এরপর তিনি মগরাহাট থানার পুলিশের দায়িত্বে থাকা অফিসারের খোঁজ করেন। তাদের বিষয়টি দেখতে নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে থাকেন, কিছু বদমাশ লোক রোজ জলের লাইন ফাটিয়ে দিচ্ছে। আমরা জল দিতে চাইছি লাইন তুলে। আর কিছু লোক সেই লাইন ফাটিয়ে দিচ্ছে! তার জন্য বাকি লোক জল পাচ্ছে না। ওখানে লাইন ফাটিয়ে দিয়ে নিজেরা চাষের জন্য জল নিচ্ছে। এটা খাওয়ার জল চাষের জল নয়।

এরপর মমতার ধমক তৃণমূল বিধায়ককে -শোনো নমিতা, আমি কিন্তু পানীয় জলের লাইন ফাটিয়ে জমিতে লাগাতে দেব না। জমির জন্য আলাদা সেচ, পুকুর থেকে জল নাও। শোনো আমি নিজের এলাকা বাঁচাবো, অন্যের এলাকা বাঁচবে না, এসব চলবে না। এ সব বন্ধ করে দেব। এসব যেখানে হচ্ছে পুলিশ দায়িত্ব নেবে। কারা করছে তাদের বিরুদ্ধে স্পেসিফিক কেস দেবেন। চাষিরা যাতে চাষ করতে পারেন আমি ডিওএমকে বলব অল্টারনেটিভ ব্যবস্থা করতে। জল ভোর জল ধরো পুকুর থেকে জল দিতে জেলাশাসককে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।  ফাইল ছবি

Published on: মার্চ ২৬, ২০১৮ @ ২১:৫৬

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 7