পাকিস্তান থেকে ভারতে ফি্রে অভিনন্দনঃ বললেন- আচ্ছা লাগ রাহা হ্যায়

দেশ
শেয়ার করুন

Published on: মার্চ ২, ২০১৯ @ ১৫:১০

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ খবর এসে গেছিল সন্ধ্যা নাগাদ। দেশের সব সংবাদ মাধ্যমে অভিনন্দনের পৌঁছনোর খবরও ততক্ষণে প্রকাশ করা হয়ে গেছিল। কিন্তু অনেক রাতে অভিনন্দনের দেশে পঊঁছনোর ছবি প্রকাশ্যে আসে। পাকিস্তানের কিছু অসহনীয় মনোভাবের জন্যি এত দেরী হয়েছে। আটারি ওয়াঘা বর্ডারে অভিনন্দনকে যখন ভারতীয় সেনাদের হাতে উইং কম্যন্ডার অভিনন্দন ভর্তমানকে হস্তান্তর করা হয় তখন ঘড়িতে সময় রাত ৯টা ২১ মিনিট।

এখান থেকে তাঁকে অমৃতসর হয়ে বিশেষ বিমানে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে পালাম বিমান বন্দরে তাঁকে দেখার জন্য মানুষ অভিনন্দন – অভিনন্দন করে স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে ছেলেদের পাশাপাশি দেখা যায় নানা বয়সের মহিলাদের। তাদের মধ্যে এমন উচ্ছ্বাস দেখা গেছে মনে হয়েছে যেন সকলেই নিজের ঘরের ছেলেক ফিরে পেয়েছে। দিল্লিতে পৌঁছে অভিনন্দনকে আরআর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানেই তঁরা মেডিক্যাল টেস্ট হবে।অভিনন্দনকে শনিবার তাঁর পদস্থ ভারতীয় কর্তাদের সামনে পাকিস্তানে কি হয়েছে সমস্তটা খোলাখুলিভাবে জানাতে হবে। এমনকী তাঁর শারীরিক পরীক্ষাও করা হবে।

প্রথমে খবর এসেছিল উইং কম্যান্ডারকে শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ নিয়ে আসা হবে। কিন্তু তা হয়নি। এরপর ফের খবর আসে তাঁকে দুপুর ৩টে নাগাদ নিয়ে আসা হচ্ছে। আটারি-ওয়াঘা বর্ডারে পাকিস্তান রেঞ্জার্স অভিনন্দনকে ভারতের বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেবে। কিন্তু ভারত জানিয়ে দেন সেখানে তারা কোনও বিটিং রিট্রিট করবে না। এরপর খবর আসে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ভারতীয় পাইলটকে নিয়ে আসা হবে। এরপর থেকে ওয়াঘা বর্ডারে মানুষ তাদের প্রিয় বীর যোদ্ধা দেখার জন্য তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু সেই সময়েও পাকিস্তান তাদের কথা রাখতে পারেনি। এরপর রাত ৯টা বেজে ১৭ মিনিট নাগাদ ওয়াঘা বর্ডারে পরিস্থিতি একটু অন্যরকম হয়ে ওঠে। সবাই চিৎকার করতে থাকে ওই ওই এসে গেছে। অভিনন্দন… অভিনন্দন…অভিনন্দন। এরপর ৯টা ২১ মিনিটে ভারতের মাটিতে পা রাখেন আমাদের বীর যোদ্ধা।

এদিন সারা দেশে সমস্ত রাজ্যেই নিজেদের মতো করে দেশভক্তির প্রদর্শন করা হয়। আমেদাবাদে একরকম তো বেঙ্গালুরুতে আর এক রকম। পুরীতে আবার সমুদ্রতীরে অঙ্কনশৈলী।

মনে করা হচ্ছে জঙ্গি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবেশি দেশের সমর্থন আদায় করতে ভারত যে ভূমিকা নিয়েছে সেক্ষেত্রে এ এক বড় পদক্ষেপ। অভিনন্দনকে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ওয়াঘা বর্ডার চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে তাঁর পাশে পাকিস্তান রেঞ্জার, ইসলামাবাদে বহাল ভারতীয় দূতাবাসের এক আধিকারিকও সেখানে ছিলেন। পাকিস্তান সীমানায় যখন অভিনন্দনের প্রথম ছবি সামনে আসে তাঁর সঙ্গে এক মহিলাকে দেখা যায়। অনেকেই মনে করেছিলেন তিনি হয়তো অভিনন্দনের স্ত্রী হবেন। কিন্তু না, তিনি হলেন পাকিস্তানের এক উচ্চ আধিকারিক। তিনি হলেন ডক্টর ফারিহা বুগতি, আমাদের যেমন ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস আছে ঠিক তেমনই পাকিস্তানের ফরেন সার্ভিসের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক হলেন তিনি। তিনি ভারতীয় সব মামলার দেখভাল করে থাকেন। কুলভূষন যাদবের মামলাও তিনি দেখছেন।

গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন পাকিস্তানের গেট পার করে ভারতে প্রবেশ করেন। বিএসএফ-এর আধিকারিকরা এগিয়ে গিয়ে বীর অভিনন্দনকে সাদরে অভ্যর্থনা জানান। পাকিস্তানের আধিকারিকরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এগিয়ে দেন। সেখানে সই-সাবুদ করা হয়। সেইসময় অভিনন্দনের চোখ ছলছল করছিল। ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা দেখা গেল। শুধু বলে উঠলেন-“আচ্ছা লাগ রহা হ্যায়।”

অভিনন্দনের ঘরে ফেরা নিয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দল অভিনন্দন জানান বীর অভিনন্দনকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ট্যুইট করেন-“উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন আপকা ঘর মে স্বাগত হ্যায়। রাষ্ট্র কো আপকে অদম্য সাহস পর গর্ব হ্যায়। হামারে সশস্ত্র বল দেশ কে ১৩০ করোড় ভারতীয় কে লিয়ে প্রেরণা কা স্ত্রোত হ্যায়।” এরপর অভিনন্দনের ঘরে ফেরা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠতে শুরু করে দেয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামান ট্যুইট করেন, “স্বাগতম উইং কমান্ডার অভিনন্দন! দেশ আপনার আদর্শ সাহসের জন্য গর্বিত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ১৩০ কোটি ভারতয়র জন্য এক অনুপ্রেরণা। বন্দে মাতরম।” ‘ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ট্যুইটে লিখেছেন, “স্বাগত, উইং কমান্ডার অভিনন্দন সারা দেশে আপনার জন্য গর্বিত।”

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ ট্যুইট করেছেন, “উইং কমান্ডার আপনার সাহস প্রশংসনীয় ুইং কম্যান্দার অভিনন্দ! আপনাকে স্বাগতম। আপনাকে অভিনন্দন। জয় হিন্দ। ভারত মাতা কি জয়। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী স্মৃতি ইরানী ভিনন্দনের ঘ্রের ফেরার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেন। তিনি বললেন, “সংঘ (আরএসএস) এর আজ গর্ব হওয়া উচিত এই কারণে যে আজ ভারতের এক সন্তান ৪৮ ঘণ্টার মধে ঘ্রে ফিরে আসতে পারে একজন স্ব্যংসেবকের পরাক্রমের জন্য।”

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেন, “অভিনন্দন আপনার দেশ প্রত্যাবর্তন, প্রিয় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য আপনাকে স্বাগত।” দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, “উইং কমান্ডার অভিনন্দন আপনাকে স্বাগত জানাই। আমি আপনার সাহস এবং আপনার পরিবারের সাহসকে সেলাম জানাই।”

অন্ধ্রপ্রদেশ মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, রাজস্থান মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উত্তর প্রদেশের অখিলেশ যাদব, সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নাবিস এবং কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী সহ অনেক রাজনীতিবিদ অভিনন্দনকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন।

Published on: মার্চ ২, ২০১৯ @ ১৫:১০

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + = 12