পলাতক আসামীকে চেয়ারপার্সন করায় বিএনপি’র নির্বাচনে পরাজয়ের প্রধান কারণ, মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ বিদেশ
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-ইবতিসাম রহমান

Published on: জানু ১০, ২০১৯ @ ২৩:২০

এসপিটি নিউজ, ঢাকা, ১০ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বিএনপি’র নির্বাচনে ব্যর্থতার কারণ তাদেরকেই অনুসন্ধান করে দেখার আহবান জানিয়ে এ সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) যে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। ৩ হাজার ৯শ’র ওপর গাড়ি ভাংচুর করেছে। সাড়ে ৩ হাজারের ওপর মানুষকে তারা পুড়িয়েছে। ৫শ’র কাছাকাছি মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেছে। ছোট্ট শিশু থেকে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী কেউ বাদ যায়নি। তাদের রুদ্র্ররোষ থেকে শুধু মানুষ নয় গাছপালাও রেহাই পায়নি। গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটেছে, রেল লাইনের ফিস প্লেট খুলে ফেলেছে।এই অপকর্মের পর তারা কিভাবে আশা করতে পারে জনগণ আবার তাদের ভোট দেবে।’ এ সময় বেগম জিয়ার এতিমের অর্থআত্মস্যাৎ মামলায় কারাগারে আটক থাকার পাশাপাশি একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী তারেক রহমানকে দলের চেয়ারপার্সন করায় নেতৃত্বের শূন্যতা, বিএনপি’র নির্বাচনে পরাজয়ের একটি প্রধানতম কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তাদের দলে কি এমন কোন ভাল মানুষ নাই যাকে তারা চেয়ারপার্সন বানাতে পারে, তারা বানালো একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে আটক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের এই দিনেই পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁর স্বাধীন স্বদেশ ভূমে ফিরে আসেন। আর এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ, সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল- আলম হানিফ এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান এবং আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন। দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভাটি সঞ্চালনা করেন।

দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, উপযুক্ত প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে কেবল অর্থের বিনিময়ে অনেক অখ্যাত, স্বল্প পরিচিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় দলের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক একটা সিটে ৪/ ৫ জন করে মনোনয়ন, যে বেশি টাকা দিচ্ছে তাকেই দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আগে যে টাকা দিয়েছে দেখা গেল তার থেকে বেশি দিয়ে আরেকজন মনোনয়ন নিয়ে গেছে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যখন সিট অকশনে (নিলাম) দেওয়া হয় তখন তারা নির্বাচনে জেতে কিভাবে?’

কেবল যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় বিএনপি যে সব আসন হারিয়েছে তার গুটিকতক উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ধামরাইয়ে আতাউর রহমান খানের ছেলে জিয়াউর রহমান, আমরা ধরেই নিয়েছিলাম তিনি মনোনয়ন পেলে তো জিতবেনই। কিন্তু তাকে না দিয়ে যে বেশি টাকা দিল তাকে মনোনয়ন দেওয়া হল। নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দোকারকে মনোনয়ন দেওয়া হলো না, চট্টগ্রামে মোর্শেদ খানকে না দিয়ে যে ভাল টাকা দিল তাকেই মনোনয়ন দিল। এসব মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনেকে তাঁর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করে এসব কথা জানিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করে বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের এ সবের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ভাইয়াকে আবার পাউন্ডে সেখানে পেমেন্ট করতে হবে।’

শেখ হাসিনা এ সময় স্বাধীনতা বিরোধী জামাত শিবিরকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপি’র ভরাডুবির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘যেখানে উচ্চ আদালত থেকে একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জামাতে ইসলামী, সেই জামাতের ২৫ জনই মনোনয়ন পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তাঁরা যুদ্ধাপরাধীকে কখনই ভোট দেবে না। ভোট তাঁরা দিতে চায়ও না। ভোটও দেয়নি।’ ‘যাদের কোন রাজনীতিই নেই। কেবল দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিং, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎ করা, অগ্নি সন্ত্রাস এবং মানুষ হত্যা যাদের নীতি তারা জেতার আশা কিভাবে করে?’ প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বাংলাদেশের উন্নয়নের সুফলটা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারাতেই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয় হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কারণে বাংলাদেশের জনগণ আজকে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করেছে, যার ফলে আমরা আবার দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি এ সময় নৌকা এবং মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করায় সকল শ্রেণী-পেশার জনগণ তথা সমগ্র দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়, উন্নয়ন চায়, নিজের জীবনের উন্নতি চায়-সেই আকাঙ্খা থেকেই তাঁরা আমাদের ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।’ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করে উল্লেখ শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁরা জানতে পারেন নি বঙ্গবন্ধু কি বেঁচে আছেন, না নেই। অথচ পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে না গিয়ে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভাষণের মাধ্যমে জাতিকে যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, সে অনুযায়ীই আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ বাঙালির জীবনে ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা না ঘটলে বাংলাদেশ আরো অনেক আগেই উন্নত সমৃদ্ধ হতে পারতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী শাসকেরা বাংলাদেশের অস্তিত্বেই বিশ্বাসী ছিল না, যে কারণে দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি এবং ২১ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই জনগণ প্রথম উন্নয়নের ছোঁয়া লাভ করে।

তিনি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়ে আমাদের ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে সেই বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ। সেই বিশ্বাস আমাদের আছে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজ নামচা বই দুটি পড়ার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি এ সময় ‘সিক্রেটস ডকুমেন্টস অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত এবং প্রকাশিতব্য মোট ১৪ খন্ড ভলিউমের বই থেকে আরো তথ্য জানতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন।

Published on: জানু ১০, ২০১৯ @ ২৩:২০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 1