পর্যটনে চমকে দিল রাজস্থান: ১০ মাসে ৪ কোটি, কিভাবে সম্ভব জানালেন আরটিডিসি-র হিংলাজ দন রত্নু

Main অর্থ ও বাণিজ্য দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ১৫, ২০২২ @ ২১:০৬
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ১৫ নভেম্বর: যত দিন যাচ্ছে ততই রাজস্থানের প্রতি বাঙালি পর্যটকদের ভালোবাসা ক্রমে বেড়েই চলেছে। রাজস্থানের কল-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি বাঙালিদের আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তারই প্রতিফলন ঘটেছে রাজস্থান পর্যটনের উপর। এর জেরে রাজস্থান পর্যটন ব্যবসায় রীতিমতো সকলকে একেবারে চমকে দিয়েছে। যা কেউ কোনওদিন ভাবতেও পারেনি, সেতাই করে দেখিয়েছে রাজস্থান পর্যটনের কলকাতা অফিস। সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে রাজস্থান পর্যটন বিকাশ নিগমের কলকাতার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক এবং কলকাতায় রাজস্থান সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর হিংলাজ দন রত্নু জানিয়েছেন যে গত ১০ মাসে শুধু পশ্চিমবঙ্গ থেকেই রাজস্থান পর্যটন প্রায় চার কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।

হিংলাজ দন রত্নুর মুখে মুখ্যমন্ত্রী সহ এইসব কর্মকর্তাদের প্রশংসা

সারা বছরই বাঙালিদের একটা বড় অংশ রাজস্থান ভ্রমণ করে। করোনার পর সেই প্রবণতা অব্যাহত আছে। আর তারই জেরে এবার রীতিমতো চমকে দিয়েছে রাজস্থান। শুধু পশ্চিমবঙ্গ থেকেই তারা কয়েক কোটী টাকার ব্যবসা তুলে নিয়েছে। পর্যতন আধিকারিক তথা কলকাতায় রাজস্থান সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর হিংলাজ দন রত্নু সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে জানালেন-“আজ আমি আপনাদের মাধ্যমে এটা জানাতে চাই যে আরটিডিসি-র এই অফিস চলতি আর্থিক বছরে খুবই ভাল ব্যবসা রাজস্থান পর্যটনকে দিয়েছে। ব্যবসার টাকার অঙ্ক প্রায় চার কোটি ছুঁতে চলেছে। এই চার কোটির মধ্যে থাকার জায়গা এবং পরিবহন দুটোই আছে। দুই কোটি থাকার জায়গা এবং দুই কোটি পরিবহনে হয়েছে। এর পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছেন আমাদের রাজস্থান সরকারের যশস্বী মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, পর্যটনমন্ত্রী মহারাজা বিশভেন্দার সিং, রাজস্থান পর্যটন বিকাশ নিগমের চেয়ারম্যান ধর্মেন্দ্র রাঠোর, আরটিডিসি-র ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ভি কে সিং, এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ড. অশোক যোগী,   এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর(ফিনান্স) হুলাস রে পানোয়ার।

কিভাবে সম্ভব হল, জানালেন হিংলাজ

মাত্র একটি রাজ্য থেকে এত কোটী টাকার ব্যবসা কিভাবে সম্ভব হল, সেতাই জানালেন হিংলাজ দন রত্নু। রাজস্থান বরাবরই পর্যটনে সেরা। দেশের মধ্যে এই রাজ্য পর্যটনে অন্য রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বহু ক্ষেত্রে। এর পিছনে বিরাট কর্মযজ্ঞ, যা সাধারণ মানুষ জানতেই পারে না। ঠিক কিসের জন্য বাঙালি পর্যটকরা এই রাজ্যে বার বার ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন, সেটাই সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজস্থানের এই সরকারি কর্তা।

তিনি বলেন-“দেখুন, আমরা তিনটি ভাবনা নিয়ে কাজ করি। উপর থেকে শুরু করে একেবারে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত একটি পরিবারের মতো দেখি। এই যেমন ধরুন আজ সামধানীতে সেখানকার কেয়ারটেকার ফোন করে জানিয়েছে যে স্যার, আপনার অতিথি এখানে পৌঁছে গেছে। উনি এখন ক্যামেল রাইডিং-এ গেছে। আমাদের কাজের ধরন এমনই। শুধু বুকিং করে পর্যটকদের পাঠিয়ে দিয়েই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। আমরা প্রতিনিয়ত পর্যটকদের সঙ্গে যুক্ত থাকি। রাজস্থানে পৌঁছনোর পর থেকে নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে আমাদের।সামধানী এমন একটি জায়গা, যেখান থেকে পাকিস্তান খুব কাছে। দেশের একেবারে শেষ সীমান্ত। সামধানী খুবই বড় পর্যটন কেন্দ্র। জাতীয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি জয়সলমীর জেলায় অবস্থিত।”

“একটু আগে আপনার সামনেই ফোন এসেছিল। হোটেল বিনায়ক থেকে।একজন এলআইসি-র অফিসার কলকাতা থেকে ঘুরতে গেছেন।কিন্তু ভুলবশতঃ তিনি নিজের আইডি নিয়ে যেতে ভুলে গেছেন। এর ফলে হোটেল ভাড়া থেকে নির্দিষ্ট ছাড় তিনি পাননি। তবে আমি তাকে কথা দিয়েছি যে আপনি কলকাতায় ফিরে আইডি-কার্ড নিয়ে এই অফিসে চলে আসবেন, আমি তখন আপনার সেই ডিসকাউন্ট দিয়ে দেব। এটাই আমাদের কাজের ধরন।আপনাকে বলতে চাই রাজস্থান পর্যটন ও রাজস্থান পর্যটন বিকাশ নিগম এক সুদৃঢ় নীতি ও ঐক্যবদ্ধ শৃঙ্খলার উপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে।এটাই আমাদের রসায়ন।এজন্য রাজস্থানকে মানুষ এত ভালোবাসে। আর আমাদের ব্যবসা বেড়ে চলে।” বলেন হিংলাজ দন রত্নু।

চালু হয়েছে প্যালেস অন হুইলস

“আপনাকে আরও একটি সুখবর দিচ্ছি। আমাদের ‘প্যালেস অন দ্য হুইল’ প্রায় আরাই বছর ধরে বন্ধ হয়েয়াছে। সেটি আজ চালু হয়েছে। খুবই ভালোভাবে এই যাত্রা চলছে। বহু পর্যটক এর আনন্দ নিচ্ছে।এসবই আমাদের আধিকারিকদের জন্যই হয়েছে। বলা হয়- যে দলের সেনাপতি সুদৃঢ় সেই দল যে কোনও ক্ষেত্রেই সফল হয়ে থাকে। আমরাও তারই অংশ হিসাবে কাজ করছি।“ যোগ করেন হিংলাজ।

‘আমরা আরও ভালো কিছু করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি’

কলকাতায় গণেশ চন্দ্র অ্যাভেনিউ-তে কমার্স হাউসে অবস্থিত রাজস্থান সরকারের অফিস শুধু পশ্চিমবঙ্গের মানুষই নয়, ভিন রাজ্যের মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই কথা বলতে গিয়ে হিংলাজ দন রত্নু জানান-“এখানে আজ ভিন রাজ্য থেকেও ফোন আসে। অনুসন্ধানের জন্য কর্ণাটক, মুম্বই, ত্রিপুরা, হায়দ্রাবাদ এমন অনেক রাজ্য থেকে ফোন করে জানতে চায় রাজস্থানের বিষয়ে। তাদের অনেকে আবার অনলাইনে বুকিংও করে থাকেন। এতটাই বিশ্বাস তারা আমাদের উপর রাখে। আমাদের প্রয়াসই হল- অতিথি দেব ভবঃ।অফিস আসার পর থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত থাকি। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বের হই না, এতাই আমাদের বৈশিষ্ট্য। আজ রাজস্থান সরকার ও আমাদের যশস্বী মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট সাহেব আমাকে যে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেছেন, আ্মি সেই দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে চলেছি। আমরা আরও ভালো কিছু করা্র লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।”

‘আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল- পর্যটনের সুরক্ষা ও ভরসা’

সারা দেশে একাধিক রাজ্যে রাজস্থান পর্যটন বিকাশ নিগমের অফিস আছে। কিন্তু তারা কেউই এত কোটি টাকার ব্যবসা দিতে পারেনি।এমনটাই জানালেন রাজস্থানের কলকাতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজস্থান সরকারের আধিকারিক হিংলাজ দন রত্নু।

এসপিটি-কে তিনি বলেন-“রাজস্থান পর্যটন বিকাশ নিগম থেকে জেনেছি যে দেশের অন্য কোনও রাজ্য থেকে কেউ চার কোটি টাকার ব্যবসা দিতে পারেনি। কিছুদিন আগে বিভিন্ন রাজ্যের পর্যটন আধিকারিকদের সঙ্গে মিটিং ছিল। সেখানে গুজরাট, সিকিম, ছত্তিশগড়, ত্রিপুরা সহ একাধিক রাজ্য ছিল। তারা কথা প্রসঙ্গে আমাকে জানিয়েও দিলেন যে এবার ব্যবসায় আপনিই শ্রেষ্ঠ। কারণ, তাদের কারও দেড় কোটি, কারও এক কোটি, কারও আবার আড়াই কোটি’র উপর যেতে পারেনি। সেখানে আমরা চার কোটি।”

“এখান থেকে সমস্ত বুকিং হয়ে থাকে। এত বড় অফিস চার-পাঁচ জন কর্মী নিয়েই চালাচ্ছি। তাদের সক্রিয় ভূমিকা কাজকে সফল করতে সাহায্য করছে। আমি আসার আগে থেকে এরা কাজ শুরু করে দেয়। তারা একেবারে পরিবারের মতো এই অফিসকে দেখে। খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে তারা সকলে কাজ করে চলেছে। বহু পর্যটক রাজস্থান ঘুরে এসে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে যায়। বলে যায় যে হিংলাজজি, দারুন ঘুরলাম।আমরা অভিভূত। রাজস্থান পর্যটন বিকাশ নিগম গোটা দেশের মধ্যে এক বিশেষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল- পর্যটনের সুরক্ষা ও ভরসা।” বলেন হিংলাজ।

Published on: নভে ১৫, ২০২২ @ ২১:০৬


শেয়ার করুন