নর্থ-ইস্টে ট্যুরিজম-এ সেরা সিকিম: সম্ভাবনা আছে পশ্চিমবঙ্গেও-উপায় জানালেন TAFI চেয়ারম্যান

এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ ভ্রমণ রাজ্য সাক্ষাৎকার
শেয়ার করুন

‘পিপিটি’ মডেল পারে পশ্চিমবঙ্গে পর্যটনের প্রসার ঘটাতে- মনে করেন ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি।

‘রাজ্য সরকারকে দশ বার প্রপোজাল দিয়েছি। তারা ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে। নিজেরা সার্ভে করে বলেছে- দেখব, করব।

Published on: জুন ১৪, ২০১৯ @ ১৫:৩২

সারা ভারতে এমন একটি রাজ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না- যেখানে প্রকৃতি তার সমস্ত কিছু দু’হাত ভরে দিয়েছেন। যেখানে পাহাড়-সমুদ্র-জঙ্গল-গ্রামীণ ভূমি, ঐতিহাসিক স্থান- তীর্থস্থান সব কিছুই বর্তমান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এত কিছু থাকা সত্ত্বেও আমাদের পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের মানচিত্রে এখনও নিজেদের সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনি। সংবাদ প্রভাকর টাইমস এই বিষয়টি নিয়ে হাজির হয়েছিল ট্রাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি’র কাছে। আমাদের প্রধান সম্পাদক অনিরুদ্ধ পালে‘র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি শোনালেন সম্ভাবনার কথা। জানালেন পশ্চিমবঙ্গও উঠে আসতে পারে ভালও জায়গায়, জানালেন সেই উপায়ের কথা।আসুন কি কথা হয়েছে সেই সাক্ষাৎকারে।

এসপিটি: প্রথমে নর্থ-ইস্ট-এ যে স্টেটগুলো রয়েছে সেখানে লাস্ট ফাইভ ইয়ারসে কিভাবে কতটা প্রগ্রেস করেছে পর্যটন?

অনিল পাঞ্জাবি: নর্থ-ইস্টে প্রোগ্রেস তো ভালোই হচ্ছে।

এসপিটি: স্টেটগুলোর নাম যদি বলেন…

অনিল পাঞ্জাবি: আসাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, সিকিমে ভালো গ্রোথ হয়েছে। পাকিয়ং যে নতুন এয়ারপোর্ট হয়েছে সেখানে তো স্পাইস জেট চালানোর দায়িত্ব নিয়েছে। ভাল সাড়া মিলেছে। এতে ট্যুরিস্টদের সংখ্যা বেড়েছে। অনেক কিছু করা যায়। বাট প্রোগ্রেস হয়েছে। লাস্ট ফাইভ ইয়ারসে যা হয়েছে তাতে আমরা হ্যাপি। এখানে কলকাতায় যারা আসত তারা দু’দিন এসে ঘুরে চলে যেত। তারা দু’দিন কোথায় যাবে- গুয়াহাটি সেখানে ভালো টেম্পল আছে। একটু গ্রোথ ছিল। এয়ারলাইন্স এত হয়ে গিয়েছিল যে ভাল রেট পাচ্ছিল না। ট্রাভেলিং নর্থ ইস্ট-এ ঠিক আছে। আরও ভাল করতে সময় লাগবে। মাঝে মাঝে ওখানে আমাদের টাভেল ফেয়ার হয়েছে। একটু অ্যাওয়ারনেস হয়েছে। তা ওখান থেকে লোকে অনেক ট্রাভেল করছে। বিদেশ যাচ্ছে। মুভমেন্ট হচ্ছে।গ্রোথ এসছে। স্লোলি বাট সিওরলি।

এসপিটি: আচ্ছা এটা যদি উত্তরভারতের কিংবা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে তুলনা করা যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে কি উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির থেকে পিছিয়ে আছে?

অনিল পাঞ্জাবি: যদি আপনি তুলনা করেন নর্থ, সাউথ, ওয়েস্ট-এর সঙ্গে তাহলে বলব-অনেক পিছিয়ে আছে। কারণ যদি দেখেন, দেখবেন, লোক কখন যায় ঘুরতে যখন তার হাতে অনেক টাকা চলে আসে। টাকা যদি আপনার বেশি হয় উদ্বৃত্ত হয় তখন আপনি ঘোরার কথা ভাববেন। আমাদের বাঙালিরা ঘুরতে যায়। কিন্তু তাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এবার আপনি নর্থের দিকে তাকান। সেখানে নর্থে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ-এর মতো রাজ্যের সাপোর্ট আছে তা ওটা নিয়ে ওরা অনেক এগিয়ে যেতে পারছে। প্লাস ক্যাপিটাল অফ ইন্ডিয়া – সেখানে বিদেশি অনেক আসে। ইন্ডিয়াতে কোথায় যাবেন- দিল্লি যাবে্ন, রাজস্থান যাবেন- এটা একটু পেটেন্ট করা আছে। তা আমাদের কলকাতায় একটা বেসড আছে, লোক যদি আসে তখন জানা যাবে। কিন্তু সেটা একটু প্রচার করা দরকার।

এসপিটি: এই জায়গায় আমার একটা বিষয় খুব কৌতূহল হয় যে আপনি বলছেন না নর্থ ইন্ডিয়ায়- হরিয়ানা, জম্মু, পাঞ্জাব, হিমাচল বলুন এসব রাজ্যে পর্যটনের প্রসার অনেক বেড়েছে, এইবার এখানে নর্থ-ইস্টের রাজ্যগুলিতে পর্যটনের পরিকাঠামো সেভাবে উন্নতি হয়নি। আপনারা এ ব্যাপারে কিছু কি ভেবেছেন?

অনিল পাঞ্জাবি: এখানে মেজর প্রবলেম হল এখানে ‘ফ্লো অফ ট্র্যাফিক’। যদি আমি এখানে একটা রিসর্ট বানাই আমার সেই রিসর্টে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লোক যদি এসে না থাকে সেটা তো আমার কাছে লাভদায়ক হয়ে ওঠে না। আগে বিজনেস দরকার। বিজনেস যদি না আসে তো চালাতে পারবে না। রাস্তা ঠিক নেই। বিজনেস নেই তাই খরচাও হচ্ছে না। ক্যাফেটেরিয়া নেই, রাস্তায় ভালো রেস্টুরেন্ট নেই। যে বাইরে থেকে আসবে তার সব রকমের খাবার দরকার। লোকাল খাবার তার হবে না। সেটা মাথায় রাখতে হবে।

এসপিটি: হিমাচল প্রদেশ কিংবা উত্তরাখণ্ডে যেমন প্রতি পয়েন্টে পয়েন্টে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এই জায়গায় এইসব রাজ্যের সরকার কেন পিছিয়ে আছে? আপনারা কি কথা বলেছেন এসব রাজ্যের সরকারের সঙ্গে?

অনিল পাঞ্জাবি: ট্যুরিজমের জন্য আগের চেয়ে তারা এখন অনেক বেশি ভাবছে। এখন অনেক বেশি ইমপ্রুভ হয়েছে। কিন্তু আরও কাজ করতে হবে। মেইন কাজ হল গরমেন্টকে পিপিটি মডেল প্রয়োগ করতে হবে। পিপিটি অর্থাৎ ‘পাবলিক প্রাভেট ট্যুরিজম’- পাবলিক প্রাইভেট মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমি রিসেন্ট ভুটানে গেছিলাম, সেখানে দেখেছি যে অ্যাসোসিয়েশন, ট্রাভেল এজেন্ট, গরমেন্ট একটা সেম ডায়াসে বসে কাজ করছে। প্ল্যানিং করছে, ভিশন করছে। সেখানে গরমেন্ট একটু সহযোগিতা করছে। এখন যদি গরমেন্ট নিজে থেকে সবটা করতে যায় তাহলে কিন্তু হবে না।

এসপিটি: এটাই তাহলে দাঁড়াচ্ছে যে ট্রাভেল এজেন্ট, পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সংস্থা, সরকার সকলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা কমিটি গড়তে হবে। তবেই এর প্রকৃত সমস্যার সমাধান সম্ভব।

অনিল পাঞ্জাবি: আমি এখান থেকে গিয়েছিলাম হংকং। সেখানে ম্যাকাও বলে একটি জায়গা আছে। হোটেলে চেকিং করেছে, ঘুরতে যাচ্ছি- ভাবলাম, একটু দেখে আসি মার্কেট। বাইরে গিয়ে একজন চাইনিজ লোককে বলেছি ইংলিশে যে আমি ওখানে যাব। সে বুঝতেই পারছে না ইংরাজি ভাষা- একটা-দুটো, তিনটে ট্যাক্সি কেউ বুঝতেই পারছে না ইংরাজি ভাষা। কি করি! আবার রিশেপশনে ফিরে এলাম। বলল- কি, বুঝতে পারছে না ইংরাজিতে কথা? আমাকে একটা ছোট কার্ড এগিয়ে দিল। সেখানে ইংলিশে লেখা আছে- আই ওয়ান্ট গো টু লোকাল মার্কেট। লেখা আছে -আই ওয়ান্ট গো টু হোটেল। তা চাইনিজেও লেখা আছে এগুলি। আমি চাইনিজে লেখার জায়গায় দেখে টিক করেছি। এবার ট্যাক্সিওয়ালাকে দেখাই। এবার ও আমাকে নিয়ে গিয়েছে। আবার ফেরার সময় একই পদ্ধতি অবলম্বন করে হোটেলে ফিরে আসি। তা হলে এটাই দাঁড়াল আমাকে সবার কথা ভাবতে হবে। সব ভাষাভাষির কথা ভেবে আমাকে এসব দিক মাথায় রেখে এগোতে হবে। যদি আমাকে এখানে ট্যুরিজম করতে হয় তাহলে প্রথমে যে ট্যাক্সিওয়ালা আছে তাদের কথা ভাবতে হবে। তাদের একটা ড্রেস কোড করতে হবে। তারা যাতে পর্যটকের কথা বুঝতে পারে সেই ব্যবস্থা আমাকে করতে হবে। প্রেজেন্টেবল থাকবে। কিভাবে আমাকে ওয়েলকাম করবে সেটা তাদের শেখাতে হবে।ওখান থেকে যদি তাজবেঙ্গলে নিয়ে আসে রাস্তায় ভাল কথা বলে তাহলে আপনি তার প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। তখন সেই মানুষটিই কিন্তু বলবেন যে কাল ফ্রি আছে আমাকে একটু ক্যালকাটা ঘুরিয়ে দাও। এটাই হল মূল বিষয়।

আমাকে গরমেন্ট এক-দু’বার বলেছে আপনি করুন, আপনি দেখুন। আমাকে ট্যাক্সিওয়ালাকে প্রশিক্ষন দিতে হবে। আমার যেহেতু ট্রাভেল করি, আমরা জানি, কিভাবে ট্যুরিস্টদের অ্যাট্রাক্ট করা যায়। এগুলো আমরা জানি। গরমেন্ট সাহায্য করছে।

এসপিটি: প্ল্যানিং-এ সমস্যা আছে…

অনিল পাঞ্জাবি: গরমেন্ট বসে কি সব করতে পারবে?

এসপিটি: গরমেন্ট-এর একার পক্ষে ট্যুরিজমের প্রসার বাড়ানো সম্ভব নয়…

অনিল পাঞ্জাবি: গরমেন্ট অনেক সেমিনার করেছে। বসে কথা বলেছে। সময় মতো ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী। আমি বসে ওখানে হাত গুটিয়ে থাকব, ছবি তুলব- এতে কাজ কিছুই হবে না। আমাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে আমার ট্যুরিস্ট দরকার।

এসপিটি:এই যে কয়েক মাস আগে ঝাড়গ্রামে কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন পর্যটনমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গে গজলডোবাকেও পর্যটনের উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। কিন্তু পর্যটনের উপযুক্ত করলেই তো হবে না, সেখানে পরিকাঠামোর দিকেও তো নজর দিতে হবে। তা না হলে পর্যটকরা কিসের ভরসায় সেখানে যাবেন?এগুলো নিয়ে তো ভাবা দরকার।।

অনিল পাঞ্জাবি: এসব অনেক কাজ করতে হবে। আচ্ছা যদি ‘অটোমেটিক ট্যুরিস্ট ল্যান্ড’ করা হয় তাহলে সবার লাভ হবে। খরচা করবে ঘুরবে-ফিরবে লাভ হবে।

এসপিটি: অটোমেটিক ট্যুরিস্ট ল্যান্ড কি?

অনিল পাঞ্জাবি: আমি এটাই বলতে চাইছি যে আমি যদি ট্যুরিস্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যাট্রাক্ট করি তাহলে রাজ্যের রেভেনিউ কত আসছে? প্রত্যেক ট্যুরিস্ট টাকা নিয়ে আসে। খরচা করবে, খাবে, কিনবে। এই টাকা তো রাজ্যেই যাবে। এর জন্য গরমেন্টকে আরও বেশি করে করে যুক্ত হতে হবে পর্যটনের সঙ্গে।বাংলাকে এখন আয় করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন আছে। কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে এগুলিকে প্রাইভেট করতে হবে। বেসরকারি করতে হবে। আমি কনট্র্যাক্ট দিয়ে দিচ্ছি, তুমি করো।

এসপিটি: শুধু মন্ত্রী আর সরকারি আধিকারিকদের উপর ছেড়ে দিয়ে রাজ্যে ট্যুরিজমের প্রসার বাড়ানো সম্ভব হতে পারে না…

অনিল পাঞ্জাবি: পার্ক স্ট্রিট কর্ণারে একটা জায়গা আছে। ব্রাত্য বসু তখন ছিলেন পর্যটনমন্ত্রী। খুব ভাল মানুষ।ওনাকে আমি একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম যে ওখানে “মে আই হেল্প ইউ” একটা কাউন্টার লাগাচ্ছি। সেখানে আমার লোক বসবে। যে কলকাতায় আসবে পার্ক স্ট্রিট আসবেই আসবে। সেখানে ক্যালকাটা হাওড়া ব্রিজ রাখব, ট্রাম রাখব, রিক্সা রাখব, ম্যাপ রাখব। মানুষ আসবে । দেখবে। এটা প্রমোশন অফ সিটি। এখানে সব ভাল আছে। কিন্তু সেই দায়বদ্ধতাটাই নেই। আজকের টাইমে লোক আপনার কাছে আসে আসে না। আপনাকে তাদের কাছে যেতে হয়।

পার্ক স্ট্রিট ফেস্টিভ্যাল হয়। ট্যুরিজমের একটা কাউন্টার লাগে। এক-দু’বছর আমাকে বলেছে আপনি ম্যানেজ করুন। আমি খুব দায়িত্বের সঙ্গে তা করেছি। আমি সেটা নিয়ে প্ল্যান করেছি। কোথায় যাবেন- টোয়েন্টি প্লেস অফ ওয়েস্টবেঙ্গল। লোক আসছে। দেখছে। আমরা লাকি ড্র করেছি। অ্যাট্রাক্ট করছি। কিছু গিফট দিচ্ছি। এরপর থেকে ওরা নিজেরাই করা শুরু করল। ওখানে একটা মেয়ে বসে আছে। আসছে একটা ফর্ম দিয়ে দিচ্ছে। টাইম দেখছে। হোয়াটসয়াপ করছে। ও তো চাকরি করছে। ওখানে বসছে না। এখানে বসার দায়িত্ব দিয়েছে।

এসপিটি: নর্থ-ইস্টে কোন রাজ্য সব চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করেছে?

অনিল পাঞ্জাবি: সিকিম। তাদের ভাল পরিকাঠামো আছে। সুযোগ আছে।

এসপিটি:সিকিম বোধ হয় অল ইন্ডিয়াতেও ভাল জায়গায় আছে…

অনিল পাঞ্জাবি: হ্যাঁ, গরমেন্ট একটু দেখছে।

এসপিটি: আর ফ্লাইটের সমস্যা কিভাবে মেটানো যাবে?

অনিল পাঞ্জাবি: আমার তো অনেক এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার সঙ্গে তো মিটিং হয়। ইউরোপিয়ান এয়ারলাইন্সের কথা হয়েছে।

এসপিটি:কলকাতা থেকে ডাইরেক্ট ইউরোপিয়ান এয়ারলাইন্সের কোনও ফ্লাইট নেই?

অনিল পাঞ্জাবি: একটাও নেই। একটা সময় ছিল সব এয়ারলাইন্স এখানে ছিল। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, কেএলএম, লুফথানসা।

এসপিটি: কত বছর হয়েছে এগুলি বন্ধ হয়ে গেছে?

অনিল পাঞ্জাবি: গত পাঁছ বছর হয়েছে বন্ধ হয়েছে। আজকে আমি এয়ারলাইন্সকে অ্যাপ্রোচ করছি। তারা বলছে, আপনারা কথা দিন যে আমাদের বিজনেস দেবেন, তাহলে কালই আমরা আসছি।আপনার এয়ারপোর্ট তো তৈরি আছে। আপনারা আমাদের বিজনেস ক্লাস প্যাসেঞ্জার দিন। আপনি জানেন মেট্রো সিটি যা আছে তারপরেও সেকেন্ড টায়ার মেট্রো হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালোর আছে, এমনকী থার্ড টায়ার মেট্রো পুণা আছে সেখান থেকেও ইউরোপিয়ান ফ্লাইট যাতায়াত করে। বিজনেস আছে তাই যাচ্ছে। আজকে আমি বলে নিয়ে আসছি। তারপর তারা চলে যাচ্ছে। দু’তিনবারে এরকম হয়েছে। এটা আমাদের রাজ্যের পক্ষে খারাপ। আজকে যদি বম্বে-দিল্লিতে একটা ফ্লাইট ফেলে দেয় পরদিনই আর একটা ফ্লাইট ফুল হয়ে যাবে। ওখানে বিজনেস পাবে।

এসপিটি: এখানে সেটা নেই।।

অনিল পাঞ্জাবি: একটু যদি বিজনেস নর্থ-ইস্ট থেকে আসে আগে এখানে আটটা আসত দু’টো দিল্লি চলে যেত। আজকে উলটো হয়ে যাচ্ছে- দু’টো এখানে আসছে, আটটা ওখানে চলে যাচ্ছে।এমনকি ভিসা, এমব্যাসি অফিস সব ওখানে আছে। ওখানে ভিসা করে ওখান থেকেই চলে যাচ্ছে।

এসপিটি: আপনি বলুন তো, এই সমস্যা কি গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে মোকাবিলা করতে হচ্ছে?

অনিল পাঞ্জাবি: আগে থেকেই এই সমস্যা ছিল। ১০-১২ শতাংশ। কিন্তু গত পাঁচ বছরে অনেক নেমে গেছে। হ্যাঁ, অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু জায়গায় জায়গায় একটু মনোনিবেশ কর‍্তে হবে। আগে আপনাকে বসে প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কোন সেক্টর চলবে, কোনটা বিক্রি করতে পারব। ওখানে বসে দেখতে হবে যে মানুষের চাহিদা কি আছে! আমি তো জানি পাবলিক কি চাইছে, আমি তো কাস্টমারদের সঙ্গে ডিল করি, আমি জানি তারা কি চাইছে। কত লোক ঘুরতে যায়। সিজনে যাবেন।কিন্তু আগে বিজনেস তো দরকার।

এসপিটি: এখান থেকে অনেকেই ইউরোপ ট্যুরে যাচ্ছে, তারা তো সবাই এখন দিল্লি হয়ে যাচ্ছে…

অনিল পাঞ্জাবি:  হ্যাঁ, ভালো ফ্লাইট আছে, ভালো ফেয়ার পাচ্ছে। অনেক বেশি কম্পিটিশন আছে। এখানে সব কিছু লিমিটেড। এটাই হল সমস্যা। এজন্য গরমেন্টকে ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। একটা ফ্লাইট আমি নিয়ে আসছি। সবাই তো শুধু গলফ সেক্টরে যাচ্ছে না।দুবাই থেকে লন্ডন যাচ্ছে। এখান থেকে লন্ডন যাবে। সেটা তো হতে পারে। আজকে এয়ার ইন্ডিয়া অপারেট করছে- কলকাতা-দিল্লি-লন্ডন। কারণ সে জানে কলকাতায় অত প্যাসেঞ্জার নেই যে এখান থেকেই সরাসরি লন্ডন উড়ে যেতে পারে। এখান থেকে ৫০-৬০ জন নিয়ে গেছে তারপর দিল্লি থেকে ১০০জন প্যাসেঞ্জার নিয়ে লন্ডন উড়ে গেল। ওর ব্যবসা ও চালিয়ে নিচ্ছে।

এসপিটি: কিন্তু কলকাতার ব্যবসা তো ক্ষতি হচ্ছে?

অনিল পাঞ্জাবি: আমার কেন ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট নেই। কেন আমার প্যাসেঞ্জার ভায়া দিল্লি, বম্বে হয়ে যাবে। কেন সব কিছু ওখানে করবে? একজন সিনিয়র সিটিজেন যদি ট্রাভেল করে তাঁর কত ক্ষতি, কত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।সরাসরি গেলে কত সহজ হয়।

এসপিটি: এ সম্পর্কে আপনারা কি কোনও প্রপোজাল দিয়েছেন গরমেন্টকে?

অনিল পাঞ্জাবি: আমরা ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে দিয়েছি। অনেকবার আমার কনভেনশন বাইরে হয়। তুর্কি গিয়েছি। ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। ট্রাভেল ফেয়ারে হয়েছে। কথা হয়েছে। আমরা তৈরি আছি, আসুন। বলো, কি করা যায়। তারা বলছে-আমি ডেইলি ফ্লাইট নিয়ে আসব, ৩০০ আসনের। আপনি কত পূরণ করবেন?

এসপিটি: এই পাঁচ বছরে কতবার দিয়েছেন প্রপোজাল?

অনিল পাঞ্জাবি: দশ বার দিয়েছি। তারা ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে। নিজে সার্ভে করে বলছে- দেখব, করব।

এসপিটি: মানে টেবিলেই রয়ে গেছে!

অনিল পাঞ্জাবি: অনেক ট্রাই করেছি। কিন্তু সমস্যা রয়েই গেছে। সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হয়। যদি এক সঙ্গে ১০০জনের সঙ্গে কথা বলা হয় তবে কাজ কিছুই হবে না।

এসপিটি: সবই দেখছে, বলছে হবে কিন্তু কার্যকর হয়ে উঠছে না…

অনিল পাঞ্জাবি: দেখুন আমি একটা বিজনেস করছি। ও একটা বিজনেস করছে এয়ারলাইন্সের । দেখছে আমার সম্ভাবনা আসবে না যদি প্রথম বছরে ক্ষতির সম্মুখীন হই, দ্বিতীয় বছরেও একই রকম হয়, তৃতীয় বছরে গিয়ে আমি প্রফিট করি তবে আমি আসব না। বম্বেতে সেখানে প্রথম তিন মাসের পরই লাভের মুখ দেখা শুরু করে দিচ্ছে, তাহলে সেখানেই তারা বিজনেস শুরু করবে। এটাই হল পার্থক্য।

এসপিটি: ওরা এত কিছু দেখার পরেও কিছু করছে নে কেন?

অনিল পাঞ্জাবি: এখানে একটাই উপায় আছে পিপিটি মডেল কার্যকর করা। যদি আমাকে দায়িত্ব দেওয়া যায় যে আপনার একটা প্রজেক্ট আপনারা করুন, ফ্লাইট নিয়ে আসতে হবে। কি সাহায্য চাই। আমরা তখন প্রজেক্ট দেব, তা বাস্তবায়িত করে দেব। তাতে রাজ্যের লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না, এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। এই মুহূর্তে কলকাতায় কিছু বিজনেস লাভের মুখ দেখেছে। বিজনেস এসছে। কিন্তু তার জন্য একটু সাপোর্ট দরকার। সব দিক থেকে আমাকে এখানে বিজনেস নিয়ে আসতে হবে।

এসপিটি: মানে এটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, প্রাইভেট সেক্টরের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে…

অনিল পাঞ্জাবি: পাইভেট-পাবলিক মিলিয়ে যদি করতে পারে তবেই সম্ভাবনা আসবে। নর্থ-ইস্টে গেলে সেখানে কিছু নেই। তাকে ভিসার জন্য দিল্লিতে যেতে হবে। কিন্তু কলকাতায় কত কিছু আছে। কত ভাল আছে এখানে । কত সস্তা আছে এখানে।

এসপিটি:  জেলাগুলিতে কত সম্ভাবনাময় স্থান আছে…

অনিল পাঞ্জাবি:  একদমই। এখানের মানুষজন কত ভাল। এসব থাকে সত্ত্বেও কিছু করা যাচ্ছে না। ট্যুরিস্ট ঢুকবে, এটা শোনার পর তাদের মিস্টি কথা শুনে পর্যটকরা এমনিতেই খুশি হয়ে যাবে। এগুলিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সবাই তো সব কিছু করতে পারে না। ট্রাভেল এজেন্ট ট্রাভেল বিজনেসম্যানদের কাজে লাগাতে হবে।

Published on: জুন ১৪, ২০১৯ @ ১৫:৩২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 + 7 =