নবীন বরণে নয়া চমক- শিক্ষা দিল এই বিশ্ববিদ্যালয়

উত্তর সম্পাদকীয় প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

ডা. সৌমিত্র পন্ডিত

অধ্যাপক, পঃ বঃ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়

Published on: ডিসে ১৬, ২০১৮ @ ২০:০০

সত্যি অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার- ঘটনার সাক্ষী থাকতে পেরে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। একদিকে “প্রবীণ বিদায়””আর এক দিকে “নবীন বরণ” আবার একই দিনে। হ্যাঁ, স্মরণীয় হয়ে থাকবে ‘১৪ই ডিসেম্বর, ২০১৮’- এই দিনটি তার কয়েকটি কারণ রয়েছে। পত্রিকা সম্পাদক তথা আমার খুবই প্রিয় “সংবাদ প্রভাকর টাইমস”-এর সম্পাদক অনিরুদ্ধ পাল বলেছিলেন কিছু ভিন্ন ধরনের খবর দিতে যা গতানুগতিক-খুন-মারামারি বা নিম্নমানের সংবাদ যা সমাজের কোন ভাল কাজে তো আসেই না বরং সমাজের যারা শিক্ষিত শ্রেণি যারা খবর বোঝেন যারা সমাজকে ভালবাসেন তাদেরকে খবর বিমুখ করে তোলে- তাই চেষ্টা করছি কিছু ভিন্ন অথচ সরাসরি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ঘটনা এমন কিছু, যা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস তো বলেই দিলেন-যেখানে সারা রাজ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি শিক্ষাঙ্গনে কালিমালিপ্তের ঘটনা প্রতিনিয়ত আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে ঠিক একই সময়ের এক বিশ্ববিদ্যালয় তথা পশ্চিম্ববঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়-এ কোন ছাত্র আন্দোলনের প্রয়োজন হয় না।

ছাত্র-ছাত্রীরা কিছু ভাবার আগেই উপাচার্য্য তা ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দেন। স্মার্ট ক্লাসরুম, অত্যাধুনিক হস্টেল-সর্বাগ্রে শিক্ষার জন্য সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে সদা সচেষ্ট বিনিময়ে তিনি বলেন- ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনো, খেলাধুলো ও গানবাজনার সঙ্গে ভালবেসে শিক্ষা গ্রহণ শেষ করে মানুষ হয়ে উঠুক এই কামনা করি। তিনি জানান-পশ্চিমবঙ্গ নয় সারা ভারত কেন পৃথিবীতে খুবই কম বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এতো সু-শৃঙ্খলভাবে স্নাতক-স্নাতকোত্তর-ডিপ্লোমা কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীরা একসঙ্গে একই মঞ্চে “নবীন বরণ”-এর মতো অনুষ্ঠানে যোগদান করতে পারে। হ্যাঁ, আজ তথা ১৪ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দিনটিতে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী চিকিৎসা ও প্রাণী বিজ্ঞান অনুষদের পক্ষ থেকে “ছাত্র কল্যান সমিতি” উদ্যোগে নদিয়ার মোহনপুর ক্যাম্পাসের প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হল নবীন বরণ।রেনেসাঁ তথা “প্রথম দল”-এর পারফরম্যান্স।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজের পুরনো স্মৃতিতে সকলে একবার ডুব মারার সুযোগ পেয়ে কিছু কথা বলেই ফেললেন। অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণে, অধ্যাপক ডা. শুভাশীষ বটব্যাল বলেন- “আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের যে কর্মদক্ষতা তা চমকে দেওয়ার মতো দু-দিনের মধ্যে এত বড় একটা অনুষ্ঠান করা সম্ভব তা ছাত্র-ছাত্রীরা করে দেখিয়েছে। পড়াশুনোর সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলোতেও অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে জাতীয় স্তরেও ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।” আনন্দের বিষয় তিনি জানান- “এ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয় এনএসএস ‘জাতীয় সেবা দল’ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নথিভুক্ত হচ্ছে- যার প্রধান অংশে রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা পশ্চিমবঙ্গের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিয়েছে।” এই সাফল্যের জন্য তিনি সকলকে কৃতিত্ব দেন।

উপস্থিত অধ্যাপক অজিত কুমার সাহু বলেন-“এমন কাজ করতে হবে যাতে সবাই বুক ফুলিয়ে বলতে পারে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামোজ্জ্বল সম্ভব।” একই সঙ্গে উপস্থিত সকল ছাত্র-ছাত্রীকে আগামিদিনে পড়াশুনোর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মতো মানুষ হয়ে ওঠার আহ্বান জানান।

যেখানে আমরা দেখে থাকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এধরনের অনুষ্ঠানে কত কি হয়ে থাকে। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। অথচ রাজ্যের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে যা থেকে বলা যেতেই পারে আগামিদিনে এই বিশ্ববিদ্যালয় যদি মডেল হয়ে ওঠে তাহলে আশ্বর্য হবার কোনও কারণ থাকবে না। সেকথা নিজের বক্তব্যে তুলে ধরলেন ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মাসি-র ডিরেক্টর অধ্যাপক তপন কুমার মণ্ডল। তিনি বলেন-“নবাগত ডিগ্রি কোর্স-এর ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কোনও ভেদাভেদ না রেখে একই মঞ্চে একই সঙ্গে একই দিনে ডিভিপি তথা ডিপ্লোমা কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীদের যে নবীন বরণের আয়োজন করেছে তা সত্যিই প্রশংসা নয়- দৃষ্টান্ত স্থাপনেরও দাবি রাখে। এই মেলবন্ধন সারা দেশে আর কোথাও আছে কিনা তা জানা নেই। এই প্রফেশনের বিস্তার যে কতখানি তা তিনি সকলের সম্মুখে তুলে ধরেন।

একই সুর ধরা পড়ল আর এক অধ্যাপকের গলাতেও। অধ্যাপক শুভাশীষ বিশ্বাস বলেন-“এই মহান পেশাগত শিক্ষাতে যোগদান ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সত্যিই ‘আকাশ ছোঁয়ার’ মতো। কারণ, যে কোনও প্রফেশনে এখান থেকে যাওয়া যায়। একজন গবেষক থেকে গরিব মানুষের ভগবান ডাক্তারবাবু- যখনই মূল তথা বাবা-মা-পরিবারের মতো এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালবাসতে হবে তবেই আসবে সাফল্য তবেই ভবিষ্যতে মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে।”

এরপর উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসের গলাতে ধরা পড়ল ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি অগাধ ভালবাসা আর প্রতিষ্ঠানের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা। আর সেকথা মাথায় রেখে তিনি যা বললেন তা স্মরণে রাখতে পারলে ছাত্র-ছাত্রীদের আখেরে লাভই হবে আগামিদিনে। তিনি বলেন-“ছাত্র-ছাত্রীদের কোনও অভাব রাখা হবে না। তবে সেগুলি রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বও তাদের নিতে হবে। একই সঙ্গে ৭৫ শতাংশ ক্লাস না করলে পরীক্ষায় বসতে পারবে না কেউ তার জন্য কোনও অজুহাত মানা হবে না। শিক্ষক-শিক্ষিকারা যথেষ্ট সহযোগিতা করেন তাই তাদের কাছে যাওয়ার কথাও বলেন উপাচার্য্য। সেই সঙ্গে তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন- ‘সকলে যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ধরে রাখতে এগিয়ে আসে তবেই আমরা দেশের সেরা হয়ে উঠতে পারব।”

Published on: ডিসে ১৬, ২০১৮ @ ২০:০০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

76 − 75 =