দীপাবলীর রাতে বিন্দোলে ষোড়শীদেবীর আরাধনায় বসেন মাতৃসাধক শিশির কুমার শর্মা, স্বপ্নাদেশে বদলায় মায়ের শাড়ি ও গায়ের রং

Main দেশ ধর্ম ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ১৩, ২০২০ @ ২২:০৪

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজঃ বিন্দোল। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত একটি গ্রাম। দীপাবলীর রাতে সারা দেশের একাধিক শক্তিপীঠের মতো এখানেও হয় শক্তির আরাধনা। চিরাচরিত নিষ্ঠা সহকারে মাতৃ আরাধনায় বসেন তারাপীঠের সিদ্ধ পুরুষ মাতৃসাধক তন্ত্রগুরু মহারাজ শ্রী শিশির কুমার শর্মা। কালী পুজোর অমাবস্যার রাতে ষোড়শীদেবী রূপের পুজো করেন তিনি। পরম নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে এই পুজো হয়ে আসছে। সারা বিশ্বের মধ্যে যা এক অনন্যা কালী পুজো হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ বছর এই পুজো ৪৪ বছরে পড়েছে। তবে করোনা কালের জন্য এবার লোক সমাগম অনেক কম বলে জানা গেছে।

স্বপ্নাদেশেই স্থির হয় মায়ের গায়ের ও শাড়ির রঙ

স্বপ্নাদেশ অনুসারে প্রতিবছরই বদলায় ষোড়শী ভবতারিণী মায়ের শাড়ি ও গায়ের রঙ।পুজোর ভোগ খেতে আসে আজও শেয়ালের দল। সাতজন পুজারি সহযোগে ঁতারা মাতৃসাধক ও তন্ত্রগুরু শ্রী শিশির কুমার শর্মার মাতৃ আরাধনা দেখতে প্রসাদ গ্রহণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। তারাপীঠের ত্রিণয়নী আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সাধক শ্রী শিশির কুমার শর্মার বাসভবন বিন্দোল গ্রামে এই ষোড়শী কালীপুজো ২০২০ সালে ৪৪ বছরে পড়ল।মাতৃসাধক শ্রী শিশির কুমার শর্মা জানালেন- এবছর স্বপ্নাদেশ অনুসারে মায়ের গায়ের রঙ গোলাপী আর শাড়ি নীল।

শঙ্করক্ষ্যাপা বাবা সেদিন ভক্তদের বলেছিলেন, আজ মহাশ্মশানে এসেছে রাজসন্ন্যাসী

বামাক্ষ্যাপা বাবার উত্তরসূরী শ্রী শঙ্করক্ষ্যাপা বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় শ্রী শিশির কুমার শর্মার। সেই সময় মোক্ষকামী সন্ন্যাসী শঙ্করক্ষ্যাপা বাবা প্রথম দর্শনেই অনুভব করেন যে সৌম্যদর্শন যুবরাজ ভিখারির বেশে উপস্থিত হয়েছেন। শ্রী শঙ্করক্ষ্যাপা বাবা নিজের আসন থেকে উঠে পড়েন। ভক্তদের ডেকে শ্রী শিশির কুমার শর্মাকে দেখিয়ে বলেছিলেন- “ঁতারা নাম কর, ঁতারা নাম কর। পরে তিনি শব সাধনা করে শ্রীগুরুর আশীর্বাদে তন্ত্রসাধক ও শব সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন।

পথ প্রদর্শক হিসেবে এগিয়ে এসেছেন তারাপীঠের মাতৃসাধক

শঙ্করক্ষ্যাপা বাবার জন্মস্থান তারাপীঠের কবিচন্দ্রপুরে। শ্রী শিশির কুমার শর্মা তারাপীঠেই ত্রিণয়নী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি অমাবস্যা তিথিতে মহাসমারোহে মানব কল্যাণে মায়ের পুজোপাঠ-যজ্ঞাদি ক্রিয়াকর্ম করে চলেছেন এই আশ্রমে আজকের সময়ে অনিন্দ্যসুন্দরদেবকান্তি দর্শন সাধক পুরুষ শ্যাম ও শ্যামা মায়ের সাধক শ্রীশিশির কুমার শর্মা। অমন ধীর, স্থির, শান্ত, সংযত, নিষ্পৃহ, মাতৃতৃপ্তি ভক্ত খুব কমই চোখে পড়ে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মা মনসা, শ্যাম ও শ্যামা মায়ের মন্দিরেও অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন, তাদের কথা শুনছেন, তাদের নানা ক্রিয়াকর্মের নির্দেশ দিচ্ছেন। সেখানে তাদের কোনও ক্লান্তি নেই। সদাহাস্য, উজ্জ্বল, স্বর্ণমুখ দর্শনে ভক্তরা তৃপ্ত। আজকে যখন মানুষ আর্থিক-সামাজিক সংকটে দুর্দশাগ্রস্ত, রাজনৈতিক রোষানলে জর্জরিত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে চলেছে সামাজিক বিষ বাক্যে ধরাধাম কলুষিত তখন এগিয়ে এসেছেন দিশারী অর্থাৎ পথ প্রদর্শক হিসেবে। একমাত্র তন্ত্র সাধনায় যিনি সর্বশক্তিমান তিনি এগিয়ে এসে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, জরা-ব্যাধি সমস্ত কিছুতেই শান্তি আ স্বস্তি প্রদান করেছেন।

কে এই দেবী ষোড়শী

ষোড়শীদেবী দশ মহাবিদ্যার তৃতীয় রূপ। এই দশ মহাবিদ্যা হলেন- কালী, ঁতারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধুমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাকামিনী।মা ষোড়শী ত্রিপুরাসুন্দরী বা ললিত-ত্রিপুরাসুন্দরী মা ভবানী রূপেও খ্যাত। দেবী এখানে পূর্ণতা ও পূর্ণাঙ্গতার স্বরূপ। শ্রীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী।

কুঞ্জিকাতন্ত্রে বলা হয়েছে- সর্বদা শ্রী প্রদান করেন বলে এই বিদ্যাকে শ্রীবিদ্যা বলা হয়। আর মহাদেবী নির্গুণা বলে তাঁকে ষোড়শী বলা হয়। কালীকাপুরানে বলা হয়েছে-“দেবীর মণ্ডল ত্রিকোণ, ভূপুর ত্রিরেখ, মন্ত্র ত্র্যক্ষর, আবার তাঁর রূপও ত্রিবিধ। কুণ্ডলীশক্তি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর এই ত্রিদেবের সৃষ্টিতে ত্রিবিধা হন। সবই তিন তিন। তাই দেবীকে ত্রিপুরা বলা হয়।

কালীই ষোড়শী

এ সম্বন্ধে নারদ পঞ্চরাত্রে একটি অপূর্ব কাহিনি আছে। কাহিনিটি ঠিক এমন-

“একবার স্বর্গের অপ্সরারা কোইলাসে মহাদেবকে দর্শন করতে যান। সেইসময় মহাদেব তাদের সামনেই দেবীকে কালী কালী বলে ডেকে ওঠেন। এতে দেবী খুব লজ্জা পেয়ে যান এবং তিনি তখন মনে মনে স্থির করে ফেলেন যে কালী রূপ ত্যাগ করে গৌরীরূপ ধারন করবেন । এমনটা সঙ্কল্প করে দেবী কৈলাস থেকে অন্তর্হিত হয়ে যান। শিব তখন একা। এদিকে নারদ এসে দেবীর কথা জানতে চাইলে শিব বলেন – দেবী আমাকে ত্যাগ করে অন্তর্হিত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নারদ ধ্যানে বসে জানতে পারেন দেবী এখন সুমেরুর উত্তর দিকে অবস্থান করছেন। তিনি তখন দেবীর স্তব করে তাঁকে তুষ্ট করে তাঁর দর্শন লাভ করেন। দেবী তখন নারদের কাছে শিবের বিষয়ে খোঁজ নেন।নারদ বলেন- “মা, মহেশ্বর আবার বিবাহের উদ্যোগ নিচ্ছেন। আপনি শিগগিরি সেখানে গিয়ে এ বিয়ে আটকান। এ কথা শুনে দেবী তখন অপূর্ব সুন্দরী রূপ ধারণ করেন।ব্রহ্মাণ্ডে এমন রূপ কারও নেই। এতটা সুন্দর সেই রূপ। দেবী এই রপ নিয়েই শিবের নিকট উপস্থিত হন। সেখানে শিবের হৃদয়ে নিজের ছায়া দেখতে পেয়ে ভাবলেন এ অন্য কোনও দেবী। এই ভেবে তিনি শিবকে অকৃতজ্ঞ প্রতিজ্ঞাভঙ্গকারী এরকম আরও অনেক কিছু বলে তিরস্কার করতে থাকেন। শিব তখন দেবীকে শান্ত হতে অনুরোধ করেন। বলেন-দেবী, তুমি বৃথাই আমার উপর রাগ করছো। এতো তোমারই রূপ। দেবী তখন নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। তিনি শান্ত হলেন। দেবী এবার শিবের কাছে এর ছায়াতত্ত্ব জিজ্ঞাসা করলেন। শিব দেবীকে তখন বললেন- ত্রিভুবনে সর্বশ্রেষ্ঠ রূপ ধারণ করেছো বলে তুমি স্বর্গে-মর্ত্যে-পাতালে এবং অন্যত্র সুন্দরী-পঞ্চমী-শ্রী এবং ত্রিপুরাসুন্দরী নামে প্রসিদ্ধি লাভ করবে আর সর্বদা ষোড়শবর্ষীয়া বলে ষোড়শী বলে খ্যাত হবে।”

সেখানে আরও উল্লেখ আছে- ষোড়শী বা শ্রীবিদ্যার অপর নাম ললিতা। দেবীর উপাসকেরা বলেন- “ইনি ঘনীভূত ঘৃতের মতো রজস্তমঃসম্পর্কশূন্যশুদ্ধস্তত্ত্বঘনীভূত্মূর্তি। অন্যান্য শিব-শক্তিদের কাঁরও কাঁরও সাত্ত্বিক শ্রীর আছে বটে কিন্তু তাদের মধ্যে সত্ত্বগুণের প্রাধান্য থাকলেও অন্যগুণও অল্প পরিমাণে যুক্ত আছে। এদের কেউই শুদ্ধসত্ত্বমূর্তি নয়। এজন্য দেবী ললিতা বা ষোড়শীই সর্বোত্তমা পরব্রহ্মমূর্তি।”

Published on: নভে ১৩, ২০২০ @ ২২:০৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 2 =