তারাপীঠে আজ তারা মা আলোর দেবী কালী মা রূপে পূজিতা হন, কিভাবে হয় এই পুজো জানেন

Main দেশ ধর্ম রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: নভে ৬, ২০১৮ @ ১৮:০৪

এসপিটি নিউজ, তারাপীঠ, ৬ অক্টোবরঃ সারা ভারতে আজ মহা সমারোহে পালিত হচ্ছে দীপাবলী উসব। হবে কালী মায়ের পুজো। রাত দশটা নাগাদ অমাবস্যা লাগতেই মাতৃভক্তরা শক্তির আরাধনায় বিভোর হবেন। আজ এই আলোর উৎসবের দিনে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির আহ্বান করতেই সকলে আজ মাতৃ আরাধনায় মাতবেন। সারা দেশের সমস্ত শক্তিপীঠের মতো তারাপীঠঅ এর থেকে বাদ যাবে না। এখানেও তারা মা-কে আলোর দেবো রূপে পুজো করা হবে। তবে এই পুজোর ইতিহাস জানতে হলে আমাদের পিছনের দি্নগুলিতে চোখ রাখতেই হবে।

তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইত ‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’-এর বিশিষ্ট লেখক প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় এ বিষয়ে গবেষণামূলক তথ্য ঘঁটে জানান, “সালটা ১৭৭৫। সেইসময় নাটোরের রানী ভবানীর দত্তক পুত্র ছিলেন রামকৃষ্ণ রায়। তিনি তারাপীঠ মন্দিরের দেখভাল করতেন। সেইসময় তারাপীঠের সাধক ছিলেন দ্বিতীয় আনন্দনাথ। রামকৃষ্ণ রায় এই সাধকের সান্নিধ্যে আসেন। তিনি তারাপীঠে পঞ্চ পর্বে মায়ের পুজোর প্রচলন ঘটান। এই পঞ্চ পর্ব হল-অমাবস্যা, পূর্ণিমা, সংক্রান্তি, অষ্টমী ও চতুর্দশী। তারা  এবং মা কালী এক ও অভেদ তাই তারা মা-কে আলোর দেবী কালী মা কল্পনা করে পুজো করেন সেই থেকে তারাপীঠে মা তারা মা কালী রূপে দীপাবলীতে পূজিতা হয়ে থাকেন।”

কিভাবে হয় এদিনের পুজো? এ ব্যাপারে প্রবোধবাবু জানান, “এখন কালীপুজোর দিন মায়ের নিত্য নৈমিত্তিক পূজার্চনা ছাড়া শ্যামামা রূপে তারা মায়ের বিশেষ আরাধনা করা হয়। ভোর চারটেয় মায়ের স্নানাভিষেকের  পর তারা মাকে অষ্টধাতুর মুখাভরণ, মুণ্ডমালা, মুকুট, বিবিধ স্বর্ণ অলঙ্কার, শোলা ও ফুলের মালা দিয়ে শ্যামা মা রূপে ধ্যানময়ী মূর্তিতে সাজানো হয়। এরপর শুরু হয় মঙ্গলারতি, শুরু হয় মায়ের প্রথম পুজো ও নিবেদন করা হয় শীতল ভোগ। এরপর অপেক্ষমান ভক্তের দল মাকে শ্যামামা রূপে পুজো দেন। আর পাঁচটা দিনের মতো এদিনঅ যথাসময়ে তারামায়ের নিত্যপুজো ও মধ্যাহ্ন ভোগ সংঘটিত হয়। সন্ধ্যারতির পূর্বে মাকে শোলা ফুলের মালা ও স্বর্ণ অলঙ্কারে সাজিয়ে তোলা হয়। শুভক্ষণে পালাদার সেবাইত ও নাটোরের পুরোহিত মায়ের পুজোয় বসেন।পুজোর শেষে মায়ের আরতি শুরু হয়। আরতির পর মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। পোলাও, খিচুড়ি, ব্যঞ্জনাদি, মাছ, মাংস, ভাজা, মিষ্টি, পায়েস ইত্যাদি বিভিন্ন পদ সহযোগে মায়ের ভোগ নিবেদন করা হয়।”

মনে রাখতে হবে দীপাবলী রাত হল আলোর উৎসবের রাত। তাই তারাপীঠের মন্দির চওর থেকে শুরু করে এখানে যত দেবোত্তর স্থান সবেতেই প্রদীপের আলোর আলোকিত হয়ে ওঠে। বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “মন্দিরের বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে গ্রামের মেয়েরা আলোকবাতি প্রজ্জ্বলিত করেন। প্রদীপ ও মোমবাতিতে সেজে ওঠে মন্দির চত্বরের চন্দ্রচূড় শিবমন্দির, নারায়নমন্দির, বামদেবমন্দির, বাসুদেব মন্দির, বলি স্থল ও মায়ের জীবিতকুণ্ড পুষ্করিনীর ঘাটগুলি এবং কুণ্ডের জলে ভাসানো হয় প্রদীমালা। দিপাবলীর রাতে তারাপীঠ মহাশ্মশানের রূপ অপূর্ব। শিমুলতলা, পঞ্চমুণ্ডির আসন, বশিষ্ঠ বামদেবের সমাধি মন্দিরে হাজার হাজার মায়ের ভক্ত ও গ্রামবাসী মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন ও আলোক্মালায় সাজিয়ে তোলেন।”

প্রবোধবাবু বলেন, সমগ্র শ্মশান, সাধুদের কুটির, চিতাস্থল, দ্বারকা নদীর তীরে মায়ের উদ্দেশ্যে প্রদীপ, মোমবাতি,ধুপবাতি জ্বালিয়ে নদীর জলে ভাসিয়ে করজোড়ে প্রার্থনা করে-মা আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে চল, দূর করো আমাদের মনের গ্লানি, মালিন্য, আমাদের সংসারগুলিযেন সুখ শান্তি সমৃদ্ধি ও সুন্দর সহাবস্থানের শান্তি কুটির হিসেবে বিরাজ করে।” ফাইল ছবি  

Published on: নভে ৬, ২০১৮ @ ১৮:০৪

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

99 − = 95