জানুয়ারিতেই ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে হতে চলেছে সুন্দরবনের বাঘ গণনা, বিশ্বে বাঘের সংখ্যায় ভারত এখন পাঁচে

দেশ বন্যপ্রাণ বাংলাদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

Published on: জানু ১৬, ২০১৮ @ ০১:৩৪

এসপিটি নিউজ, সজনেখালি, ১৫ জানুয়ারিঃ চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হতে চলেছে বাঘ গণনার কাজ। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের পাশাপাশি বাঘ গণনার কজ চলবে ভারত-নেপাল-ভুটান লাগোয়া অভয়ারণ্য এলাকাতেও। তারই প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হল সোমবার থেকে সুন্দরবনের সজনেখালিতে।এই শিবির চলবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।ভারতের বন কর্তাদের পাশাপাশি আছেন বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের বনাধিকারিকরাও।এবার ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বাঘ গণনার ফলে গোটা সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যাটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা।

এদিন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প, জালা বন বিভাগের বনাধিকারিক, রেঞ্জার এবং বাংলাদেশের চারজন ডিএফও এবং ডবল্যু আই আই সদস্যরা প্রশিক্ষণ নেয়। প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার মহম্মদ মোদিনূল আহাসন, মহম্মদ মদুল হাসান, মহাবুব রহমান, বশিরুল অল মিনা। এছাড়াও ছিলেন ডবল্যু আই আই ড. কামার কুরেশি, রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা, এফ ডি নীলাঞ্জন মল্লিক, এ এফ ডি অনিন্দ্য গুহ ঠাকুরত, ডিএফও তৃপ্তি সাউ। এদিনের শিবির শেষে ৪২জন প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে সুধন্যখালি জঙ্গলে তথ্য সংগ্রহ করেন।

ডবল্যু আই আই ড. কামার কুরেশি জানান, তিনটি পর্যায়ে বাঘ গণনার কাজ হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে প্রায় ১৪১০টি উন্নত পর্যায়ের ক্যামেরা প্রত্যেকটি গ্রিটে একটি করে বসানো হবে। ভারতে গণনার কাজ চলবে মে মাস পর্যন্ত। তবে সুন্দরবনে এই কাজ চলবে অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত। কুরেশি আরও জানান, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনে বাঘ গণনার কাজ হবে। সেখানে গোটা সুন্দরবনের বাঘের ছবিটা উঠে আসবে। একই সঙ্গে নেপা-ভুটান সীমান্তে যে জঙ্গল আছে সেখানেও বাঘ গণনার কাজ করা হবে। এক পরিসংখ্যান দিয়ে কুরেশি বলেন, ২০১০ সালে ভারতে বাঘের সংখ্যা ছিল ১৭০৬টি।২০১৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২২৬টি। ৮৯, ১৬৪ কিলোমিটার জূড়ে বাঘের বসবাস।

রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন, তিন্দিনের এই প্রশিক্ষণ শিবির হয়ে গেলে আগামী ২৫-২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে যাবে বাঘ গণনার কাজ। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে সুন্দরবন আছে সেখানে বাঘের সংখ্যা এখন ১৯২টি। সুন্দরবনের খাড়িগুলিতেও চলবে সমীক্ষার কাজ।এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ডি এফ ও মহম্মদ মোদিনূল আহসান বলেন, ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুন্দরবন। তার মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যে পড়ে ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। ২০১৪-১৫ সালে বাংলাদেশের ম্যাংরোভ জঙ্গলে ক্যামেরা পেতে উঠে আসে ১০৬টি বাঘের সংখ্যা।তবে যৌথ উদ্যোগের এই গণ্নায় গোটা সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যাটা উঠে আসবে।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক বলেন সারা পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যায় ভারত এখন পাঁচ নম্বরে আছে।তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এ রাজ্যের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৮৬টি এবং বাংলাদেশের সুন্দরবনে সংখ্যাটা ১০৬টি। যা ক্যামেরার মাধ্যমে উঠে এসেছে।

১৮৭৮ সালে সুরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষিত হয় সুন্দরবন বনাঞ্চল। আর সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষিত হয় ১৯২৮ সালে। ১৯৭৩ সালে সারা ভারতে প্রথম ন’টি ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। ১৯৭৬সালে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ৩৬২,৩৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা সজনেখালি অভয়ারন্য হিসেবে আদেশনামা জারি হয়।১৯৮৪ সালে ১৩৩০.১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান ১৯৮৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

Published on: জানু ১৬, ২০১৮ @ ০১:৩৪

 


শেয়ার করুন