জননেত্রী থেকে দেশনেত্রী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ বিজেপির বিরুদ্ধে সারা দেশকে ব্রিগেডমুখী করে দেখালেন তিনি

উত্তর সম্পাদকীয় দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

অনিরুদ্ধ পাল

Published on: জানু ১৯, ২০১৯ @ ১০:৫৩

তিনি মানুষের কথা বলেন। তিনি অসহায়ের পাশে থাকেন। তিনি পারেন সারা দেশকে একত্রিত করতে।মুখে যা বলেন কাজেও তিনি তা প্রমাণ করে দেখান। সাধারণ মানুষের সাথে তিনি প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ শুধু নয় কথাও বলেন। তিনি হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো জননেত্রী আজ যিনি হয়ে উঠেছেন দেশনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একথা আজকের নয় বহুদিন থেকে চলে আসছে যে আজ বাংলা যা ভাবে কাল তা ভাবে সারা দেশ। কেন্দ্রের বিজেপি পরিচালিত এনডিএ সরকার যখন দেশের মানুষের কাছে নোটবন্দি কিংবা জিএসটি-র বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিল সেইসময় সারা দেশে সমস্ত হুঁশিয়ারি আর কেন্দ্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে সবার আগে সরব হয়েছিলেন এই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।দুই বছর আগেই তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন বিজেপি দূর হটো। বিজেপি ভারত ছাড়ো। ২০১৯ বিজেপি হবে ফিনিশ।

আজ সারা দেশ বুঝতে পেরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ঠিক। তিনি যা বলেছেন একেবারে ঠিক কথাই বলেছেন। আর তাই তো বিজেপি বিরোধী জোটকে একত্রিত করতে বারেবারেই কলকাতায় ছুটে আসতে দেখেছি কখনও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর কিংবা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, কখনওবা ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিন কখনওবা জম্মু ও কাশ্মীরের ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান ফারুক আবদুল্লাকে। বিজেপির বিরিদ্ধে তাঁর বিচারধারাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সর্বদা দেশের বর্ষীয়ান বিজেপি নেতারাও। যা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা কিংবা মুখ্যমন্ত্রীরা আদায় করে নিতে পারেননি। সেই অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছেন আমাদের সকলের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেশের বিজেপি বিরোধী জোট যখন মাঝেমধ্যেই ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে তখনই দেখা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে তাদেরকে একত্রিত করতে। কেউ মনে করেছে কংগ্রেসকে ছাড়াই জোট করতে হবে সেটা হবে এক ফেডারেল জোট। অর্থাৎ না বিজেপি না কংগ্রেস- এককথায় এই জোট হবে অ-কংগ্রেসি অ-বিজেপি জোট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেছেন- এইভাবে ভাবলে তা হবে বিজেপির অনুকূলে।এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে ভোটের আগেই আমরা বিজেপির কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে তাদের গোল করার সুযোগ করে দি। আর তাই তিনি হাল ধরেছেন শক্ত হাতে।

দেশের একমাত্র জননেত্রী হিসেবে তাই ব্রিগেড সমাবেশে সেই সমস্ত নেতৃত্বকে এক জোট করতে পেরেছেন যাদের অনেকেই চেয়েছিল অ-বিজেপি অ-কংগ্রেসি জোট হোক। তাই এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রাথমিকভাবে একটা বড় জয়। যা এই মুহূর্তে খুবই কঠিন কাজ ছিল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারেবারেই একটা কথা বলে এসেছেন যে আগামী লোকসভা ভোটে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে দেশের আঞ্চলিক দলগুলি। কিন্তু তাই বলে তিনি কখনই কংগ্রেস সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। এটাই তাঁর বিশেষত্ব। তিনি সকলকে নিয়েই এগোতে চান।হ্যাঁ, এটা হয়তো ঠিক যে নেতৃত্বের গুরুভার সব সময় তিনি নিজের কাঁধেই রাখতে চান। কারণ, তিনি ভালমতোই জানেন এই গুরুদায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা অনেকেরই নেই।এই দায়িত্ব নেওয়ার অনেক ঝক্কি সামলাতে হয়।মুখোমুখি হতে হয় কঠিন বিপদের। নিশানা হতে হয় দুর্বৃত্তদের। যেটা তিনি অনায়াসেই সামলাতে পারেন।

সারা দেশে এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমকক্ষ আর একজনও নেত্রী নেই যিনি গোটা দেশকে একত্রিত করার ক্ষমতা ধরেন। ভাবুন তো এই মানুষটি সবার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। এমনকী সেই কঠিন সময়ে কেন্দ্রের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে তাদের ডেরায় গিয়ে সভা করে আসার হিম্মত দেখাতে পারেছেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার তো শেষ পর্যন্ত প্রধানমত্রীর পায়ে গিয়ে পড়েছিলেন। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু সমানে বিরোধিতা করে চলেছেন। তাহলে কেন সারা দেশ তাঁকে দেশনেত্রী হিসেবে মানবেন না বলুন তো? এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফলতা। এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাস্তবতা। এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃঢ়তা। যা আজ সারা দেশ মাথা নিচু করে কুর্নিশ করছে। আর তাই বিজেপি বিরোধী সব দল আজ সমবেত হয়েছেন ব্রিগেডে দেশনেত্রী মমতার পাশে।

এদিনের সভার তাৎপর্য আরও বেশি এই কারণে- তা হল যে সমাজবাদী পার্ট ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসকে ছাড়াই উত্তরপ্রদেশে জোটবদ্ধ হয়েছেন সেই দুই দল যেমন এদিন হাজির হয়েছেন ঠিক তেমনই তাদের বিরোধী কংগ্রেস নেতারাও কিন্তু হাজির হয়ে মমতার হাত শক্ত করেছেন। এখানেই মমতার বড় সফলতা।

এখানেই শেষ নয় এই সভার গুরুত্ব এতটাই বেশি যে এখানে মমতা বন্দ্যোপধ্যায় এমন কয়েকজন নেতাকে হাজির করেছেন যাদের সঙ্গে বিজেপির যোগসূত্র আছে আজও। তাদের মধ্যে দুই প্রাক্তন এনডিএ মন্ত্রী অরুন শৌরি ও যশবন্ত সিনহা যেমন আছেন ঠিক তেমনই আছেন বিজেপির সাংসদ শ্ত্রুঘ্ন সিনহা। যিনি বিজেপির সাংসদ হয়েও মমতার মঞ্চে থেকে মোদির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন।এসব কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক অসাধ্য সাধন নয়? তাই এদিনের সভা আগামী লোকসভা ভোটের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।

Published on: জানু ১৯, ২০১৯ @ ১০:৫৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 3 = 7