সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক এমন ৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী

Main কোভিড-১৯ দেশ স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান
শেয়ার করুন

Published on: জুলা ১৬, ২০২১ @ ১৭:৪৪

এসপিটি নিউজ ডেস্ক:   প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, ওডিশা, মহারাষ্ট্র ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবধরনের সহযোগিতার জন্য মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। নিজ নিজ রাজ্যে কোভিড টিকাকরণ এবং সংক্রমণ প্রতিহত করতে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাঁরা সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। এছাড়াও, টিকাকরণের কৌশল নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সংক্রমণ ঠেকাতে সম্ভাব্য সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস

মুখ্যমন্ত্রীরা চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিকাঠামোর উন্নতিতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা করেন। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বাড়লে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়েও কথাবার্তা হয়েছে। বৈঠকে কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে রোগীরা যে সমস্যার সম্মুখীন হন, তার জন্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। সংক্রমণ ঠেকাতে সম্ভাব্য সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

মোট সংক্রমিতের ৮০ শতাংশের বেশি এই ৬টি রাজ্যে

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, জুলাই মাসে মোট সংক্রমিতের ৮০ শতাংশের বেশি এই ৬টি রাজ্যে বসবাস করেন। কয়েকটি রাজ্যে সংক্রমণের হারও যথেষ্ট বেশি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব দেশের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানান এবং যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে কোভিড সংক্রান্ত আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন। এছাড়াও তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে পর্যায়ক্রমে আনলকের ব্যবস্থা করতে হবে।

কেরল ও মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ উদ্বেগজনক

বৈঠকের শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃতীয় ঢেউ-এর বিষয়ে আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন। বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হওয়ার ইতিবাচক তথ্য দিলেও কয়েকটি রাজ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। তিনি জানান, গত সপ্তাহে ৮০ শতাংশ সংক্রমণ ও ৮৪ শতাংশ মৃত্যুর খবর এই ৬টি রাজ্য থেকেই এসেছে। প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, যেসব রাজ্যে দ্বিতীয় ঢেউ-এর সূত্রপাত হয়েছিল, সেখানে প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু, কেরল ও মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সকলেই উদ্বেগজনক।
প্রধানমন্ত্রী জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ-এর আগে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল বলে সকলকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, যেসব রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে তৃতীয় ঢেউ প্রতিহত করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানান

প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানান। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমণের হার বাড়লে করোনা ভাইরাসের অভিযোজনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এর ফলে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাড়বে, যা বিপজ্জনক। তাই, আমাদের নমুনা পরীক্ষা, সংক্রমিতদের শণাক্তকরণ, সংক্রমিতদের সংস্পর্শে যাঁরা আসবেন তাঁদের চিহ্নিতকরণ, চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং টিকাকরণের কৌশল নিতে হবে। মাইক্রো কন্টেনমেন্ট এলাকাগুলিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি, সেখানকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হবে।

মোদি রাজ্যগুলিতে নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন

মোদি রাজ্যগুলিতে নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন। যেসব অঞ্চলে সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে যথাযথ টিকাকরণের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কারণ, টিকাই হ’ল একমাত্র উপায়, যার সাহায্যে পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব। যেসব রাজ্যে আরটিপিসিআর-এর মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার হার বৃদ্ধি করেছে, তাদের উদ্যোগের তিনি প্রশংসা করেন।
মোদি রাজ্যগুলিকে পরিকাঠামোর ঘাটতি মেটাতে পরামর্শ দেন

আইসিইউ বেড ও নমুনা পরীক্ষার ক্ষমতা বৃদ্ধির মতো চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতিতে আর্থিক সাহায্যের কথা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে ২৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল মঞ্জুরের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলিকে প্রস্তাব দিয়েছেন, তারা এই অর্থের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিকাঠামোর মানোন্নয়ন ঘটাক।
মোদি রাজ্যগুলিকে পরিকাঠামোর ঘাটতি মেটাতে পরামর্শ দেন। বিশেষ করে, গ্রামগুলির জন্য এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলেন। তিনি তথ্য প্রযুক্তির পরিকাঠামো, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং কল সেন্টারের মানোন্নয়নের উপর জোর দেন। এর মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে নাগরিকরা সম্পদ ব্যবহার করতে পারবেন এবং রোগীরা সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন।

রাজ্যগুলিতে ৩৩২টি পিএসএ প্ল্যান্ট স্থাপনে সাহায্য করা হচ্ছে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজ্যগুলিতে যে ৩৩২টি পিএসএ প্ল্যান্ট স্থাপনে সাহায্য করা হচ্ছে, তার মধ্যে ৫৩টি প্ল্যান্টের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বাকি, প্ল্যান্টগুলির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে অনুরোধ জানান। শিশুদের এই সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সম্ভাব্য সবরকমের ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

লকডাউন পরবর্তী সময়ে পোস্ট করা ছবি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ

প্রধানমন্ত্রী পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, করোনা চলে যায়নি। লকডাউন পরবর্তী সময়ে যেসব ছবি পোস্ট করা হচ্ছে, তাতে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন রাজ্যে ভিড় এড়াতে এবং কোভিড আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলার উপর তিনি গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে, যেসব মহানগরে জনঘনত্ব বেশি, সেখানে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মোদি রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সাহায্য চেয়েছেন। সূত্রঃ প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরো

Published on: জুলা ১৬, ২০২১ @ ১৭:৪৪


শেয়ার করুন