কলকাতা পুলিশের এই অফিসাররা মাত্র সাতদিনেই করল গয়না ছিনতাইয়ের কিনারা, ধরল আসল অপরাধীদেরও

রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: আগ ৮, ২০১৮ @ ২২:৪৪

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৮ আগস্টঃ পুলিশের কাছে মানুষ শুধু নিরাপত্তাই চায়। আর তারা যদি সেটা দিতে পারে তাহলে তো আর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ইদানীংকালে কলকাতা পুলিশের একের পর এক সাফল্য সাধারণ মানুষের মনে ভরসা জাগাতে শুরু করেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে যে সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করা এক মহিলাকে ভন্ড তান্ত্রিকের হাত থেকে রক্ষা করেছিল কলকাতা পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখার বিশেষ তদন্তকারী দল আবার সেই সার্ভে পার্ক থানার পুলিশের তৎপরতায় এক গয়নার দোকানদার ছিনতাইয়ের ঘটনার মাত্র সাতদিনের মধ্যেই ফিরে পেলেন সমস্ত কিছু। সেইসঙ্গে পুলিশের জালে ধরা পড়ল তিন ছিনতাইবাজ। যে ভাবে পুলিশ এই তিন মূর্তিকে ধরেছে তার তারিফ না করে থাকা যাবে না।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩১শে জুলাই রাত দশটা-সোয়া দশটা নাগাদ সন্তোষপুর অ্যাভেনিউতে একটি গয়নার দোকানের মালিক তাঁর দোকান বন্ধ করছিলেন। সেইসময় তিনি পাশে একটি ব্যাগ রেখেছিলেন, যার মধ্যে নগদ এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন, কিছু সোনার গয়না ছিল-সেই গয়নার মধ্যে ছিল কমবেশি ৪৫গ্রাম ওজনের তিনটি চূড়, ৩৫গ্রাম ওজনের তিনটি বালা, একই ওজনের তিনটি গলার চেন এবং ২০ গ্রাম ওজনের ছোট ছোট কিছু গয়না।রাজেশবাবু যখন তাঁর দোকানের ঝাঁপ ফেলতে যাবেন সুযোগ বুঝে এক অচেনা লোক সেই ব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে বাইকে চেপে চম্পট দেয়।

এই ঘটনার পর সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ জানান রাজেশবাবু। পুলিশ ওই দোকান থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে যত সিসিটিভি আছে তার ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু হয়। ওই এলাকায় মোট ১৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।সমস্ত ফুটেজ দেখার পর তদন্তকারী অফিসাররা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হন যে অপরাধীরা আঁটঘাঁট বেঁধেই এই কাজ করেছে। আর এই কাজে একজন নয় তিনজন যুক্ত। তারা একটি মোটরসাইকেল ছাড়াও একটি বাইসাইকেলও ব্যবহার করেছে।এরপর শুরু হয় তদন্ত।

আর এই তদন্তের কাজে নেমে অপরাধীর ধরতে একটু নাকাল হতে হয় পুলিশকে। কারণ অপরাধীদের কেউই স্থানীয় নয়। তাই এক্ষেত্রে তারা নানাভাবে চেষ্টা চালায়। অবশেষে পুলিশ তাদের নিজস্ব সূত্র ধরে এক অপরাধীকে শনাক্ত করে। জানতে পারে তার বাড়ি মুকুন্দপুর এলাকায়। এরপর মুকুন্দপুরেরই বাসিন্দা পঞ্চসায়র থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারও সেই অপরাধীর পরিচয় নিশ্চিত করে। এরপর ওই দুষ্কৃতীর মোবাইল নম্বর জোগাড় করে তার ফোনে নজরদারি চালাতে থাকে পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশ বাকি দুই অপরাধীকেও শনাক্ত করে ফেলে। এবার তাদের ধরার জন্য প্রহর গুনতে থাকে।

দিন দুয়েক আগে পুলিশের কাছে খবর আসে রুবির কাছ থেকে ওই তিনজন দক্ষিণবঙ্গগামী বাসে উঠেছে। মুকুন্দপুরের কাছে আগে থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে বাসটিকে ধরার জন্য। বাসটি সেখানে পৌঁছতেই সাদা পোশাকের পুলিশ বাসটি থামায়। আর তারপরই তিন মূর্তিকে হাতে্নাতে পেয়ে যায় পুলিশ।জেরার মুখে তারা তিনজন এই ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। ছিনতাইয়ের পর দোকানদারের খোয়া যাওয়া মোবাইলের ট্র্যাক ধরে কোনও কিছু যাতে না করতে পারে সেজন্য তারা মোবাইলটিকে নষ্ট করে দেয়।এটা যে তাদের পূর্ব পরিকল্পিত ছিল সেটাও স্বীকার করে তিন অভিযূক্ত অপরাধী সুমন দে, বিষ্ণু সর্দার ও রঞ্জন দাস। তিনজনের বয়স কুড়ির কাছাকাছি।

যদিও অপরাধীরা ছিনতাইয়ের টাকা থেকে দুটি বাইক কেনে। কেনে দুটি দামি মোবাইলও। তবে গয়নাগুলি সমস্তটাই উদ্ধার করা গিয়েছে। দুটি বাইক আর দুটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে অবশিষ্ট ৩৮,৫০০টাকা।

তদন্তের কাজে সফল হওয়া পুলিশ অফিসার ও কনস্টেবলদের ছবি দেওয়া হল। তারা হলেন বাঁদিক থেকে সাব ইন্সপেক্টর টুমনাথ তেওয়ারি, দেবকুমার মণ্ডল, সার্জেন্ট অমিত রায়, সাব ইন্সপেক্টর শেখ সাবিরুদ্দিন, মিন্টু দাস, কনস্টেবল অংশুমান তেওয়ারি। বসে বাঁদিক থেকে সার্ভে পার্ক থানার ওসি ইন্সপেক্টর বিশ্বক মুখার্জি, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (৪) ইস্ট ডিভিশন মহম্মদ ফারুকুজ্জামান এবং ইন্সপেক্টর তপন নাথ।  ছবি-ফেসবুক   

Published on: আগ ৮, ২০১৮ @ ২২:৪৪ 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

62 − 57 =