কলকাতায় রাজস্থান সূচনা কেন্দ্রে 15 বছর বাদে রাজস্থান দিবস উদাযাপন, হিংলাজ দন রত্নু জানালেন কৃতজ্ঞতা

Main দেশ ভ্রমণ রাজ্য
শেয়ার করুন

পর্যটন বিশেশজ্ঞ রাজ সিংজি জানালেন তাঁর নয়া উদ্যোগের কথা, শিল্পপতি প্রহ্লাদ রায়জি গোয়েঙ্কা বললেন- কলকাতা হল মারোয়ারীদের রাজধানী
Published on: মার্চ ৩১, ২০২২ @ ২১:৫৪
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩১ মার্চ: দীর্ঘ ১৫ বছর বাদে কলকাতায় রাজস্থান সূচনা কেন্দ্রে মহাসমারোহে উদযাপিত হল রাজস্থান দিবস। গতকাল ৩০ মার্চ এই উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। এই অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য রাজস্থান সরকার এবং কলকাতায় মারোয়ারি সমাজের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন সহকারি জনসংযোগ আধিকারিক হিংলাজ দন রত্নু।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিদের সংবর্ধনা, হিংলাজ দন রত্নু দিলেন স্বাগত ভাষণ

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্যটন বিশেষজ্ঞ রাজ সিংজি, অধ্যক্ষতা করেন প্রহ্লাদ রায়জি গোয়েঙ্কা, প্রধান বক্তা ছিলেন প্রখর বিদ্বান সাহিত্যকার রতনজি শাহ। এছাড়াও বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএ, ফ্লোরিডা থেকে আসা এশিয়া ডেস্টিনেশন স্পেশালিস্ট ইভা কোভালস্কি। এঁদের সকলকে ফুলের তোড়া এবং শাল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সকলেই এই অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রাজস্থান সরকারের কলকাতার সূচনা এবং জনসম্পর্ক বিভাগের সহযোগী নির্দেশক হিংলাজ দন রত্নুকে অভিনন্দন জানান।

শুরুতে রাজস্থান সূচনা ও জনসম্পর্ক বিভাগ, কলকাতার সহযোগী নির্দেশক হিংলাজ দন রত্নু তাঁর সাহিত্যমনস্ক চিন্তাধারা নিয়ে সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যিক কানাইয়ালাল শেঠজির কবিতার লাইন উদ্ধৃতি করে অনুষ্ঠানকে এগিয়ে চলেন।কবিতার লাইন উদ্ধৃতি করে একে একে সম্মান জানান শিল্পপতি প্রহ্লাদ রায়জি গোয়েঙ্কা এবং পর্যটন বিশেশজ্ঞ রাজ সিংজিকে, সাহিত্যিক রতনজি শাহ এবং ইভা কোভালস্কিকে।

রাজস্থান দিবস উদযাপনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন সাহিত্যিক রতনজি শাহ

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা সাহিত্যিক রতনজি শাহ কলকাতায় রাজস্থান দিবস উদযাপনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। ‘‘বিগত ৫০ বছর ধরে কলকাতায় রাজস্থানিদের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন কলকাতায় রাজস্থানের সূচনা ও জনসম্পর্ক বিভাগ রাজস্থান ও বাংলার মধ্যে সেতু স্থাপন। রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মাথুর ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি এখানে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারপর থেকেই রাজস্থানীরা শিল্প স্থাপনের দিকে এগোতে থাকেন। এই ইতিহাস জানা দরকার। আমি খুশি যে আবার এই সূচনা কেন্দ্র সচল হল। এখানে বিগত ২৫ ধরে রাজস্থান দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। কিন্তু এই কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার মানে এই নয় যে এখানে রাজস্থান নেই। এখানে বসে থাকা শিল্পপতি প্রহ্লাদ রায়জি গোয়েঙ্কার মাথায় এই নিয়ে ভাবনা-চিন্তা ছিল। তিনি বিগত পাঁচ বছর কলকাতায় রাজস্থান দিবসের আয়োজন করেছেন। বিশেষ করে রত্নুজিকে ধন্যবাদ জানাই এই অফিস আবার নতুন করে খোলার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।’’

রাজস্থানের প্রশংসায় ইভা কোভালস্কি

ইউএসএ, ফ্লোরিডা থেকে আসা এশিয়া ডেস্টিনেশন স্পেশালিস্ট ইভা কোভালস্কি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারার জন্য আয়োজক রাজস্থান সূচনা ও জনসম্পর্ক বিভাগকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন- ‘‘এদিনের এমন সুন্দর অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে আমি অভিভূত। রাজস্থান সারা বিশ্বের মধ্যে অতি পরিচিত এক নাম। পর্যটন, কলা, সংস্কৃতি, ইতিহাসে সমৃদ্ধ এই স্থানকে আমি জানাই আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা।’’

জলপথে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন রাজ সিংজি-জানালেন বিস্তারিত

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পর্যটন বিশেশজ্ঞ রাজ সিংজি বলেন- “কলকাতায় রাজস্থান দিবসের অনুষ্ঠানে উপ্সথিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত খুশি। এজন্য এখানে উপস্থিত সকল রাজস্থানীদের জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন। আমাকে রত্নুজি ফোনে বলেছিলেন এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য। আমি তাঁর আমন্ত্রণ গ্রহণ করে এখানে এসেছি। আসলে আমি চাই কাজ। আমি পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত আছি। রাজস্থানে পর্যটনের অনেক কিছু আছে। তা সে প্রাসাদ হোক, দুর্গ হোক, জাতীয় উদ্যান হোক, পাহাড় কিংবা মরুভূমি – কী নেই সেখানে। মানুষ যাচ্ছে। দেখছে আর উপভোগও করছে।’’

“ কলকাতায় এসে যখন কিছু করার কথা ভাবলাম তখন স্থির করলাম গঙ্গায় কিছু একতা করবো। কিন্তু তা করতে গিয়ে অনেকে অনেক কথা বলতে লাগল। কেউ বলল- এখানে গঙ্গায় তো জল বেশি নেই। আপনি এখানে কিভাবে জাহাজ চালাবেন। কিভাবে হবে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে থাকলাম। এর মধ্যে দিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম এখানে রিভার ক্রুজ চালাবো। কলকাতা থেকে বারানসী। দূরত্ব ১৬০০ কিলোমিটার। সময় লাগবে জলপথে ১৬ দিন। সেই সময় আমাকে এমন প্রশ্নেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে – স্যার, আপনি রাজস্থানের মানুষ হয়ে গঙ্গায় জাহাজ চালাবেন- এটা কিভাবে সম্ভব!হ্যাঁ, আমি এটাও সম্ভব করেছি। আজ শুধু কলকাতা থেকে বারানসী নয়, ইতিমধ্যেই আমাদের দু’বছর নষ্ট হয়েছে, এবছর আজ আমরা যে নয়া জাহাজ তৈরি করছি তা নিয়ে আমরা বেনারস থেকে কলকাতা, ঢাকা, গুয়াহাটি হয়ে ডিব্রুগড় পর্যন্ত যাবে। ৫০ দিনের যাত্রা। ওম বিড়লাজি আমাকে বলেছেন যে চম্বলে কিছু হওয়া দরকার। আমি বাংলা কিংবা আসামে যা করছি তা আমার রাজস্থানেও করা দরকার। তাই আমাদের আগামী প্রজেক্ট হল –চম্বল। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে চম্বলে গংগার মতো জল নেই। কিন্তু আমরা বিশেশজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এটা করতে চাই। আমরা যারা রাজস্থানের মানুষ তাদের আমার নিজের রাজ্যের জন্য তা সে ব্যবসা হোক কিংবা পর্যটন করতেই পারি। আর আমাদের তা করতে হবে। রাজস্থানের জন্য আমাদের নতুন কিছু করতেই হবে।’’

হিংলাজ দন রত্নুর প্রশংসায় শিল্পপতি প্রহ্লাদ রায়জি গোয়েঙ্কা

অনুষ্ঠানের অধ্যক্ষের আসন অলংকৃত করা বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রহ্লাদ রায়জি গোয়েঙ্কা বক্তব্যের প্রথমেই রাজস্থানের জনসম্পর্ক বিভাগের কলকাতার সহযোগী নির্দেশক হিংলাজ দন রত্নুর প্রশংসায় সরব হন। বলেন- একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে রত্নুজি যেভাবে রাজস্থানের প্রসারে নিজের নির্দিষ্ট কাজের বাইরেও জন্মভূমির জন্য সারাদিন প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছেন তা সত্যিই অসাধারণ। এই মানুষটির সম্পর্কে যত বলব উনি তার চেয়েও অনেক উপরের। তাঁর ভাষা জ্ঞান, সংস্কৃতি, চেতনা এক অন্য স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। ধন্যবাদ রত্নুজি।’’

এখানে এক সভ্যতা ও সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার হয়েছে- প্রহ্লাদ গোয়েঙ্কা

আজকের দিনে এই অনুষ্ঠানে কিছু বলতে পারার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাতে রাজস্থান ফাউন্ডেশনের ধীরাজ শ্রীবাস্তব ও রত্নুজিকে। বলেন- ‘‘এখানে আজ শুধু একটা ভবন, আসবাবপত্র, অফিসের পুনরুদ্ধার হয়নি। এখানে এক সভ্যতা ও সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার হয়েছে। এখানে বসে আজ কত বড় বড় মানুষ তাদের কথা তুলে ধরছে। এটা সকলের জানা দরকার। এই অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতেই হবে। আমি আবারও রত্নুজিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আগামী ৩ তারিখ কলা মন্দিরে অনুষ্ঠিত রাজস্থান দিবসের অনুষ্ঠানে রাজস্থানী শিল্পীদের একেবারে বিনামূল্যে সুযোগ করে দিয়েছেন। আনুমানিক পাঁচ লক্ষ টাকা।জয়পুর তো রাজস্থানের রাজধানী। আর কলকাতা হল মারোয়ারীদের রাজধানী। গোটা বিশ্বের মারোয়ারিরা কলকাতার দিকে তাকিয়ে আছে। রাজস্থানে যা আছে সবই কলকাতা থেকে যায়। তাই কলকাতার সঙ্গে আজ রাজস্থানের গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।’’

Published on: মার্চ ৩১, ২০২২ @ ২১:৫৪


শেয়ার করুন