কচুয়ার ঘটনা দুঃখজনক, তবে বাবা লোকনাথের নির্দেশিত পথেই জন্মাষ্টমী উৎসব পালনে সফল চাকলা

উত্তর সম্পাদকীয় দেশ ধর্ম রাজ্য
শেয়ার করুন

মানুষের প্রাণ চলে যাবে আর কেউ বলবে- এসব দেখা তো প্রশাসনের কাজ, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

চাকলা শ্রীশ্রীলোকনাথ সেবাশ্রম সংঘ তো মন্দিরে আসার তিনটি পথ রেখেছিল।

কচুয়ায় তেমন ব্যবস্থা ছিল না। সেখানে ওই একটি পথেই এগোতে হয়েছে ভক্তদের।

 Published on: আগ ২৪, ২০১৯ @ ১৭:৩৩

লেখক- নবকুমার দাস

এসপিটিঃ এখনো কেঁদে চলেছেন মানুষগুলো। স্বজন হারানোর বিলাপ করে চলেছেন সমানে। তাদের অনেকেই আজ শ্মশান পথযাত্রী। আসুন আমরা সকলে মিলে আমাদের পরামারধ্য পরম পিতা বাবা লোকনাথের কাছে সেই মৃত মানুষগুলির আত্মার শান্তি কামনা করি। তারা যেখানেই থাকুক নে কেন তারা যেন ভালো থাকে, এই আমাদের প্রার্থনা।

কচুয়ায় এতগুলো মানুষের প্রাণ চলে গেল- আর কেউ এড়াল দায়

এখন দোষারোপ কিংবা দায় এড়িয়ে যাওয়ার সময় নয়। ঘটনার বাস্তবিকতাকে অস্বীকার করার বিষয় নয়। আমি সব ঠিক করেছি অন্যরা ভুল করেছে এসব বলার পরিস্থিতি নয়। মনে রাখতে হবে, যে ঘটনা ঘটে গিয়েছে তার মাশুল কিন্তু বাবা লোকনাথের ভক্ত আমাদের ভাই-বোনেরাই দিয়েছে। ভগবানের কাছে ভক্ত তো যাবেই। সেখানে পৌঁছবার জন্য হুড়োহুড়িও তো থাকবেই। এ আর নতুন কি! তাই বলে মানুষের প্রাণ চলে যাবে আর কেউ বলবে- এসব দেখা তো প্রশাসনের কাজ, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এটা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছি না। অন্তত আমি। দায় এড়িয়ে যাওয়াটা ঠিক কথা নয়। এতে বাবা লোকনাথকেই কার্যত অসম্মান করা হয়, তা কি তাদের জানা নেই?

প্রশাসন চাকলা ও কচুয়া উভয়কে নিয়ে বৈঠক করে

বাবা লোকনাথ বলে গেছেন- যে কোনও কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা জরুরী। সেখানে কোনও ফাঁক রাখা চলবে না।সেই নিয়ম না মেনে চললে অনর্থ হয়ে যাবে। তখন তার দায় এর ওর ঘাড়ে চাপিয়েও কোনও লাভ হবে না।সেটা যে কতটা সত্যি সেটা তো আমি টের পেলাম। কারণ, প্রশাসন তার কাজ তার মতো করেই করেছে। বারা্সতে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক আমাদের চাকলা ও অপর একটি কচুয়া মন্দিরের কমিটিকেও ডেকেছিলেন প্রশাসনিক বৈঠকে। সেখানে তিনি পরিষ্কারভাবেই বলে দিয়েছিলেন আপনাদের প্রাশনিক সমস্তরকমের সাহায্যই করা হবে।আপনারা প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা রেখে চলবেন।

কেউ মেনেছে নির্দেশ কেউ মানেনি

সেদিনের সেই বৈঠক থেকে তো আমরা চাকলা ও কচুয়া উভয় কমিটির কর্তাব্যক্তিরা  প্রশাসনিক আশ্বাস পেয়ে চলে আসি। এর পর তো বাকিটা আমাদের স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বসে সমস্ত কিছু ঠিক করা হয়। চাকলা লোকনাথ সেবাশ্রম সংঘ তো প্রশাসনের নির্দেশ মেনেই সমস্ত রূপরেখা এমনভাবে তৈরি করে যাতে আগত পুন্যার্থীরা কোনোরকম অসুবিধার সম্মুখীন না হন। তবে, এটাও ঠিক যে, এত বড় কর্মকাণ্ডে পুরোটাই ত্রুটিহীন হবে সেটা আশা করাও ঠিক নয়। ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকবেই। দেখতে হবে যাতে বড় ধরনের কোনও বিপর্যয় যেন না ঘটে। সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের নৈতিক কর্তব্য। বারাসতের প্রশাসনিক বৈঠকের পর এসডিপিও বারাসত আমাকে জানিয়েছিলেন, পুলিশের সঙ্গে তারাও যেন কিছু অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষীর দেন। সেই মতো আমরা চাকলা লোকনাথ সেবাশ্রম সংঘের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা রক্ষীর ব্যবস্থা করেছিলাম যারা পুলিশের সঙ্গে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করে গেছে। যার ফলে আমাদের চাকলায় আগত পুন্যার্থীদের উপর নেমে আসেনি বড় ধরনের বিপর্যয়। আমরা মনে করি পরম পিতা ত্রিকালদর্শী বাবা লোকনাথের কৃপা ছিল বলেই আমরা আমাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে প্রশাসনিক সহযোগিতায় সম্পন্ন করতে সফল হয়েছি।বাবার নির্দেশিত পথেই জন্মাষ্ঠমী উৎসব সফল করতে পেরেছে চাকলা লোকমাথ সেবাশ্রম সংঘ।

উঠছে একাধিক প্রশ্ন, দায় এড়াবে কিভাবে

কচুয়া লোকনাথ কমিটির কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, আমরা সকলেই বাবার ভক্ত। আমাদের সকলের উপরেই বাবার কৃপাশীষ আছে।তবে বাবা কোনোদিন অনিয়ম বরদাস্ত করে না।আমাদের উচিত বাবার নির্দেশিত দেখানো পথেই চলা। দয়া করে এই ঘটনার দায় শুধুমাত্র প্রশাসনের উপরে চাপিয়ে দেবেন না। একবার ভেবে দেখেছেন কি, কিভাবে অতগুলো অস্থায়ী দোকানঘর পুকুরের ধার ঘেঁষে তৈরি হয়ে গেল।এগুলি কিভাবে কার মদতে হল?একবারও আপনাদের মনে হয়নি, ওইটুকু সরু রাস্তা দিয়ে এত মানুষ একসঙ্গে যেতে দেওয়াটা ঠিক হবে কিনা। সবই প্রশাসনের দোষ বলে চাপিয়ে দায় এড়িয়ে গেলে চলবে? আমরা চাকলা লোকনাথ সেবাশ্রম সংঘ তো মন্দিরে আসার তিনটি পথ রেখেছিলাম। পুজো দিয়ে বের হওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলাম। সেখানে যেমন পুলিশের লোক ছিল তেমনই আমাদের নিজস্ব রক্ষীও তো রেখেছিলাম। সবাই মিলেই তো আমরা সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন করতে পারলাম।কচুয়ায় তেমটা সম্ভব হল না কেন?

শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলিকে জানাই সমবেদনা

একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তা সত্যিই দুঃখজনক।এজন্য আমরা চাকলা লোকনাথ সেবাশ্রম সংঘ সর্বতোভাবেই সমবেদনা জানাই সে সমস্ত শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলিকে যারা স্বজন হারা হয়েছেন। এখনও অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমাদের পরমারধ্য বাবা লোকনাথের কাছে প্রার্থনা জানাই, তারা যেন সুস্থ ভাবে ঘরে ফিরে আসতে পারে।অপরকে দোষ দেওয়া সোজা, কিন্তু দোষ স্বীকার করা সোজা নয়। দায় এড়িয়ে যাওয়া সহজ, কিন্তু সব কিছুর দায়ভার মাথায় তুলে নেওয়া অত সহজ নয়। আমরা বাবা লোকনাথের ভক্ত হয়ে তাঁর পুজো করি, তাঁর মাথায় জল ঢালি, তাঁর নামগান সব করি। কিন্তু যেটা করি না তা হল- তাঁর নির্দেশ আমরা মেনে চলি না। তা চললে এ ধরনের ঘটনাকে হয়তো এড়ানো সম্ভব হতো। কিন্তু যা হওয়ার তা যখন ঘটেই গেছে তা নিয়ে আর না ঘাটাঘাটি করা ভালো। তবে এই লেখা শেষ করার আগে বাবা লোকনাথের জীবনের একটা ঘটনার কথা না জানিয়ে পারছি না।

বাবার নির্দেশ না মানার ফল ভুগতে হয়েছিল জমিদারদের

1. বেশ কয়েকটি গ্রামের জমদাররা খাজনা আদায়ের জন্য গ্রামবাসীদের উপর জোরজুলুম শুরু করেছে। বাবার কাছে খবর এল। বাবা সেই জমিদারদের আশ্রমে ডেকে এনে নির্দেশ দিলেন- তোরা ওদের আর কিছু বলিস না, আমি ওদের সব খাজনা মিটিয়ে দেব। বাবার কথা জমিদারদের বিশ্বাস হল না। তারা ভাবল, বাবা এসব কী কথা বলছে, এতগুলো গ্রামের এত মানুষের খাজনা বাবা দেবেন কিভাবে। এত টাকা বাবার দেওয়ার সামর্থ্য আছে নাকি!

2. আশ্রম ছেড়ে বেড়িয়ে গিয়ে তারা বাবার কথা তোয়াক্কা না করে গ্রামবাসীদের উপর ফের জুলুমবাজি শুরু করে দিলেন। শুরু হয়ে গেল খণ্ডযুদ্ধ। দু’পক্ষের হাতাহাতিতে বহু লোক আহত হলেন। সেইসময় এক প্রভাবশালী লোক সেখানে দাঁড়ালে জমিদারদের লেঠেলরা সেখান থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। গ্রামের মানুষ এবার এক কাট্টা হয়ে জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। ভয় পেয়ে জমিদাররা ফের বাবার স্মরণাপন্ন হন। সেদিন বাবা তাদের বলেন- “শোন, তোরা আমি যা বলি তা মানিস না। তোরা কেবল নিজেদের মতোই চলিস। আমি কি করি?”

3. এ কথা শুনে তারা বুঝতে পারে বাবা তাদের কাজে অসন্তুষ্ট হয়েছে। তারা ফের বাবার কাছে কাতর অনুনয়-বিনয় জানিয়ে বলতে থাকে- আপনি আমাদের রক্ষা করুন। বাবা তখন জমদারদের ক্ষমা করে বলেন-“তোদের কিচ্ছু করতে হবে না। চুপ করে থাক। আসামীদের কেবল নিয়ে যাস আমার আশ্রম থেকে।কিন্তু এবারেও তারা আবারও সেই একই ভুল করে বসল। বাবার কথা অবিশ্বাস করল। তারা মনে করল, এও কি সম্ভব? কোথায় জেলখানা আদালত আর কোথায় বাবার আশ্রম। সুতরাং তারা চুপ করে বসে না থেকে মামলার পথে হাঁটল। দের তারা সেখানেও আরও বড় ধাক্কা খেল। সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি যিনি জমিদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে লেঠেলদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি মারা যান। এবার গ্রামবাসীরা জমিদারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করতে উদ্যত হলেন।

4. ভীত জমিদাররা আবারও বিপদে পড়ে বাবার কাছে ছুটে এলেন। এবার বাবা তাদের উপর আরও চটে গেলেন। তাদের ধমক দিয়ে বললেন- “ওরে, আমার আদেশ তোরা বারবার লঙ্ঘন করে ভীষন অপরাধ করেছিস। তোদের বিশ্বাস নেই। কিন্তু শুনে রাখ, আমার যা ইচ্ছা, আমি তাই করতে পারি। তোদের জন্য আমি কি করব?” চোখের জল ফেলে বাবার কাছে ক্ষমা চাইলেন অভাগা জমিদারের দল। বাবা ফের বললেন- তোদের এই অপরাধের জন্য তোদের একশো টাকা জরিমানা দিতে হবে এখানে, যদি রাজী হস তো বল। এক বাক্যে বাবার প্রস্তাব মেনে নেয় সেই জমিদাররা। নির্দিষ্ট দিনে বাবার আশ্রমে আসেন জমদাররা। বাবা বলেন- ” আমি সেখানে গিয়েছিলাম। ওরা আগামিকাল খালাস পাবে। তোরা কিন্তু সেখানে যাস নে। আসামীদের আমার আশ্রম থেকে নিয়ে যাস।”

5. বাবার মুখ দিয়ে বের হওয়া কথা কিন্তু মিলে গেছিল। মুক্ত হয়েছিল জমিদারদের আসামীরা। সেই আশ্রম থেকেই তাদের পাওয়া গেল।সুদূর সেই জেল হাজত থেকে কেমন করে যে ওরা আশ্রমে এসে পৌঁছল, আর এলোই বা কখন? শত ভাবনা ভেবেও অসম্ভব এই ঘটনার কথা কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না জমিদাররা। আর স্বয়ং শ্রীবাবাও এ ব্যাপারে ছিলেন একেবারে নীরব।

আসুন আমরা সকলে মিলে আরও একবার কচুয়ায় মৃত ঐ ভক্তদের আত্মার শান্তি কামনা করে বাবা লোকনাথের কাছে জানাই তাদের জন্য প্রার্থনা।

লেখক পরিচিতি- ভারতবর্ষ লোকনাথ ব্রহ্মচারী সেবক সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক

Published on: আগ ২৪, ২০১৯ @ ১৭:৩৩            


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 4 = 2