এ যেন এক দুর্ঘটনার প্রহর, এবার ট্রাকের চাকা থেঁতলে দিয়ে ছিনিয়ে নিল চারটি প্রাণ

রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল                ছবি-রামপ্রসাদ সাউ

Published on: ফেব্রু ৪, ২০১৮ @ ২৩:৩৩

এসপিটি নিউজ, শালবনী, ৪ জানুয়ারিঃ আবারও সেই কুয়াশা ঘেরা সকাল। আবারও এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হল ৩০জন যাত্রী। যাদের মধ্যে শেষ হয়ে গেল চারটি তরতাজা প্রাণ।দূরন্ত গতিতে ছূটে আসা এক বড় ট্রাক গুড়িয়ে দিল যাত্রীবোঝাই ট্রেকারটিকে। ট্রাকের চাকায় থেঁতলে চিরতরে শেষ হয়ে গেল কয়েকটি জীবন। গত এক মাসে এই নিয়ে রাজ্যে পরপর চারটি বড় মাপের দুর্ঘটনা ঘটে গেল। যা নিয়ে সবাই বলতে শুরু করেছে-রাজ্যে তো এখন দুর্ঘটনার প্রহর চলছে।

রবিবার সকাল ছ’টা।পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী থানার খড়িগেড়া এলাকার রাস্তায় তখন এক বিভৎস চেহারা নিয়েছে।রাস্তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের ক্ষতবিক্ষত দেহ।চাপচাপ রক্ত।কয়েকজন রাস্তার উপর ছিটকে পড়ে অকাতরে গোঙাচ্ছে। কারও আবার কোনও হুঁশই নেই। সকলেই যাচ্ছিলেন ট্রেকারে চেপে শালবনীতে ৬টা ২০ মিনিটের ট্রেন ধরতে।যে ট্রেকারটিতে ছিলেন প্রায় ৩০জন যাত্রী। পিড়াকাটা থেকে জয়পুর হয়ে যাত্রীবোঝাই ট্রেকারটি শালবনী স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল।

সকালে তখন ছিল ঘন কুয়াশা। ফলে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সকলেরই তখন ট্রেন ধরার তাড়া ছিল। ফলে ট্রেকার চালকও উর্দ্ধশ্বাসে ছুটছিল যাত্রীদের নিয়ে। কিন্তু সামনে যে তাদের জন্য মরনফাঁদ অপেক্ষা করে আছে সেটা জানা ছিল না চালক কিংবা যাত্রীদের কারও। খড়িগেড়ার কাছে আসতেই কয়েক সেকেন্ডের ব্যব্ধানে ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি। উল্টোদিক থেকে আসা এক বিরাট মাপের ট্রেকার এসে সোজা ধাক্কা মারল যাত্রীবোঝাই ট্রেকারটিকে। গুড়িয়ে দুমড়ে গেল। যাত্রীদের চিৎকার মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেল। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল চারজনের।

দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল এক বিভৎস ছবি। যা চোখে দেখা যায় না। ট্রাকের চাকায় কারও দেহ আটকে গেছে। কারো দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কারো মাথার ঘিলু বেরিয়ে এসেছে।আরও কত কিছু তা না বলাই ভাল। আহত ২১ জনের মধ্যে ১৬জনকে শালবনী হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। ৫জনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।এদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা সঙ্কটজনক।

মৃতদের মধ্যে একজন পিড়াকাটা ফাঁড়ির সিভিক ভলেন্টিয়ার, একজন আইসিডিএস কর্মী, একজন ছাত্র ও সম্ভাবনাময় ফুটবলার, একজন ছাত্রী।সিভিক ভল্যান্টিয়ার মহেশ্বর সোরেন (২৭)-এর বাড়ি শালবনীর বাগপিছলা গ্রামে।তিনি পিড়াকাটা ফাঁড়িতে সিভিক ভল্যান্টিয়ারের কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি বাগপিছলা রিলেমালা গাঁউতার সম্পয়াদক ছিলেন। রাজ্য সরকারের দেওয়া ক্লাবের অনুদান বাবদ চেক আনতে তিনি এদিন কলকাতা যাচ্ছিলেন। সেজন্য ৬টা ২০ মিনিটের ট্রেন ধরতে শালবনী স্টেশন যাচ্ছিলেন।

মৃত সবিতা মাহাত (৪৫) ও নবনীতা মাহাত (১৬)-র বাড়ি শালবনী থানার বনমালিপুর গ্রামে। সবিতা আইওসিডিএসের কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। রবিবার সকালে বাড়ির ক্ষেতের চাষের বেগুন তুলে বিক্রি করতে শালবনী আসছিলেন। ছাত্রী নবনীতা নিচুমঞ্জরী বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে পড়ত। প্রেইভেট টিউশন নিতে সে শাওলবনী আসছিল। মৃত উত্তম মাহাতর বাড়ি শালবনীর বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে। উত্তম ভাঙাবাঁধ হাইস্কুলের দশম শেণীতে পড়ত। প্রতিভাবান ফুটবলার হিসেবে তার সুখ্যাতি ছিল। প্রতি সপ্তাহের শ্নি ও রবিবার শালবনীর নেতাজি স্টেডিয়ামে ফুটবল প্রশিক্ষন নিতে আসতেন। অভিশপ্ত ট্রেকার তার স্বপ্ন চিরদিনের মতো নিভিয়ে দিল।

এদিন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় বিধাওয়ক শ্রীকান্ত মাহাত, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ সহ অনেকেই। মেদিনীপুর হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান মহকুমাশাসক দীননারায়ন ঘোষ, বিধায়ক দীনেন রায় সহ অনেকে।

এদিন মৃতদেহগুলি ময়না তদন্তের পর সেগুলিও সৎকারের জন্য তাদের পরিবারের হাতে ১০ হাজার টাকা করে তুলে দেয় প্রশাসন। গাড়ি করে মৃতদেহগুলে তাদের বাড়িতে পৌঁছেও দেওয়া হয়। ট্রাকের চালক পলাতক। অভিশপ্ত ট্রেকারের চালক হাসপাতালে ভর্তি। এই ঘটনার খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া বনমালীপুর, বৈকুণ্ঠপুর, বাগপিছলা গ্রামে।

Published on: ফেব্রু ৪, ২০১৮ @ ২৩:৩৩


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

39 − 36 =