এবারও মৎস্যজীবীর হাতে ঠেঙানি খেয়ে পালাল সুন্দরবনের দক্ষিণরায়, বাঘের মুখ থেকে ভাইকে ছিনিয়ে আনল দাদা

বাংলাদেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

Published on: জানু ২১, ২০১৮ @ ২৩:৪৭

এসপিটি নিউজ, গোসাবা, ২১ জানুয়ারিঃ মাত্র অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ফের শিকার ধরতে এসে চরম শিক্ষা পেল সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ফের মৎস্যজীবীদের কাছে ঠেঙানি খেয়ে ল্যাজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হল। আর সেই বাঘের মুখ থেকে ভাইকে রীতিমতো লড়াই করে ছিনিয়ে আনল দাদা। তারা দুজনেই গেছিলেন সুন্দরবনের নদীতে কাঁকড়া ধরতে।বাঘের সঙ্গে লড়াই করে তারা কম-বেশি জখম হলেও এখন তারা বিপদমুক্ত। ঘটনাটি ঘটে শনিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের ক্যানিং মহকুমার গোসাবা ব্লকের বড় গাজিখালি এলাকার খেলোখালি নদীতে কাঁকড়া ধরার সময়।

কয়েকদিন আগেই কাকদ্বীপের একটি নদীতে কাঁকড়া ধরার সময় একই রকমভাবে সুন্দরবনের দক্ষিণরায়ের বিষ নজরে পড়ছিলেন এক মৎস্যজীবী। সেদিন তাকেও মুখে করে নিয়ে যাচ্ছিল দক্ষিণরায়। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে এই নামেই ডাকে স্থানীয় মানুষ। সেদিনও বাঘটির সামনে সাহস করে এগিয়ে গেছিলেন মৎস্যজীবীরা। টানা ৪০ মিনিট লড়াই করে সেদিনও তারা তাদের সঙ্গীকে বাঘের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলেন। তাদের হাতে ঠেঙানি খেয়ে বাঘটি পালাতে বাধ্য হয়েছিল।

এরপর গতকাল শনিবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল খেলোখালি নদীতে। জানা গেছে, তিনদিন আগে ছোট মোল্লাখালি এলাকার বাসিন্দা পেশায় মৎস্যজীবী দিবাকর সরকার ভাই দেবব্রত সরকারকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের খাঁড়িতে কাঁকড়া ধরতে গেছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় তারা খেলোখালি নদীর ধারে আসেন কাঁকড়া ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে।তখন সবে সন্ধে নামছে। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের একটি বৈশিষ্ট্য হল তারা গোধূলি লগ্নে অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্তে নদীর কাছে কিংবা খাঁড়ির ধারে আসে জল খেতে। এই সময়টা তাদের কাছে খুব প্রিয়। সেই সময় জলে সঙ্গে যদি বড় কিছু জুটে যায় তো কথাই নেই।

এদিকে ঠিক ঐ সময়ই দুই মৎস্যজীবী ভাই কাঁকড়া ধরার লোভে ঐ খেলোখালি নদীর ধারে জাল ফেলেছিলেন। সন্ধ্যার মুহূর্তে জায়গাটি বড়ই মনোরম হয়ে ওঠে। চারিদিকে জনপ্রাণীর কোলাহল থাকে না। থাকে পাখির কলরবও। নিঃঝুম হয়ে পড়ে এলাকা। জঙ্গল যেন থন শুধু অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে কখন আসবেন সুন্দরবনের রাজা দক্ষিণরায়। সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে গভীর জঙ্গলের প্রতিটি গাছ-পালা, পরিবেশ। কিন্তু দুই মৎস্যজীবী ভাইয়ের সেদিকে কোনও হুঁশই ছিল না। তাদের লক্ষ্য কত বেশি করে কাঁকড়া ধরে ঘরে ফিরবেন।

তারা যখন কাঁকড়া ধরার কাজে মশগুল ঠিক সেসময় অতর্কিতে পিছন দিক থেকে এসে দেবব্রত সরকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দক্ষিণরায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে দেবব্রতর হাত কামড়ে ধরে। এরপর পিঠে ও ঘাড়ে বসায় থাবা। তারপর টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় কাদায় পা আটকে নদীর জলে দেবব্রতকে মুখে নিয়েই পড়ে যায়। বাঁচার জন্য মুখ থেকে দেবব্রত ছিটকে পড়তেই দাদা দিবাকর নৌকার বৈঠা ও শিকল খুলে নিয়ে বাঘের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় মার। জখম ভাই দেবব্রতও সেই সময় ওই অবস্থায় দাদার সঙ্গে হাত মেলায়। দুই ভাইয়ের সঙ্গে অন্ধকারেই শুরু হয় বাঘে-মানুষে লড়াই। বাঘের হুঙ্কার আর দুই ভাইয়ের চিৎকারে জঙ্গলের নীরবতা ভেঙে খানখান হয়ে যায়। টানা ৪০ মিনিট লড়াই চলার পর দক্ষিণরায়ও রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়ে লেজ গুটিয়ে পালায়। জখম ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐ অবস্থায় নৌকায় চাপিয়ে দাদা দিবাকর নিয়ে আসে গোসাবা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখানেই শুরু হয় চিকিৎসা।প্রাথমিক চিকিৎসার পর দাদা দিবাকরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভাই এখনও চিকিৎসাধীন থাকলেও সে এখন বিপদমুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর নীলাঞ্জন মল্লিক জানিয়েছে, বাঘের আক্রমনে একজনের জখম হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে বিষয়টি।

এটা এমন এক সময় ঘটল যখন সুন্দরবনে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে শুরু হতে যাচ্ছে বাঘ গণনার কাজ। বর্তমানে গোটা সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১৯২টি। যার মধ্যে আমাদের ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় বাঘের সংখ্যা ৮৬টি। সেই দিক থেকে সাম্প্রতিককালে এভাবে বাঘের আক্রমনের ঘটনা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Published on: জানু ২১, ২০১৮ @ ২৩:৪৭

 

 

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 2 = 1