ইতিহাস গড়ল প.ব. প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়-অসাধ্য সাধন করে চলেছেন উপাচার্য্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস

Main দেশ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান রাজ্য
শেয়ার করুন

  • কর্মস্থলকে নিজের পরিবারের মতো ভালবাসতে শেখো।
  • মনে রাখবে-প্রতিষ্ঠানের অপমান মানে আমার অপমান।
  • প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু বলা মানে আমার মা-কে বলা।
  • এই অনুভূতি না থাকলে কোনওদিন বড় হতে পারবে না।
  • এই শিক্ষা আগে অর্জন করতে হবে।
  • আগে মানুষ হও-তার পর কাজ।

অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস, উপাচার্য্য, প.ব. প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়

Published on: ডিসে ১৫, ২০১৮ @ ১৯:২০

সংবাদদাতা-ডা. সৌমিত্র পন্ডিত

এসপিটি নিউজ, মোহনপুর(নদিয়া),১৫ ডিসেম্বরঃ একটা সময় ছিল যখন প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে খুব বেশি প্রচার ছিল না। কাজ তখনও হয়েছে এখনও হয়ে চলেছে। তবে তুলনায় গতি এসেছে। উন্নতি আরও বেশি হচ্ছে। অনেক নতুন নতুন কোর্স এখন চালু হচ্ছে আগে যা ছিলই না। এই কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। তারই ফল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ডিপ্লোমা ইন ভেটেরিনারি ফার্মাসি’ কোর্স। যা এখানকার প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে একপ্রকার ইতিহাস গড়েছে। যার প্রধান রূপকার বলা যেতেই পারে তাঁকে। তিন আর কেউ নন একের পর এক অসাধ্য সাধন করে চলা পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস।

পাশে আছেন প্রাণী চিকিৎসকরা

আজ ১২৫টি বছর ‘মিথ্যে নয়’ অঙ্কটা কষলে বুঝতে পারবেন- “বেঙ্গল ভেটেরিনারি কলেজ” আজ “পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়” নামে উন্নীত হয়েছে।কর্মব্যপ্তি বেড়েছে। ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা কম নয়। কিন্তু কেবল প্রচারের অভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে ঠিকঠাক না পৌঁছনোয় একজন প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞানের অধ্যাপক হয়েও কলম ধরতে বাধ্য হলাম। লোকে বলে “নিজের ঢাক পেটাতে” -কে না পারে।আমি বলি-বাংলার ৭০ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ যাদের সঙ্গে কেউ না থাকুক এই প্রাণী চিকিৎসক বা এই বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন সর্বদা থাকে-কারণ এরাই গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতির কাণ্ডারী। বর্তমানে কৃষিতে লাভের পরিমান ক্রমহ্রাসমান অপরদিকে জনসংখ্যার ক্রমান্নতি ভবিষ্যতে বিকল্প আয়ের পথ হিসেবে কেবল ‘প্রাণী পালন’ই অল্প সময়ে অধিক আয়ের পথ দেখাতে পারে। আর এই কাজ করার জন্য যে বিশ্ববিদ্যালয় সদা জাগ্রত প্রহরীর মতো কাজ করে চলেছে সেই মায়ের সন্তান হয়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে হয়েছে।

আজ বেশ ভাল লাগছে ১৪ই ডিসেম্বর ২০১৮ সালটি শুধু আমি নয় যে সকল ছাত্র-শিক্ষক-আধিকারিক আজকের দিনটিতে উপস্থিত থাকতে পারলেন তারা আরও একটা “ইতিহাসের সাক্ষী” হতে পারলেন। আর এই ইতিহাস রচয়িতা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস। ভাগ্যচক্রে উনি আমার প্রণম্য শিক্ষক- তারপর তাঁর সঙ্গে চাকরি-বর্তমানে তিনি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য। দীর্ঘ ১৮ বছর আমি তাঁকে দেখছি শিখছ আর অবাক হচ্ছি একজন মানুষ “কর্মস্থল” বা “বিশ্ববিদ্যালয়”কে কতটা ভালবাসতে পারলে এমন অসাধ্য সাধন করে দেখাতে পারেন। একটা জোঞ্জাল ভরা ক্যম্পাস যেভাবে সাজিয়ে তুলেছেন তা বলে বোঝানো যাবে না।

এও এক ইতিহাস-উঠল নতুন মুকুট

ইতিহাস-হ্যাঁ, এটা আমার কথা নয়, উপাচার্য্যের কথায়-“আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথায় আরও একটা মুকুট উঠলো।” “ডিপ্লোমা ইন ভেটেরিনারি ফার্মাসি”-র প্রথম ব্যাচ (২০১৬-২০১৮) অর্থাৎ উপাচার্য্যের কথায়- “২০১৬ সালের ৩রা অক্টোবর যে বীজ বপন হয়েছিল তা ১০ই ডিসেম্বর ২০১৮  সালে পরিণত গাছ হয়েছে-তাদের আজ “ডিপ্লোমা” ডিগ্রি দেওয়ার অনুষ্ঠান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হল বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনপুর ক্যম্পাসে গতকাল ১৪ই ডিসেম্বর। অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন প্রাণী চিকিৎসক ও প্রাণী বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অজিত সাহু, ডেপুটি রেজিস্টার ডা. সৌরভ চন্দ্র, কোর্স ডাইরেক্টর অধ্যাপক তপন কুমার মণ্ডল, ডিপার্ট্মেন্ট অফ ভেটেরিনারি ফার্মাকোলজি অ্যান্ড টক্সিকোলজি পূর্বে যে কর্সটি প্রাণীসম্পদ দফতরের অধীনে পড়ানো হত তা ২০১৬সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাতে নিয়ে আসেন “ডিপ্লোমা কোর্স” হিসেবে। বর্তমানে গ্রামীণ প্রাণী চি্কিৎসালয়গুলিতে “ফার্মাসিস্ট” নিয়োজিত রয়েছেন-আজ এই ছাত্র-ছাত্রীরা পাশ করে চাকরিযোগ্য হয়ে উঠল-এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম-ব্যাচ।

কোর্স ডাইরেক্টর তপন কুমার মণ্ডলের কথায়-“নানান সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে সহযোগিতা করছে তা প্রশংসনীয়।” বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণীচিকিৎসা ও প্রাণী বিজ্ঞান অনুষদের ১৯টি বিভাগের মধ্যে ১০টি বিভাগ প্রত্যক্ষভাবে এই কোর্সের সঙ্গে যুক্ত থেকে এবং শিক্ষক, কর্মচারীরা যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তা তিনি অকপটে স্বীকার করেন।আগামিদিনে এই কোর্সের রদবদল বা যাতে আরও ভাল করে শিক্ষনীয় করে তোলা যায় তার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যে মানুষটির জন্য আজ এই ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশংসাপত্র পেল এবং আগামিদিনে এদের নাম “নথিভুক্তকরণ” অর্থাৎ ফার্মাসি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া বা ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ফার্মাসি কাউন্সিল তৈরি করার জন্য মন্ত্রীকে চিঠি বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের পথ সুগম করে দিয়ে চলেছেন তিনি আর কেউ নন স্বয়ং উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস।”

অধ্যাপক মণ্ডল বলেন-“শিক্ষকরা যদি সহযোগিতার হাত না বাড়াতেন তাহলে এই ইতিহাস রচনা শুরু করা সম্ভব ছিল না-কারণ সম্পূর্ণ নতুন একটি কোর্সকে পূর্ণাঙ্গ রূপদান করাটা সত্যিই কষ্টকর ছিল।”

এই কোর্সের সঙ্গে জড়িত শিক্ষিকা সুনীতা মণ্ডল বলেন-“প্রথম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীরা শুধু পড়াশুনো নয় শিক্ষানুবর্তিতায় অনেক এগিয়ে। আগামিদিনে ওরা যেখানে যাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে। ওদের সাফল্য আসুক প্রতিষ্ঠিত হোক।” বিদ্যায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে আজকের দিনে তাদের ভারাক্রান্ত মনের অভিব্যাক্তি প্রকাশ পায়। সব শেষে তাদের হাতে সার্টিফিকেট ও মার্কশিট প্রদান করেন উপাচার্য্য।

আগামিদিনে এটি ডিগ্রি কোর্স হওয়ার সম্ভাবনা

উপাচার্য্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাস বলেন-আজকের দিনে “ইতিহাসের সাক্ষী” থাকতে পেরে নিজেকে খুব গর্বিত মনে হচ্ছে।তিনি বলেন-“সরকারের পক্ষ থেকে অনেকবার বলার পর এই কোর্সটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হয়। আগামিদিনে এটি ডিগ্রি কোর্স হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।নতুন হস্টেল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথকভাবে স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই তা অনুমোদন হয়ে যাবে। ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি বলেন-“কাজের জায়গা কর্মস্থলকে নিজের পরিবারের মতো ভাল না বাসলে কাজ করতে পারবে না। যে প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের ফ্যামিলির সব কিছু জড়িয়ে তাকে ভালবাসতে হবে তার অপমান মানে আমার অপমান-তাকে কিছু বলা মানে আমার মা-কে কিছু বলা এই অনুভূতি যদি তৈরি না হয় কোন দিন বড় মানুষ হতে পারবে না।তা না হলে শিক্ষার প্রতি অবিচার করা হবে-সে যে কোন ক্ষেত্রে হোক না কেন।”

চাকরির সুযোগ আছে

এরপর তিনি বলেন-“যদি সুযোগ থাকে তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা যেন উচ্চতর ডিগ্রি করে তাহলে আগামি ভবিষ্যতে বড় চাকরির সুযোগ থাকবে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনেক শূন্যপদ রয়েছে আগামীতে এইসব ছাত্র-ছাত্রীদের চাকরির অসুবিধা হবে না।” একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন-অনেক ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদেরও প্রাণী চিকিৎসাতেও হাত লাগাতে হতে পারে যখন প্রানী চিকিৎসকদের পোস্টিং হতে সময় লাগবে লখন খালি চিকিৎসাকেন্দ্রে ফার্মাসিস্টদের অনেক দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করেত হবে।আবারও তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের বলেন-“মানুষ হও-তারপর কাজ।”
অধ্যক্ষ অজিত কুমার সাহু জানান, “নানা অসুবিধা সত্ত্বেও ছাত্র-ছাত্রীরা যা শিখেছে তা আশা করি কাজে আসবে। আগামী ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলময় হোক।” বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করার পাশাপাশি ভালভাবে মানুষ হয়ে ওঠার আশা রাখেন তিনি।তিনি কিছু শিক্ষক ও হস্টেলের দাবি জানান।

উপস্থিত বিভাগীয় প্রধানেরা জানান, এই কোর্সের ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই মেধাবী এবং এই কোর্স থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সঙ্গে চাকরিতে যোগদান এবং ওষুধ কোম্পানিগুলিতে ভাল করে চাকরি পেতে পারবেন বলে জানান।

Published on: ডিসে ১৫, ২০১৮ @ ১৯:২০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

59 − 52 =