আপনার পঞ্চায়েত আপনাকেই জেতাতে হবে, মা-মাটি-মানুষই আমাদের শক্তি-ডেবরার সভায় বললেন মমতা

রাজ্য
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-বাপ্পা মণ্ডল                                        ছবি-রামপ্রসাদ সাউ  

Published on: মার্চ ২১, ২০১৮ @ ২০:২৭      

এসপিটি নিউজ ডেবরা, ২১ মার্চঃ হাজারো বাধা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে চলেছে। একাধিক ক্ষেত্রে এই রাজ্য এখন এক নম্বর স্থান অধিকার করেছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এটাকেই হাতিয়ার করে ডেবরার সভায় রাজ্যের উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষই তাঁর মূল হাতিয়ার। মা-মাটি-মানুষই এই সরকারের শক্তি, আবারও এই কথা প্রকাশ করে মমতা সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন-আপনার পঞ্চায়েত আপনাকেই জেতাতে হবে। যে পঞ্চায়েত মানুষের পাশে থাকবে মা-মাটি-মানুষের সরকারের সাথে কাজ করবে সাথে থাকবে পাশে থাকবে মানুষকে দেবে মানুষের সমস্ত প্রাপ্য সেই হবে মানুষের সহায়ক।

ডেবরার সভায় দাঁড়িয়ে মমতা বলেন, সিপিএমের আমলে কি হয়েছে তা আপনাদের অজানা নয়। জঙ্গলমহল কেউ ভয়ে ঢুকতে পারত না। কেউ মেদিনীপুরে আসত না ভয়ে।ভাদুতলা, লালগড়, গড়বেতা, কেশপুরে ভয়ে যেত না। কেশিয়াড়িতে ঢুকতে পারত না। সাঁকরাইলে ঢুকতে পারত না। সারেঙ্গায় ঢুকতে পারত না। মানুষের চিন্তা থাকত। কখন প্রাণ চলে যাবে। দুপুরের পর রাস্তায় গাড়ি চলত না। আজকে সেখানে ফিরে এসছে পুরো শান্তি।

“গ্রামগঞ্জে কর্মসংস্থান চুটিয়ে চলছে। আগামিদিন আরও হবে। বহু প্রকল্প চলছে। আগামিদিনে কলকাতা শহরকেও সিলিকন ভ্যালি একটা রেপ্লিকা রাজারহাটে একশো একর জমিতে তৈরি করব। এটাও আমাদের আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতেও আমাদের কর্মসংস্থান অনেক বাড়বে।” একথা বলার পাশাপাশি মমতা বলেন, আমি চাই গ্রামগঞ্জের ছেলেমেয়েরা মাথা তুলে দাঁড়াক। আমি এটা বিশ্বাস করি আমাদের মা-বোনেরা যা করতে পারে অনেকে তা করতে পারে না। আমরা মানুষের সঙ্গে থাকব। মানুষের কোনও সমস্যা আমরা করতে দেব না। আমরা মনে করি মানুষ আমাদের বড় শক্তি। মা-মাটি-মানুষ আমাদের বড় শক্তি। আপনারা বাংলাকে পথ দেখান।

তিনি আরও বলেন, এক একটা জেলার এক এক রকম বিশেষত্ব আছে। ডেবরা বলুন, ঘাটাল বলুন, চন্দ্রকোনা বলুন, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী বলুন জল প্রকল্প বলুন, মাল্টিসুপার হাসপাতাল বলুন, কলেজ বলুন, পলিটেকনিক বলুন, আইটিআই বলুন, সেচ প্রকল্প বলুন হাজার হাজার কাজ করে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত জায়গায় ঢেলে কাজ হয়েছে। আমি চাই আগামিদিন আরও ভালো কাজ হোক। সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেদিকে আমাদের দেখতে হবে। ডেবরাতে কর্মতীর্থ গড়ে তোলা হয়েছে, মহাসঙ্ঘ করা হয়েছে আনন্দধারা প্রকল্পের।

৪৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ শোধ করে কেউ যদি এত সরকারি প্রকল্প করতে পারতেন আমি বলতাম, আমার ঘাট হয়েছে, আমি হেঁট করে নিচ্ছি মাথা। বলেন মমতা। এরপর তাঁর সংযোজন- কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখাতে পারবেন বাংলায় যত স্কিম আজ পর্যন্ত ভারতবর্ষের কোথাও আছে? নেই। খাজনা মুকুব একমাত্র জায়গা বাংলা, কৃষকদের জমিতে ফি লাগে না একমাত্র জায়গা বাংলা।কৃষকদের আয় বেড়েছে একমাত্র জায়গা বাংলা। পাঁচ বছর পর পর কৃষক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি আমরা। আজকে ১০০দিনের কাজে নাম্বার ওয়ান ভারতবর্ষে কে? পশ্চিমবঙ্গ। বাংলা আবাস যোজনায় এক নম্বর পশ্চিমবঙ্গ।স্কিল ডেভেলপমেন্টে এক নম্বর পশ্চিমবঙ্গ। আর আজ শুনলাম যাদবপুর ইউনিভার্সিটিও এক নম্বর হয়ে গেছে। ২১টি স্টেট ইউনিভার্সিটির মধ্যে। আমি গর্বিত যা আমার বাংলার মুকুটে পালক এসেছে। ৪৩টি মাল্টিসুপার হাসপাতাল করে দিয়েছি আমরা সাড়ে ছ’বছরে। আগে একটা হত না, টিমটিম করে জ্বলত।

জোর দিয়ে মমতা বলেন, দেখাতে পারবেন একটাও রাজ্য! কেন্দ্রীয় সরকার বলছে আমরা ইন্সিওরেন্স করব। আরে ইন্সিওরেন্স করবার আগে বিনা পয়সায় সরকারি চিকিৎসা কে করে দিয়েছ? পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বেড ভাড়াও লাগে না এবং ওষুধের দামও লাগে না। আমরা একটা স্কিম তৈরি করেছি। সামাজিক সুরক্ষা। আপনার যদি ১৮ বছর বয়স হয় ২৫ টাকা করে জমা রাখেন আপনার ২৫ টাকা আমার সরকার দেবে ৩০ টাকা আপনার ২৫ টাকায় আমি ৩০ টাকা করে জমা করছি। অর্থাৎ আপনার ডাবল টাকা দিচ্ছি সরকার থেকে। এটা হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা। এটার সুবিধা হল লেবাররা যারা কাজ করেন তার মেয়ে যখন গ্যাজুয়েট হয় তখন সে ২৫ হাজার টাকা পেয়ে যাবে। মনে রাখবেন ২০ হাজার টাকা করে মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট বছরে পাবেন। মেয়ের বিয়ের টাকা পাবেন। এডুকেশনের জন্য টাকা পাবেন। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সামাজিক সুরক্ষা কার্ডটা কন্টিনিউ করলে যখন আপনার ৬০ বছর বয়স হবে গরমেন্ট আপনাকে ২ লক্ষ টাকা দেবে। এবং আপনি একটা পেনশনও পাবেন। এটা হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম।

এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর সহ গোটা রাজ্যবাসীকে সুন্দর করে অন্নপূর্না উৎসব পালন করার কথা বলেন। তিনি বলেন, আপনারা রামনবমী পালন করুন। গুড ফ্রাইডে আছে। আমাদের মহাবীর জয়ন্তী আছে। সব কিছু ভালো করে করুন কিন্তু সুন্দর করে করুন। পরম্পরা মেনে করলে  সেই মিছিল মিটিংগুলো হবেই।নতুনভাবে যারা শান্তিপুর্ণভাবে করতে চান নিশ্চয় হবে কিন্তু রাজনীতির নাম করে ধর্মীয় উন্মাদনা নিয়ে কোনও মানুষ যেন কাউকে আঘাত করতে না পারে। সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

এরপর মমতা বলেন, আমি পশ্চিমবঙ্গবাসীকে এটাই বলব-আমাদের রাজ্য মনে রাখবেন, আমরা মাথা উঁচু করে চলি। আমরা মাথা উঁচু করে চলি বলেই আজকে কন্যাশ্রীর মেয়েরা আমাদের গর্ব। আমরা কেন কন্যাশ্রী করেছি। আমি বিশ্বাস করি একদিন মেদিনীপুরের মেয়েরা গিয়ে আমেরিকা জয় করবে। কেউ রাশিয়া গিয়ে জয় করবে। কেউ চায়না গিয়ে জয় করবে। কেউ যেন বলতে না পারে ঐ মেয়েটি আমার ডেবরায় থাকে। ও ভালো করে পড়াশুনো করেনি। একথা যেন শুনতে না হয়।একথা যেন শুনতে না হয়, আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। একথা যেন শুনতে না হয় যে আমাদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে আছে।

Published on: মার্চ ২১, ২০১৮ @ ২০:২৭

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − = 5