আজ গুগল উদযাপন করছে প্রবাদপ্রতিম গায়ক রফির ৯৩তম জন্মদিন

Main দেশ বিনোদন
শেয়ার করুন

Published on: ডিসে ২৪, ২০১৭ @ ১৫:৫৭

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ ভারতের প্রবাদপ্রতিম গায়ক মহম্মদ রফির ৯৩তম জন্মদিন উদযাপন করছে গুগল। আজ সারাদিন ধরেই গুগলের পেজে গেলেই দেখা যাবে রফির ছবি। ভারতীয় সঙ্গীতে রফির স্থান সবসময়ই একটা বিশেষ জায়গা নিয়ে আছে। তাঁর গলার জাদু আ আজও সগীত প্রেমীদের হৃদয় জুড়ে আছে।হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অবদান অবিশ্বাস্য এবং সম্ভবত কোনও গায়ক এখনও পর্যন্ত দর্শকদের হৃদয়কে মহম্মদ রফির পথ ধরে এমন সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে পারেনি।

রফি তার অসাধারণত্বের জন্য সুপরিচিত ছিলেন কারণ তাঁর গানগুলি ছিল ধ্রুপদ, দেশপ্রেম, রোমান্টিক-এর পাশাপাশি বেদনা, কাওয়ালি, গজল-ভজনও ছিল। প্রায় বিশ বছর ধরে, হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পে গায়ক হিসাবে রফি এক অনন্য নজির গড়ে গেছেন। তাঁর বিখ্যাত ক্যারিয়ারে তিনি ছ’টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারেও তিনি সম্মানিত হয়েছেন। হিন্দি ছাড়াও, তিনি কোঙ্কানি, ভোজপুরী, বাঙালি, উড়িয়া, পাঞ্জাবি, মারাঠি, সিন্ধি, তেলেগু, কন্নড়, গুজরাটি, মৈথিলী এবং উর্দুসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় গান করেন। ভারতীয় ভাষার পাশাপাশি তিনি ইংরেজি, আরবি, ফার্সী সিংহলী এবং ডাচ ভাষার গানগুলিতে তার সুর সুর দিয়েছেন।

পাঞ্জাব প্রদেশের কোটলার সুলতান সিংহের তিনি হাজী আলী মহম্মদ ও আল্লাহ্রখালী বাঈয়ের ছয় পুত্রের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন।সঙ্গীত শিল্পী মহম্মদ রফির ডাক নাম ছিল ফিকো। গ্রামে এক ফকিরের গাওয়া ভজন শুনে তা অনুকরন করে গান গাওয়া শুরু করেন ছোট্ট ফিকো।পরবর্তী কালে ১৯২০ সালে তাঁর বাবা জীবিকার সন্ধানে অবিভক্ত লাহোরে চলে যান।সেখানে ভাট্টি গেটের নূর মহল্লায় সেলুনের দোকানের মালিক হন।

রফির বিখ্যাত সংগীত শিল্পী হয়ে ওঠার পিছনে এক সুন্দর ইতিহাস জড়িয়ে আছে। শোনা যায়, তাঁর সংগীত প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান বড় ভাই মহম্মদ দ্বীনের বন্ধু আব্দুল হামিদ।তিনি পরে রফির পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে রফিকে মুম্বই পাঠান। ১৯৪৪ সালে মুম্বই যাওয়ার সময় রফির সঙ্গীও হয়েছিলেন আব্দুল হামিদও।সেখানে ভিন্দী বাজারের মতো এক ব্যস্ততম এলাকায় কোনওরক্মে একটি দশ বাই দশ ফুটের ঘরে মাথা গোঁজার সুযোগ হয়েছিল। সেখান থেকে জীবনযুদ্ধের লড়াই শুরু করেছিলেন আমাদের সকলের প্রিয় রফি। সেখানে তিনি উস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খান, উস্তাদ আব্দুল ওয়াহিদ খান, পণ্ডিত জীবনলাল মত্ত এবং ফিরোজ নিজামীর মতো প্রথিতযশা সঙ্গীত শিল্পীদের থকে তালিম নিয়েছিলেন, যা পরবর্তীকেলে ছোট্ট ফিকোকে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে মহান সঙ্গীতশিল্পী মহম্মদ রফি রূপে পরিচিত করেছিল।

১৩বছর বয়সে রফি তার প্রথম মঞ্চ শো করেন লাহোরে। তিনি ১৯৪১  সাল থেকে লাহোরের অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করেন।একই বছরে তিনি পাঞ্জাবি চলচ্চিত্র “গুল বালুচ” নামে বিখ্যাত গায়ক জীনত্ বেগমের সঙ্গে তাঁর প্রথম গান ‘সোনিয়ে নি, হেরিয়ে নি’ নামে একটি গান করেন। ১৯৪৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি।শ্যাম সুন্দরের “গাঁও কি গোরী” ছবির “আজি দিল হো কাবু মে তো দিলদার কি এ্যায়সী তাঈসী” গানই ছিল রফির হিন্দি ছবিতে প্রথম রেকর্ডিং।

রফির জীবনের স্মরণীয় ঘটনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল- জাতি্র জনক মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে গান তৈরি করে সম্মানিত হওয়া ততকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কাছে থেকে। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী নিহত হওয়ার পর হুসনলাল ভগতরাম-রাজেন্দ্র কৃষাণ-রফি এই ত্রয়ী এক রাতেই কালজয়ী “শুনো শুনো এই দুনিয়াওয়ালো, বাপুজী কি অমর কাহিনী” গানটি রচনা করে তা পরিবেশন করেছিলেন।পরে সেই গানটি তিনি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু’র আমন্ত্রণে পুণরায় পরিবেশন করে উপস্থিত সকলকে শোনান। সেই বছরেই ১৯৪৮ সালে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে নেহরু’র কাছ থেকে রৌপ্য পদক গ্রহণ করেন মোহাম্মদ রফি।

মোহাম্মদ রফি তার চাচাতো বশির বানুকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালের বিভাজনের সময় রাজনৈতিক চাপের কারণে বিচ্ছেদ হয়েছিল। ফলে বশির পাকিস্তানেই থেকে যান।তাদের এক পুত্র শাহিদ থেকে যান মায়ের সঙ্গে। পরে তিনি বিলকিস বানুকে বিয়ে করেন এবং দ্বিতীয় পক্ষের চার সন্তান ছিল – নাসরিন, খালিদ, পারভীন ও হামিদ।

“হাম কিসি সে কম নেহি” ছবিতে আর দি বর্মনের সঙ্গীত পরিচালনায় “ক্যায়া হুয়া তেরা ওয়াদা” গান্টির জন্য ১৯৭৭ সালে জাতীয় পুরস্কার পান। এছাড়াও তাঁর জনপ্রিয় গাঙ্গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- “চৌদভীন কা চান্দ হো”, “তেরি পিয়ারী পিয়ারী সুরত কোতেরি পিয়ারী পিয়ারী সুরত কো”,”আয়ে গুলবদন আয়ে গুলবদন”, “মেরে মেহবুব তুঝে”, “চাহুঙ্গা মে তুঝে”, “বাহারো ফুল বরসাও”, “দিল কে ঝারোকে মে”, “পর্দা হ্যা পর্দা”, “আদমী মুসাফির হ্যা”, “দর্দ-এ-দিল দর্দ-এ-জিগার”, “ম্যায়নে পুছা চান্দ সে”, “লিখে যো খত তুঝে”, “চুরা লিয়া হুয়ায় তুমনে”, “ইয়ে রেশমি জুলফে”, “মেরে মিতুয়া মেরে মিত রে”। লিখে শেষ করা যাবে না।

গানের মধ্যে দিয়েই চিরবিদায় নেন রফি। তারিখটি ছিল ৩১ জুলাই, ১৯৮০। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা। শোনা যায়, লক্ষ্মীকান্ত-পিয়ারেলালের লেখা “শ্যাম ফির কিউ উদাস হ্যায় দোস্ত” গানটির রেকর্ড করে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।Published on: ডিসে ২৪, ২০১৭ @ ১৫:৫৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 6 = 4