আগামিকাল বাংলাদেশে ২৯৯টি সংসদীয় আসনের ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত

Main বাংলাদেশ বিদেশ
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-ইবতিসাম রহমান

Published on: ডিসে ২৯, ২০১৮ @ ২৩:২৭

এসপিটি নিউজ, ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর: বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে গাইবান্ধা জেলার একটি আসনে একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকবে। ২৯৯টি সংসদীয় আসনে এবার মোট ১ হাজার ৮৬১জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দেশে মোট ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন। এবার ১ কোটি ২৩ লাখ নতুন ভোটার। তারা প্রথম ভোট দেবেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কারা পাচ্ছেন তা এই ভোটে নির্ধারিত হবে। ক্ষমতাসীন মহাজোট আর প্রধান প্রতিপক্ষ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নির্বাচন উপলক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে রয়েছে সেনাবাহিনীসহ দেশের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনী প্রচারে কিছু বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটলেও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইতিমধ্যে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে কমিশন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। অন্যদিকে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনকে ভোট উৎসবে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নূরুল হুদা। তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের নির্বাচনে ১হাজার ৮৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ৩৯ দলের ১হাজার৭৩৩ জন ও স্বতন্ত্র ১৮২ জন রয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১৫ লাখ লোক এ ভোট পর্যবেক্ষণ করছে। ফলে নির্বাচনে কোনো শঙ্কা নেই। ভোট গ্রহণ উপলক্ষে রোববার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ব্যাংকও বন্ধ রাখা হয়েছে ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ হয়েছে শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে, এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে ৩০ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত। যানবাহন চলাচলের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীর বাইরে কোনো যান চলাচল করবে না।

এবারের নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দল অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি অনিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দল প্রধান দুই জোটের সঙ্গী হয়ে নির্বাচনে লড়ছে। এর বাইরে বাম মোর্চা ও ইসলামি কয়েকটি দলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন থাকবেন। মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আরও একজন করে বেশি রাখা হবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বেশি থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ সদস্য মোতায়েন : শুধু ভোটকেন্দ্র পাহারায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ ৮ হাজার জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

এর মধ্যে পুলিশ ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার ৪ লাখ ৪৬ হাজার ও গ্রামপুলিশ ৪১ হাজার। এ ছাড়া ৪১৪ প্লাটুন সেনা, ৪৮ প্লাটুন নৌ-বাহিনীর সদস্য, কোস্টগার্ড ৪২ প্লাটুন, বিজিবি ৯৮৩ প্লাটুন ও র‌্যাফ ৬০০ প্লাটুন ভোটের ময়দানে রয়েছে। এ ছাড়া স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে র‌্যাফ ও বিজিবি সদস্যরা নির্বাচনে্র দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচন কর্মকর্তা পৌনে ৭ লাখ : দেশের সব সংসদীয় আসনের নির্বাচন শেষ করতে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় সমসংখ্যক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই বিভাগীয় কমিশনার এ দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহায়তা করতে ৫৮২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনে শুধু ভোটারদের ভোটদানে সহায়তা করার জন্য ৬ লাখ ৬২ হাজার ১১৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার ৪০হাজার ১৮৩ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন। ২৫৯০০ দেশি পর্যবেক্ষক :নির্বাচনে ৮১টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া বিদেশিদের মধ্যে ফেমবোসা, ওআইসি, কমনওয়েলথ ও অন্যান্য সংস্থার ৩৮ জন, কূটনীতিক ও বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং ঢাকাস্থ দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এগুলো হলো-ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২ আসন। এরমধ্যে ঢাকা-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। মোট ভোটার ২ লাখ ৬৯ হাজার ৩১৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৩ হাজার ১০৭ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৮জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯৮টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৬৩৮টি। ঢাকা-১৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১০ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ১৬৮ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৪টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭০টি। চট্টগ্রাম-৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৮ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৩১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪ হাজার ২০৬ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৬ হাজার ২২৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৪০টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৯২০টি। রংপুর-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। মোট ভোটার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২১ হাজার ১০৯ জন। মহিলা ভোটার ২ লাখ ২০ হাজার ৫৬২ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৫টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ২৩টি। খুলনা-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৭ জন। মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ১১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৫ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭২০টি। সাতক্ষীরা-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৬ জন। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৬ জন।

এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৮ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৮ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৭টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৮৭৪টি। নির্বাচন উপলক্ষে আজ মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ভোটের দিন দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত বেবি টেক্সি/অটোরিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিক-আপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে নৌযান চলাচলের ওপর। এ ছাড়া ভোটকে সামনে রেখে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত মোট চার দিন সারাদেশে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশী-বিদেশী, পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য। এছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও কতিপয় জরুরি কাজ যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদির কাজে নিয়োজিত যানবাহনে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এ ছাড়া মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।ছবি-এএফপি

Published on: ডিসে ২৯, ২০১৮ @ ২৩:২৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 14 = 15