অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ভূমিকায়- বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়ে কন্যা শেখ হাসিনার কলমে ঝড়েছে এক রাশ দুঃখ আর যন্ত্রণা

Main এসপিটি এক্সক্লুসিভ দেশ বাংলাদেশ ভ্রমণ
শেয়ার করুন

মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর পিতা বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই আকারে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেন। সেখানে তিনি ভূমিকায় তুলে ধরেন নিজের দুঃখ-যন্ত্রণা আর ঘাতকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা। সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পাঠকদের জন্য শেখ হাসিনার সেই লেখার বাছাই করা অংশ তুলে ধরার প্রয়াস নিলাম।

Published on: আগ ১৫, ২০২০ @ ১০:১৪

Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ:  আজ বাংলাদেশে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হচ্ছে। ৪৫ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আজকের দিনেই পাকিস্তানি ঘাতকের গুলিতে শিশু থেকে অন্তঃস্বত্তা নারী কেউ রেহাই পায়নি। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান সহ তাঁর প্রায় পুরো পরিবারকেই হত্যা করে রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছিল খুনি ঘাতকের দল। বিদেশে থাকায় বেঁচে গেছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর পিতা বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই আকারে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেন। সেখানে তিনি ভূমিকায় তুলে ধরেন নিজের দুঃখ-যন্ত্রণা আর ঘাতকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা। সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পাঠকদের জন্য শেখ হাসিনার সেই লেখার বাছাই করা অংশ তুলে ধরার প্রয়াস নিলাম।বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের একজন সফল প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু ছাড়াও স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসেরকে হত্যা করে। সেই রাতেই নিহত হন বঙ্গবন্ধুর বোনের স্বামী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবী ও শিশুপৌত্র সুকান্ত বাবু; বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, নিকট আত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত ও রিন্টু।ধানমণ্ডির বাড়িতে পুলিশের বিশেষ শাখার সাব ইন্সপেক্টর সিদ্দিকুর রহমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিলকেও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।আজও সেই রাত বাংলাদেশের মানুষ ভোলে নি।

হাসিনার কলমে জ্বলজ্বল করছে সেই লেখা

অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে শেখ হাসিনা ভূমিকা অংশে লিখছেন-“আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময়গুলো কারাবন্দি হিসেবেই কাটাতে হয়েছে। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়েই তাঁর জীবনে বার বার এই দুঃসহ নিঃসঙ্গ কারাজীবন নেমে আসে। তবে তিনি কখনও আপোস করেন নাই। ফাঁসির দড়িকেও ভয় করেন নাই। তাঁর জীবনে জনগণই ছিল অন্তঃপ্রাণ। মানুষের দুঃখে তাঁর মন কাঁদত। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন, সোনার বাংলা গড়বেন- এটাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত। অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা,স্বাস্থ্য – এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে মানুষ উন্নত জীবন পাবে, দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি পাবে, সেই চিন্তাই ছিল প্রতিনিয়ত তাঁর মনে। যে কারণে তিনি নিজের জীবনের সব সুখ আরাম আয়েশ ত্যাগ করে জনগণের দাবি আদায়ের জন্য এক আদর্শবাদী ও আত্মত্যাগী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন স্বাধীনতা। বাঙালি জাতিকে বীর হিসেবে বিশ্বে দিয়েছেন অনন্য মর্যাদা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামে বিশ্বে এক রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন সফল করেছেন।বাংলার মানুষের মুক্তির এই মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন জাতীয় পুনর্গঠন অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন নিশ্চিত করছিলেন তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেট তাঁকে জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। স্বাধীন বাংলার সবুজ ঘাস তাঁর রক্তে জর্জরিত হয়েছে। বাঙালি জাতির ললাটে চিরদিনের জন্য কলঙ্কের টিকা এঁকে দিয়েছে খুনিরা।”

বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা

বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা প্রসঙ্গে লিখছেন-“১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পরপরই আমাদের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে (পুরাতন), (বর্তমান সড়ক নম্বর ১১,বাড়ি নম্বর ১০) পাকিস্তানী সেনাবাহিনী হানা দেয় এবং আমার পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাঁকে গ্রেফতারের পর আমার মা ছোট ভাই রাসেল ও জামালকে নিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর আবার ২৬শে মার্চ রাতে পুনরায় সেনারা হানা দেয় এবং সমগ্র বাড়ি লুঠপাট করে, ভাঙচুর করে। বাড়িটা ওদের দখলেই থাকে।”

‘সাত্তার সরকার আমাদের কাছে বাড়িটা হস্তান্তর করে’

“১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ৩২নম্বর সড়কের বাড়িতে পরিবারের সকলকে হত্যার পর তৎকালীন সরকার বাড়িটা বন্ধ করে রেখেছিল। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আমি প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসি। তখনও বাড়িটা জিয়া সরকার সিল করে রেখেছিল। আমাকে ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয় নাই। এরপর ওই বছরের ১২ জুন সাত্তার সরকার আমাদের কাছে বাড়িটা হস্তান্তর করে।” লেখেন হাসিনা।

ছবিটি বাংলাদেশের এক চিত্রশিল্পীর আঁকা। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ভ্রমণে গিয়ে ঢাকার এক চিত্র প্রদর্শনী থেকে ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম।

Published on: আগ ১৫, ২০২০ @ ১০:১৪


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 20 = 26