
Published on: জানু ২৯, ২০১৮ @ ১৯:০৩
এসপিটি নিউজ, দৌলতাবাদ, ২৯ জানুয়ারিঃ কে জানত, আজকের দিনটি ওদের কাছে এমন মর্মান্তিক হয়ে উঠবে। সকালে যখন তারা বাসে উঠেছিলেন তখন নিশ্চিন্ত মনে তারা নিজের নিজের গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন।কিন্তু নিমেষের মধ্যে সব ওলোটপালোট হয়ে গেল।তাদের সব শেষ হয়ে গেল। অভিশপ্ত বাসটি থেকে একের পর এক মৃতদেহ টেনে বের করতে শুরু করেছে উদ্ধারকারী দল।
আজ ভোরে যখন তারা বাসটিতে উঠেছিলেন তখন তাদের চোখে ঘুমের ভাব ছিল। ফলে বাসে উঠে যারা বসার জায়গা পেয়েছিলেন তাদের অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বাসটিও দ্রুত গতিতে মালদহের উদ্দেশ্যে ছুটছিল।
বাসযাত্রীদের মধ্যে যেমন পুরুষ, মহিলা ছিলেন ঠিক তেমনই ছিল শিশুও। তাদের কেউ ফিরছিলেন বাড়ি, কেউবা কাজে, কেউবা আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউবা নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাদের কারোরই কিন্তু আর গন্তব্যস্থলে পৌঁছনো হল না। চির ঘুমের দেশেই শায়িত হলেন তারা সকলেই।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী মৌমিতা মণ্ডল ডোমকল হাসপাতালের বেডে শুয়ে বলছিলেন সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর কথায়, আমি যা বেঁচে আছি, বিশ্বাই হচ্ছে না। করিমপুরে বিডিও অফিসের মোড়ে বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। মালদহগামী বাসটি এল। আমি বাসে উঠে পড়লাম। বাসে বসার জায়গা ছিল না। ভিড়ে ঠাসা বাস। মহিলাদের সিটে একজন বয়স্ক ব্যকি বসে ছিলেন। আমাকে দেখে তিনি আমাকে বসতে দিলেন। সিটে বসে ব্যাগ থেকে হেড ফোনটা কানে গুঁজে গান শুনতে লাগ্লাম। বাস ছুটছিল বহরমপুরের দিকে। বাসের মধ্যে অনেকেই দেখলাম গভীর ঘুমে অচেতন। আমিও চোখ বন্ধ করে গান শুনতে থাকলাম। কিছু সময় বাদে এক বিকট শব্দে আমার চোখ খুলে গেল। দেখলাম, বাস শূন্যে ভাসছে। মুহূর্তের মধ্যে জলের মধ্য। শুনতে পেলাম, সবাই চিৎকার করছে বাঁচার জন্য।আমার দম তখন বন্ধ হয়ে এসেছে। আমি প্রাণপণে সাধ্যমতো হাত-পা ছুঁড়তে লাগলাম।বুঝতে পারলাম, কারা যেন আমার পা ধরে টেনে বের করছে। যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন দেখলাম আমি শুয়ে আছি ডোমকল হাসপাতালের বেডে।
এমন ভাবেই রক্ষা পেয়েছেন বাবর আলি শাহ, রিপন মণ্ডল সহ আরো বেশ কয়েকজন।কিন্তু তাদের মতো সৌভাগ্য যে বেশিরভাগ যাত্রীর হয়নি। তারা সবাই যে এখন গভীর ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে। আর তাদের জন্য বহরমপুর হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে, বসে হাহাকার করে চলেছেন স্বজনেরা। এ দৃশ্য সত্যিই বড় মর্মান্তিক।