Published on: জুলা ৩০, ২০১৮ @ ১০:০৪
এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ শ্রাবণ মাস পড়লেই শিবভক্তরা ছোটেন বাবা ভোলানাথের মাথায় জল ঢালতে। আজ সেই শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার। এমনিতেই সোমবার বাবা ভোলানাথের বার বলে পরিচিত। তাই এই শুভদিনকে কোনও শিবভক্ত হাতছাড়া করতে চান না। আজ দেশের ১২ জ্যোতির্লিঙ্গের কাছে শিব ভক্তদের ঢল নেমেছে। এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ হল-কেদারনাথ, সোমনাথ, শ্রীনাগেশ্বর, ভীমাশঙ্কর, ঘৃষ্ণেশ্বর, বৈদ্যনাথেশ্বর, মহাকাল, ওঁকেরেশ্বর, ত্র্যম্বকেশ্বর, শ্রীশৈলাধিপতি মল্লিকার্জুন ও রামেশ্বর। তবে এখানে আমরা বাবাধাম বৈদ্যনাথেশ্বরের কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের এক জ্যোতির্লিঙ্গ হল বৈদ্যনাথেশ্বর। স্বামী অচ্যুতানন্দ রচিত “দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ” বইতে প্রকাশিত লেখা থেকে জানা যায়-দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারী থেকে মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়িনী পর্যন্ত যদি একটা সরলরেখা টানা যায় তবে তার উপর পরে পারলি গ্রাম। গ্রামটি নাগপর্বত বা মেরুপর্বতের ঢালে অবস্থিত। পুরানে এই গ্রাম ‘কান্তিপুর’, ‘মধ্যরেখা’ বা ‘বৈজয়ন্তীক্ষেত্র’ নামেও অভিহিত করা হয়েছে।
এখন এই পারলি গ্রামের সঙ্গে কিভাবে জুড়ল বাবা ভোলানাথের নাম। শোনা যায়-সমুদ্রমন্থনের সময় মন্থনরজ্জু হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় নাগরাজ বাসুকির শরীরের অস্থি ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। সেইসময় ভোলানাথ তাঁর অতি প্রিয় নাগরাজ বাসুকিকে ভেষজ বনৌষধি দিয়ে সারিয়ে তুলেছিলেন। এরপর শিব ফিরে যেতে চাইলে বাসুকি হাতজোড় করে বাবা ভোলানাথের কাছে প্রার্থণা করে বলেন-তিনি যেন জগৎ কল্যাণে এখানেই বিরাজ করেন।শিব তখন ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে কৈলাস থেকে তাঁর এক আত্মলিঙ্গ নিয়ে এসে এখানে প্রতিষ্ঠা করতে বলেন। কিন্তু বাসুকির দুই কন্যা-পার্বলি ও পারলি। দুইজনেই চাইলেন সেই শিব লিঙ্গকে নিজেদের প্রাসাদে নিয়ে যেতে। এই অবস্থায় বাসুকি ফের তাঁর আরাধ্য দেবতার স্মরণ নিলেন। দেবাদিদেব মহাদেব তখন আরও একটি লিঙ্গ দিলেন। একটি পারলি ও অন্যটি বৈদ্যনাথে।পারলি খুব নিষ্ঠা ভরে শিবের পূজো করলেন। শেষে তিনি শিবের মধ্যে লীন হয়ে গেলেন। সেই থেকে গ্রামের নাম হল ‘পারলি’, আর ভগবানের নাম হল ‘পারলি বৈদ্যনাথ’। শিব বৈদ্যের কাজ করেছিলেন বলে তাঁকে বলে হয়ে থাকে বৈদ্যনাথ।
স্বামী অচ্যুতানন্দের বইতে বৈদ্যনাথধামের আরও এক কাহিনির কথা জানা যায়। যা থেকে আমাদের দেওঘরের বাবা ধাম অর্থাৎ সেখানে যে বৈদ্যনাথধাম আছে তারাও বলে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের এক লিঙ্গ তাদের এখানেই অবস্থিত। আসলে তর্কে কি আসে যায়-ভগবান তো একই এবং অদ্বিতীয়। তাই স্থানে কি আসে যায়-সবই যে বাবা ভোলানাথের কাহিনি। আসুন শুনে নেওয়া যাক সেই কথা-
কৈলাসে অগ্নিকুন্ডে নিজের মাথা কেটে রাবন যখন শিবকে আবাহন করছিলেন তখন শেষে মহাদেব আবির্ভূত হয়ে তাঁকে অনন্ত শক্তি দান করেন। কিন্তু রাবণ মহাদেবের কাছে বর চেয়ে তাঁকেই লঙ্কায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণে শিব তখন এক আত্মলিঙ্গ দান করেন। রাবণ মহানন্দে সেই লিঙ্গ কাঁধে নিয়ে ছূটতে থাকে লঙ্কার উদ্দেশ্যে। কিন্তু মাঝপথে নারদ মুনি তাঁর পথ আগলায়। তিনি রাবণের কাছে জিজ্ঞাসা করেন-“রাবণ তোমার কাঁধে ওটা কি?” রাবণ তখন নারদ মুনিকে তাঁর তপস্যার কথা, শিবপ্রাপ্তির কথা বলেন। তখন নারদ মুনি রাবণকে বলেন-“রাবণ তুমি খুব বোকা। শিব ভোলানাথ। গাঁজার নেশায় কি বলতে কি বলেছেন। তুমি এখনই কৈলাসে গিয়ে কৈলাস পর্বতকে তুলে আবার স্বস্থানে রেখে দাও। তাহলেই বুঝব তোমার সত্যিকারের শিবপ্রাপ্তি ঘটেছে। একথা শুনেই রাবণ সেখানে লিঙ্গ নামিয়ে রেখে কৈলাসে উদ্দেশ্যে ছুটল। সেখানে গিয়ে নারদ মুনির কথা মতো কৈলাসকে ওঠাতেই শিব চমকে উঠলেন। পাশে মাতা পার্বতী ছিলেন।তিনি তখন বলে ওঠেন-“এ তোমার পরম ভক্ত রাবণের কাজ।”শিব তখন রাবণকে অভিশাপ দিয়ে বলেন-“শীঘ্রই তোমার বাহুগর্ব নাশকারী পুরুষ আবির্ভূত হবে।”এইভাবে শিব রাবণের দর্প চূর্ণ করে এইস্থানে বৈদ্যনাথ নামে অধিষ্ঠিত হয়ে যান। সেই থেকে বৈদ্যনাথধাম হয়ে ওঠে বাবা ধাম। আজ শ্রাবণের প্রথম সোমবার ভক্তদের ঢল নামে।
আজকের দিনে তাই এই বৈদ্যনাথেশ্বরকে জানাতে হয় ভক্তিভরে প্রণাম। আর হাতে বিল্বপত্র নিয়ে তাঁর মাথায় দিয়ে অপর্ণ করে উচ্চারণ করতে হয়-
পূর্বোত্তরে প্রজ্জ্বলিকানিধানে সদা বসন্তং গিরিজাসমেতম
সুরাসুরারাধিতপাদপদ্মং শ্রীবৈদ্যনাথং ত্বমহং নমামি।
অর্থাৎ -যিনি পূর্বোত্তর দিশায় চিতাভূমি শ্মশানে সর্বদা পার্বতীর সঙ্গে অবস্থান করছেন, দেবতা-দানব সকলের দ্বারা সর্বদা পূজিত যাঁর শ্রীচরণকমল, সেই শ্রীবৈদ্যনাথকে প্রণাম।
Published on: জুলা ৩০, ২০১৮ @ ১০:০৪