রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ৬টি পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াল বারুইপুরের হারদহ গ্রাম, দরবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও

দেশ বিদেশ
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা- সত্যজিৎ ব্যানার্জি

Published on: জানু ২১, ২০১৮ @ ২১:৫৭

এসপিটি নিউজ,বারুইপুর,২১ জানুয়ারিঃ  একটা সময় ছিল যখন এদেশে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় হয়েছিল বাংলাদেশী শরনার্থীদের। আজ বহু বছর পর এবার মায়নামারের রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয় হল সেই পশ্চিমবঙ্গে। এবার তাদের ঠিকানা এ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বারুইপুর। সেখানকার হারদহ পঞ্চায়েতের হারদহ গ্রামই তাদের অস্থায়ী ঠিকানা।গ্রামবাসীরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়েই রোহিঙ্গাদের ৬টি পরিবারের জন্য টিনের চালের ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। তাদের জন্য দরবার করছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও।

বাংলাদেশ,মণিপুর হয়ে ভারতের হায়দরাবাদ আর দিল্লি ঘুরে ৫৩৩০ কিমি পথ অতিক্রম করে এসেছেন মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৬টি পরিবারের ২৯ জন সদস্য। কিন্তু কোথাও সেভাবে আস্রয় পাননি। নানা জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে তাদের ঠিকানা এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের হারদহ পঞ্চায়েতের পশ্চিম হারদহ গ্রাম।

এক বছর ধরে ভারতে থাকলেও বারুইপুরের হারদহ এলাকায় তারা এসেছেন ্মাত্র ১ মাস ১০ দিন। মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচারে তারা দেশ থেকে বিতাড়িত। চোখের সামনে দেখেছেন তাদের আত্মীয় পরিজনকে একের পর এক হত্যা করার ঘটনা। কেউ হারিয়েছেন ছেলে কেউবা নিজের মা। বারুইপুরের পশ্চিম হারদহ এলাকার খাল পাড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে এখন তারা প্রতীক্ষায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তারা দরবার করে এক চিঠি পাঠিয়েছেন তাদের স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থার সুরাহার জন্য।

খাল পাড়ে ১৫ কাঠা খাস জমিতে রোহিঙ্গাদের জন্য ছোট ছোট এক কামরা,দুই কামরা টিনের ঘর তৈরি করে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। রোহিঙ্গাদের ৬টি পরিবারের ২৯জন সদস্যের মধ্যে ১১জন শিশু, ৯ জন মহিলা,৯ জন পুরুষ আছে। অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য গ্রামবাসীরাই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে বা কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের হাতে পরনের জামা–কাপড় তুলে দেওয়া হচ্ছে। আবার চাঁদা তুলে তাদের জন্য দিন-রাত খাওয়ার ব্যবস্থাও করছেন এই এলাকার গ্রামবাসীরাই। আবার তাদের টিনের ঘরের পাশেই পানীয় জলের নলকূপেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বারুইপুরে নিরাপদ আশ্রয়ে এসে তারা পেয়েছেন নতুন করে বাঁচার রসদ।

৫০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মহিলা জুবেদা বিবি জানান, “অনেক কষ্টে এখানে এসেছি।আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে মায়নামার। ওখানে আমাদের দোতলা বাড়ি ছিল। আমার মেয়ে-জামাই দিল্লিতে থাকে দেখে না তারা। এখানকার গ্রামবাসীরা আমাদের চাল,ডাল দিচ্ছে খাওয়ার জন্য। মাথার উপর ছাদ দিয়েছে।” আবার ৫০ বছরের আমিরা বেগম জানান, “ওখানে গরু,ছাগল সব ছিল। সব ছেড়ে বাঁচার জন্য পরিবার নিয়ে চলে এসেছি। ওখানে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করতে দিত না। তাই কেউ পড়াশুনো করতে পারেনি।  আমাদের পাশে এই রাজ্য সরকার দাঁড়ালে আমরা বাসস্থান পাব। আর ফিরতে চাই না মায়ানমার।”

২৯ বছরের যুবক মহম্মদ জয়নাল জানায়,”ওখানে জমি-ঘর সব ছিল। আমাদের মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে মায়ানমার সরকার। ওখানে আতপ চাল খেতাম এখন সিদ্ধ ভাত জুটছে। গ্রামবাসীরা অনেক সাহায্য করছে্ন।” মোহনা আখতার বলছিলেন-তার মাকে সেনবাহিনী গুলি করে দিয়েছিল চোখের সামনে। এখন দেওর ,স্বামী ,শাশুড়ি-কে নিয়ে পালিয়ে এসেছে সে বারুইপুরে। গ্রামবাসী তথা এক সংস্থার কর্ণধার হোসেন গাজি জানায়, “আমরা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের বাসস্থানের জন্য মহকুমা শাসক,পুলিশ সুপার,বিডিও-কে লিখিতভাবে জানিয়েছি।” এই রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো গ্রা্মবাসী আশরাফ গাজি ,আলতাফ মোল্লারা বলেন, “এরা খুব অসহায়। আমাদের কোনও অসুবিধা নেই তাদের থাকতে দিতে।চাঁদা তুলে এদের চাল ডাল থেকে শুরু করে পরনের পোশাক দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই এরা বেঁচে থাকুক।” এই বিষয়ে বারুইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যাম সুন্দর চক্রবর্তী জানায়, আমরা এই বিষয়ে বিরুদ্ধাচরণ করিনি।আমরা দেখব কি করা যায়। এরা বিতাড়িত, এদের পাশে গ্রামবাসীরা দাঁড়িয়েছে।

Published on: জানু ২১, ২০১৮ @ ২১:৫৭


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

26 + = 34