অনিরুদ্ধ পাল
Published on: জুলা ২০, ২০১৮ @ ২৩:০৪
একজন মানুষ সৎ, পরিশ্রমী, সাহসী আর শৃঙ্খলাপরায়ণ হলে তাঁর কাছে কোনও কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা সময় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল তাঁকে। আজ তিনি ক্ষমতার উচ্চ শিখরে পৌঁছেও মানুষকে ভুলে যাননি। আজও সমানভাবে তাঁর লড়াই অব্যাহত আছে। মানুষই তাঁর শক্তি। মানুষই তাঁর জোর। মানুষই তাঁর ভরসা। মানুষই তাঁর বিশ্বাস।এই মানুষের জন্যই তাঁর রাজনীতি-লড়াই। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কুচক্রীদের সমস্ত ষড়যন্ত্র বারেবারে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই পারেন দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তাঁকে রোখে কার সাধ্য!
২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর কয়েক মাস পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের বিরুদ্ধে এক জোট হয়ে প্রদেশ কংগ্রেস ও ভারতের মার্ক্সবাদী কম্যিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআইএম)। কিন্তু অবিচল ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস যে আবারও মা-মাটি-মানুষের সরকার গড়তে চলেছে তা নিয়ে একশো ভাগ নিশ্চিত ছিলেন তিনি। কুচক্রীদের কুচক্র যে সমূলে উৎপাটিত হয়ে যাবে তা আগেই আঁচ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে সফল হন তিনি।
এবার তাঁর পিছনে আদা-জল খেয়ে লেগে পড়ে বিজেপি। ইতিবাচক কিংবা গঠনমূলক কোনও আন্দোলন না পেয়ে তারা আমাদের পবিত্র, ঐতিহাসিক ও সর্বধর্ম সমন্বয়ের স্থান বলে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় উন্মাদনা, আঞ্চলিকতাবাদের মতো ইস্যুগুলিকে খোঁচানো শুরু করে। কিন্তু অত্যন্ত সাহসী ও দৃঢ়চেতা তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা কড়া হাতে তা দমন করে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনেন। দার্জিলিংয়ের ঘটনা তো আমাদের সকলের কাছে এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। একজন বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি যেভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিটি কাজের যেভাবে গঠনমূলক সমালোচনা করে চলেছেন তা নিয়ে কেন্দ্র সরকার যে বেশ বিব্রত তা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা যে রাজ্য বিজেপি বিজেপি-র কারও নেই তা এখন ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো, আঞ্চলিকতাবাদকে উসকে দিয়ে এ রাজ্যে তারা যে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস হারাতে বসেছে তা নিয়েও বিজেপি-র অন্দরে জল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
২০১৬ সালের পর বিজেপি এ রাজ্যে তেড়েফুরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আসরে নেমেছিল অথচ বছর দেড়েক পর ছবিটা এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। জঙ্গলমহল আর পাহাড় নিয়ে বিজেপি যে লাইন নিয়েছিল তা এখন শুধু ব্যর্থই হয়ে যায়নি ওইসব এলাকায় মানুষের মধ্যে বিজেপি-র প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শুধু সেইসব এলাকার সাধারণ মানুষই নন, যারা এতদিন বিজেপ-র হাত ধরেছিল বিজেপি-র উপর ভরসা করেছিল আজ তাদের সমস্ত বিশ্বাস ভেঙে গিয়েছে, যা বিজেপি-র কাছে এক মস্ত বড় ধাক্কা।আর এখানেই জয় হয়েছে সত্যের, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিশ্রমের, মা-মাটি-মানুষের সরকারের। এসব শিক্ষনীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি আজ সারা দেশকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছেন।
গোটা দেশ আজ তাকিয়ে আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। আজ দেশজুড়ে যেভাবে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। বিজেপি স্বীকার না করলেও এটা না মেনে উপায় নেই যে বিগত চার বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একের পর এক সিদ্ধান্ত আমাদের মতো সাধারণ দেশবাসীর সামনে এক গভীর সংকট তৈরি করে দিয়েছে।এসব যে মানুষ ভালোভাবে নেয়নি তা কিন্তু বোঝা গিয়েছে সারা দেশে হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক উপ-নির্বাচনের ফলাফলে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে যেভাবে তাদের ভরাডুবি হয়েছে তারপর কর্ণাটকে সরকার গঠন করা নিয়ে যেভাবে বিজেপি-র মুখ পুড়েছে তা যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তাদের গলায় বড় কাঁটা হয়ে বিঁধে রইল তা নিয়ে কিন্তু কোনও সংশয় নেই।
গত বছরই মমতা একুশে জুলাই সভা থেকে ঘোষণা করেছিলেন-এ বছর দিনটি অঙ্গীকার দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এ বছরই একুশে জুলাই পঁচিশে পা দিতে চলেছে। কাজেই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের কাছে এ বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজয়ী পঞ্চায়েত সদস্যরা হাজির থাকবেন সভায়। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। কাজেই দলনেত্রীর বিশেষ বার্তা তো থাকবেই।
এ রাজ্যের মানুষ তো বটেই সারা দেশ আজ তাকিয়ে আছে আমাদের বাংলার দিকে। বাংলা এর আগেও পথ দেখিয়েছে আগামী দিনেও দেখাবে। যখন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির উপ-নির্বাচনে কেন্দ্রের শাসক দলের একের পর এক ভরাডুবু হয়েছে তখন এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস কিন্তু তাদের বিজয়রথ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
সারা দেশে যখন কৃষকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে তখন এ রাজ্যে কিন্তু একজন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি। আসলে এ রাজ্যে তাদের কথা ভাবার জন্য যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। যেভাবে তিনি এত আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও কৃষকের জন্য কৃষিমান্ডি করেছেন তা কিন্তু কেন্দ্রের দেখে শেখা উচিত। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিমুহূর্তে মানুষের পাশে থাকার কথা বলেন-মানুষই তাঁর শক্তি মানুষই তাঁর ভরসা। দলের নেতা-কর্মীদেরও তিনি সেকথা মেনে চলতে নির্দেশ দেন। অনেকেই তাঁর সেই নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষা পান।অন্যায়ের সঙ্গে তিনি কোনোদিন আপোষ করেননি। তাই দলের কেউ যদি সেই পথে পা বাড়ায় তাহলে তিনি সেই মানুষটিকে সবক শিখাতে পিছপা হন না।
আমি তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে এসেছি-কিভাবে তিনি সমাজের সমস্ত শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের মুশকিল আসান করে দেন। এখানেই তাঁর বিশেষত্ব। এখানেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব। তাঁর এই পদাঙ্ক যদি দলের সমস্ত বিধায়ক-মন্ত্রী-সাংসদরা করতে পারতেন তাহলে হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজটা আরও অনেক সহজ হয়ে যেত। আমরা এ রাজ্যের মানুষ সকলেই চাইব সামনের লোকসভা ভোটে বিপুল আসনে জিতে এ রাজ্য থেকে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসুন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশে জুলাই-এর মঞ্চ এই অঙ্গীকারেই সোচ্চার হয়ে উঠুক।
Published on: জুলা ২০, ২০১৮ @ ২৩:০৪