সংবাদদাতা– বাপ্পা মন্ডল ছবি-বাপন ঘোষ
Published on: ফেব্রু ২, ২০১৯ @ ২৩:২৪
এসপিটি নিউজ, চন্দ্রকোনা, ২ ফেব্রুয়ারিঃ কিছু একটা পেলেই হল-সংবাদ মাধ্যমের কাছে তা হয়ে ওঠে খবর। কত রকমের শব্দ- ‘একবিংশ শতাব্দী’, ‘দারিদ্র্য’, ‘অমানবিকতা’, ‘ডিজিটাল যুগ’ না জানি আরও কত কী! কিন্তু সাংবাদ মাধ্যমের এসব খবর লেখার আগে বিশেষ করে সেই অসহায় বাবা-মায়ের কথা একবার অন্তত ভেবে দেখা উচিত।চন্দ্রকোনায় একটি গ্রামের এক ক্ষুদ্র চাষি ও তাঁর স্ত্রী তাদের ঘরের বড় মেয়েকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। সংবাদ মাধ্যম এমন খবর পেয়ে রে রে করে উঠেছে। কিন্তু একবারও কিন্তু ভেবে দেখেনি কেন তারা এমনটা করেছে।
আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আসল ছবিটা ঠিক কি? কেন এমনটা হয়েছে? এর পিছনে সত্যি কি বাবা-মায়ের দোষ আছে?
ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা দু’নম্বর ব্লকের ৪ নং কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধামকুড়িয়া গ্রাম। যেখানে বাস এক ক্ষুদ্র চাষির পরিবারের। নাম অরুন রায়। মাত্র দুই বিঘা জমিতেই তার চাষবাস। স্বল্প সঞ্চয়। তা দিয়েই কোনওরকমে দিন গুজরান। স্ত্রী অর্চনা আর আছে তাদের দুই মেয়ে সোমাশ্রী ও অর্পিতা। এই নিয়েই অরুন রায়ের পরিবার।
আরও জানা যায়, বড় মেয়ে সোমাশ্রী নাকি জন্ম থেকেই একশো শতাংশ শারীরিকভাবে অক্ষম। ছোট মেয়ে অর্পিতা আবার কানে শুনতে পায় না। এই অবস্থায় বাড়িতে বড় মেয়েকে পায়ে দড়ি দিয়ে খুটির সঙ্গে বেঁধে রাখেন। আর আশি শতাংশ কানে শুনতে না পাওয়া ছোট মেয়ের জন্য অনেক কষ্ট করে ষাট হাজার টাকা দিয়ে কানের মেশিন কিনে দেওয়ায় সে এখন শুনতে পাচ্ছে। এখন তাঁকে স্কুলেও ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণিতে পড়ে সে।
তবে গোল বেঁধেছে বড় মেয়েকে নিয়ে। কারণ, তারা তাকে পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে বলে সংবাদ মাধ্যমের বিষ নজরে পড়েছেন তারা। এই বিষয় তুলতেই কেঁদে ফেলেন অরুন রায় ও তার স্ত্রী অর্চনা রায়। কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন-” আমরা কি আমাদের মেয়েকে সাধ করে বেঁধে রেখেছি? ও যে সম্পূর্ণ অক্ষম মানসিকভাবে অসমর্থ। আমরা ওর চিকিৎসার জন্য সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে আজ সর্বশ্বান্ত হয়েছি। আজ আমাদের হাতে একটা পয়সাও নেই। বিধায়কের কাছে গিয়েছি কোনও লাভ হয়নি।আগে ছেড়ে দেওয়া হত। তখন একবার পালিয়ে চলে যায়। ওর খোঁজে আমরা হন্যে হয়ে চারিদিক ছুটে বেড়িয়েছি। অবশেষে ওকে আমরা খুঁজে পেয়েছি।এমন মেয়েকে কি ছেড়ে রাখা যায়? তার উপর কাজের জন্য প্রায় সময়ই বাড়ির বাইরে থাকতে হয় অরুনবাবুকে-কথাটা বলতে গিয়ে ফের কেঁদে ফেলেন অরুনবাবু ও তার স্ত্রী।
আসলে কি জানেন-” অনেকে শুধু বাইরেটাই দেখে। আমাদের যে কি বিপদ আর জ্বালা তা তো আমরাই জানি। লোকে আমাদের নানা কথা বলে মেয়েকে বেঁধে রেখেছি নলে। আর যারা বলে তাদের যদি বলি তোমরা একটু আমার মেয়েকে নজরে রাখবে? তখন তারাই আর এ মুখো হয় না। দোষ দেওয়া সোজা কিন্তু দোষ দূর করতে পারে ক’জন বলুন তো? আমরা জানি না আমাদের মেয়ে আদৌ কোনওদিন সুস্থ হবে কিনা! বেঁধে রাখি এই কারণে যাতে মেয়ে আমাদের চোখের সামনেই থাকে। আমরা যতদিন বেঁচে থাকব মেয়েটাকে তো দেখতে পারব।”
বিধায়ক ছায়া দোলুই ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, “তিনি নিজে ওই ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা করে এসেছেন।তবে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখার বিষয়টি জানতেন না, তা খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন এবং আর্থিক সাহায্যর বিষয়েও প্রশাসনের সাথে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সরকারি সাহায্যে না পাওয়ার কথা ঠিক নয় জানিয়ে বিধায়ক বলেন- “ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তির দুই মেয়ে সরকারের মানবিক প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন।আর কোনও সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায় কিনা দেখছি।”
তবে তিনি কতটা সাহায্য করতে পারবেন আর সেই সাহায্যে আদৌ অরুনবাবুর চোখের জল আর ভিতরের যন্ত্রণা নিরসন হবে কিনা আমাদের জানা নেই। তবে গোটা ঘটনা দেখে ও শুনে একটা কথাই মনে হয়েছে গ্রামের এই ধরনের গরিব মানুষদের জীবনে এমন পরিস্থিতি নেমে এলে তার সঙ্গে লড়াই করা যে মোটেই সহজ কাজ নয় তা কিন্তু ধামকুড়িয়া গ্রামের এই পরিবার এক জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ।
Published on: ফেব্রু ২, ২০১৯ @ ২৩:২৪