
Published on: নভে ২১, ২০২৩ at ২১:১৬
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ: আজ তারাপীঠে তারামাকে জগদ্ধাত্রীরূপে পুজো করা হল। এই দিন এই উৎসবে সমবেত হয়েছিলেন ভক্তরা। তারা এদিন তারামাকে মা জগদ্ধাত্রীর অপরূপ সাজে সজ্জিত দেখেন। এই দৃশ্য সত্যি বিরল। সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ জগদ্ধাত্রী, কালী সরস্বতী ইত্যাদি দেবীর উপাসক ছিলেন। তিনি রাজা রামকৃষ্ণের সাথে আলোচনা করে দেবী তারামায়ের সাথে অন্যান্য দেবীর অভেদ কল্পনা করে তারামায়ের রাজরাজেশ্বরী মূর্তির উপর প্রতিটি দেবীর আরাধনা শুরু করেন। এরপর থেকে তারামাকে শ্যামা ভাবে, জগদ্ধাত্রীরূপে এবং নীল সরস্বতী রূপে আরাধনা শুরু হয়। জানান তারাপীঠ মন্দিরের সেবাইত গবেষক ও ‘তীর্থভূমি তারাপীঠ’-এর সুপ্রসিদ্ধ লেখক প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
কখন থেকে এই পুজো শুরু
তারাপীঠে তারামাকে জগদ্ধাত্রী রূপে পুজো করার বিষয়টা অনেকদিনের। এই প্রসঙ্গ উঠতেই লেখক প্রবোধ বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ প্রভাকর টাইমস-কে পুরনো ইতিহাস স্মরণ করান। বলেন- “যখন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন তখন তারাপীঠে নাটোরের রাজা রামকৃষ্ণের মহাল। তিনি ছিলেন সাধক ও কবি স্বভাবের মানুষ। তিনি তখন তারাপীঠে ছিলেন। নিয়মিত তারামায়ের পুজো করেন এবং মায়ের নামে গান লেখেন আর ভোগ-রাগ দেন। সেই সময় তারাপীঠের কৌল সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। সাধক আনন্দনাথই রাজা রামকৃষ্ণকে তারামাকে অন্যান্য দেবীর সাথে জগদ্ধাত্রী রূপেও আরাধনা করার পরামর্শ দেন। সেই থেকে শুরু হয় তারামাকে জগদ্ধাত্রীরূপে পুজো।”
তারাপীঠে জগদ্ধাত্রী পুজো নবমী তিথিতেই একদিনের জন্য পালিত হয়
তবে ঠিক কোনদিনে জগদ্ধাত্রীরূপে তারামাকে পুজো করা হয় তারাপীঠে ? এই প্রশ্নের জবাবে প্রবোধবাবু বলেন-“ শ্যামাপুজোর পর গোষ্ঠ অষ্টমী তিথিতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু ও দশমীতে সমাপন হলেও তারাপীঠে জগদ্ধাত্রী পুজো নবমী তিথিতেই একদিনের জন্য পালিত হয়। আজ সেই দিন। আজ তারামাকে জগদ্ধাত্রী রূপে ডাকের সাজ- শোলার মুকুট, বিবিধ স্বর্ণ অলঙ্কার ও বেনারসী শাড়িতে সাজানীও হয়। এমন মনমোহিনী রূপে মা সজ্জিত হ্ন যে সেই মধূর মূর্তি দেখতে সমস্ত সেবাইতদের বাড়ির গৃহবধূ থেকে আবালবৃদ্ধ-বনিতা এমনকি গ্রামের প্রতিটি বাড়ির সকলে এই মন্দিরে হাজির হন।”
মায়ের ডাকের সাজ
তারামায়ের জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঘিরে গোটা মন্দির চত্বরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। ঢোল, করতাল, মৃদঙ্গ, ঢাকিম, কাঁসি, খোল, ইত্যাদি বাজনা এবং হরিসংকীর্তন সহযোগে ‘জগদ্ধাত্রী তারা মায়ি কি জয়’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। মায়ের মুখমন্ডলে হাসির রেশ, বিন্যস্ত কেশরাজি, ফুলমালায় সজ্জিত জগদ্ধাত্রী তারামাকে দেখে চোখ ফেরানো যায় না। বলছিলেন সেবাইত প্রবোধবাবু।
মায়ের ভোগ
তিনি বলেন- “মায়ের উদ্দেশ্যে ছাগবলি দেওয়া হয়। পুজোর শেষে নিশি আরতির পর বলিদানের মাংস, শোলমাছ পোড়া, কারণবারি, পঞ্চ ব্যঞ্জন, সবজি, ডাল, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি দিয়ে মায়ের ভোগ নিবেদন করা হয়। পরে সেই ভোগ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এইভাবেই বছরের পর বছর ধরে তারাপীঠে চলে আসছে তারামাকে জগদ্ধাত্রী রূপে পুজোর রীতি।


Published on: নভে ২১, ২০২৩ at ২১:১৬