Published on: ফেব্রু ১, ২০১৮ @ ০১:০৮
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩১ জানুয়ারিঃ তিনি সবসময় একটাই কথা বলে এসেছেন, যাই করা হোক না কেন মানুষের কথা ভেবেই তা যেন করা হয়। কিন্তু সেটা কেউ যদি নিজের স্বার্থসিদ্ধির কথা ভেবে বা সেই লক্ষ্য নিয়ে করে তবে তা হয়ে ওঠে ভয়ানক। আলিপুরে এদিন দলের কোর কমিটিট্র বৈঠকে তিনি সেই বার্তা দিয়ে রাখলেন সমস্ত রাজনৈটিক দলের কাছে।সেখানে তিনি একজন প্রশাসক হিসেবে কড়া বার্তা দিয়ে বলেন-ভাঙচুর করে নোংরা রাজনীতি এ রাজ্যে করতে দেব না। পুলিশকে বলে রাখছি-আপনারা সেই সমস্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। সে যে দলেরই হোক না কেন।
আসলে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের বাস দুর্ঘটনার ঘটনার পর সেদিন স্থানীয় জন্তার একাংশ যেভাবে পুলিশ-প্রশাসনের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি তাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ মুক্ষ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তিনি বলেন, যান গিয়ে খোঁজ নিন, মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে।তারা কোন দলের লোক?গেলেই জেনে যাবেন।ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বলেন, “ওরা যা করতে পারে আমরা তা করি না।ওদের লজ্জ্বা আছে-তৃণমূল কংগ্রেসের অন্ধ বিরোধিতা করছে।তত মানুষ ওদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।কেন দূরে সরিয়ে দেবেন না বলুন তো।একটা দুর্ঘটনা ঘটল। নিয়ম কি-আগুন লাগলে আগুনটা নেভাও।তারপর তুমি তোমার রাজনীতির কথা বলো। একটা বিপদ হয়েছে। আগে বিপদে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াও।তারপর তুমি রাজনীতির কথা বলো।একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, শুভেন্দু আমায় রিপোর্ট করল, ডিএম-এসপি রাও। দু’ঘণ্টা ফায়ার ব্রিগেডকে ঢুকতেই দিল না।আর টিভিগুলো বলছে চার ঘণ্টা কেউ কিছু করেনি করবেটা কি করে?কই একবারও বলেছে দু’ঘণ্টা ঢুকতে দেওয়া হয়নি।কেন দু’ঘণ্টা ধুকতে দেওয়া হয়নি? কোন কারণে কোন হরিদাসরা এরজন্য দায়ী?একবারও বলেছে কোন ক্রীতদাসরা এই অন্যায় করেছে তার কোনও ক্ষমা নেই।আটটা লোককে জীবন্ত তোলা হয়েছিল বাঁচানো হয়েছিল আরও কয়েকটা লোক বাঁচতে পারত।”
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন দৌলতাবাদে সেদিনের হামলাকারীদের কাছে- কেন আপনারা দু’ঘণ্টা ডিএম-এসপিকে ঢুকতে দেননি?
কেন, ফায়ার ব্রিগেডকে ঢুকতে দেননি?
কেন, ক্রেনকে ঢুকতে দেননি?
কেন, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিমকে ঢুকতে দেননি?
এ অন্যায়ের কোনও ক্ষমা নেই।তার মধ্যে আবার চিৎকার করছে। তিনি বলেন, “আমি বলতে পারি না সকাল থেকে কি কি খেয়ে আসে সব চিৎকার করবার আগে।বলতে গেলে নিজের মুখ বন্ধ হয়ে আসে।ভদ্রতা করা মানে দুর্বলতা করা নয়। শুভেন্দু সকাল থেকে গাড়ির সঙ্গে ছিল।ও যেহেতু পরিবহনমন্ত্রী। সকাল আটটা থেকে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং যাওয়ার জন্য প্লেন-হেলিকপ্টার আমাদের নেই। এসব অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হয়।অ্যারেঞ্জমেন্ট করে গেছি। সুব্রতাদার প্রোগ্রাম ছিল একটার সময় পাঁচলা ব্লকে।সেই প্রোগ্রামটা কমিটমেন্ট করা আছে।প্রোগ্রামটা করে যেতে হয়েছে। যখন বেরিয়েছি তখন স্বরূপ আমার সঙ্গে ছিল।তাছাড়া আমার সঙ্গে কেউ ছিল না জিজ্ঞাসা করুন পুলিশকে।আমার একটা গাড়ি পর্যন্ত ছিল না।সুব্রত সাহার গাড়িটা নিয়ে আমি গেছি স্পটে।বেরিয়ে গিয়ে বেলা একটা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত আমরা করেছি।পাঁচ ঘণ্টা নয়।মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে অতগুলি বডি পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, পোস্টমর্টেম করবার আগে প্রত্যকটি পরিবারের জন্য গাড়ি রেডি করা হয়েছে।কোন গাড়িতে কে কোথায় যাবে?এমনকী প্লাস্টিকের পলিথিনটাও কিনে দেওয়া হয়েছে।সাদা কাপড়টা গায়ে দেবে সেটাও কিনে দেওয়া হয়েছে।সাথে ডেথ সার্টিফিকেট ও পাঁছ লক্ষ টাকা করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।এমন দেখাতে পারবেন-একটা ইনসিডেন্ট।”
মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, “লোক কত হ্যারাজ হয়।যান, গিয়ে দেখে আসুন আমরির ইনসিডেন্টে কত মানুষ কেউ বলতে পারবে এখনও পায়নি। প্রত্যেকে যখন যা কমিটমেন্ট করা হয় তাই সঙ্গে সঙ্গে করে দেওয়া হয়। আমাদের গরমেন্ট সিরিয়াসলি করে আমার অফিসাররাও সিরিয়াসলি করেছে।আমি একটা অ্যাডিশনাল এসপিকে দেখেছি মাথায় ঝরঝর করে রক্ত বেরোচ্ছে তার।আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম তুমি হাসপাতালে যাওনি?শুভেন্দু বলছিল, দেখো দেখো, দিদি ওর কপাল দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে।সে বলল, আগে কাজটা করেনি, তারপর হাসপাতালে যাব।এই ডেডিকেশনের মূল্য দেবেন?শুধু রাজনীতি।ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও।একটা কিছু নিয়ে মানুষের রাগ হতে পারে সেটা আমি আলাদা ভাবে দেখি।কিন্তু যারা বাজে মতলব নিয়ে আইন ভাঙবে পুলিশকে বলব আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।অন্যের সম্পত্তি ভাঙার অধিকার এদের নেই।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় একজন মারা যেতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পথ আছে, আপনি সেখানে যান। পুলিশে ডায়েরি করুন।কিন্তু হঠাৎ করে সেখানে গিয়ে দুটো মেশিন ভেঙে দিয়ে এলাম, হাসপাতালটা ভেঙে দিয়ে এলাম এটা কোনও সমাধানের পথ নয়।ভাঙচুরের ঘটনাটা সহ্য করা হচ্ছে বলে বেড়ে যাচ্ছে। ভাঙচুর এই নোংরা রাজনীতি আমি করতে দেব না।মানুষের বিপদে মানুষ আসুক হানড্রেড পারসেন্ট তাদের পাশে থাকব।আমি আবার বলেছি ক্রমাগত জিনিসটা অন্য। কিন্তু গায়ের জোরে যারা করে তাদের আমি সাপোর্ট করি না।”
তিনি বলেন, “ড্রাইভার একটা ইনসিডেন্ট করেছে, ড্রাইভারের ভুলেই হয়েছে, এটা পাপ।কে সাপোর্ট করে তাকে? একটা অ্যাকসিডেন্ট কি গরমেন্ট করতে যায়?এমন করে দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে আমি গিয়ে গাড়িটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে এসছি।ওরা অবশ্য ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।ওদের অভ্যাস আছে।এমন করছে।যেন দেখিনি আমরা। ঐখানে করিমপুরে ৭০টি বাচ্চা বাস অ্যাকসিডেন্টে মারা গেছিল।নদীতে পড়ে গেছিল।জলঙ্গীতে বাস অ্যাকসিডেন্টে পড়ে গেছিল অনেক বাস। বাস নদীতে পড়ে গেলে আর করা যায় না কিছু।নৌকাডুবি হয়েছিল কাকদ্বীপের নামখানায়।দু’জন মানুষ মারা গেছিল। অনেক বডি সেখানে পাওয়া যায়নি।আমি গেছিলাম, উল্টোডাঙায় একটা অ্যাকসিডেন্টের জায়গায় পরেশ, সুজিতরা নিয়ে গেছিল।কোথায় বডি, কে উদ্ধার হয়েছিল?আর ৩৫ ফুট নীচে একটা গাড়ি পড়ে গেছে কাঁদায় ডেবে গেছে, গাড়িটা ওঠাতে পারছে না, চারবার দড়ি ছিঁড়ে গেছে, তার কারণ গাড়ির ভিতর অনেক ডেডবডি ছিল, ভারী হয়ে গেছে।তারপর চারটি ক্রেন নিয়ে আসা হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, “তার মধ্যে ৫০জন ডুবুরি নিজের জীবন সঙ্কট করে গাড়ির নীচে নামানো হয়েছে।কত কষ্ট করে তারপর ওই গাড়িটা ধরেছে। গাড়িটাকে রেস্কিউ করেছে।একটা বেলার মধ্যে সব করে ফেলেছে।কোনও অ্যাপ্রিশিয়েশন নেই।সারাক্ষণ শুধু কুটুশ কুটুশ করা, আর পিছনে লাগা, আর মৃত্যু দেখার শকুনি হয়ে বসে থাকা।কবে কে মরবে আর ও টিভিতে ভাষণ দেবে।”
দুটো বাই-ইলেকশন হয়ে গেল দেখুন যদি কেউ অন্যায় করে আরে ইলেকশন অবজার্ভার তো আমার লোক নয় সে তো দিল্লি থেকে পাঠাচ্ছে। এবং বিজেপি সাপোর্টার না হলে তাদের কি পাথায় আমার তো মনে হয় না।সেন্ট্রাল ফোর্স ৩৫ না ৩৬ কোম্পানি সেন্ট্রাল ব্যাটেলিয়ন, বিজেপি-র অবজার্ভার সরি মানে ইলেকশন অবজার্ভার। আমি তো উলুবেড়িয়ায় পুলককে জিজ্ঞেস করলাম কটা রিপোল হয়েছে? বলল, না দিদি একটাও রি-পোল হয়নি।একথা বলে মমতা বন্দ্যোপাধায়ায় বিরোধীদের লক্ষ্য করে বলেন, “রি-পোলটা কেন হয়নি সেটাও তৃণমূল কংগ্রেসের দোষ।ভোটে জিতলেও তৃণমূল কংগ্রেসের দোষ।ওদের বুথে লোক না থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেসের দোষ।ও নেচে নেচে মিছিল করবে, সেই মিছিলে লোক আসছে না কেন সেটাও তৃণমূল কংগ্রেসের দোষ।ওদের কাজ হচ্ছে ফিল্ডে নেই।ফিল্ডে কয়েকটা মিটিং করে।আর টিভির সামনে মিছিল করে।টিভিতে ছবি তুলবে।”
এরপর মমতা বলেন, ঐ যে কাঠ দিয়ে জ্বলিয়ে রাখতে হয়।টিভি তো ২৪ ঘণ্টা চালিয়ে রাখতে হয়। কি খবর দেবে?যে যা করে সেটাই দেখায়। তা কি করবে চুল্লি পুড়ছে কাঠ দিয়ে যাচ্ছে।টিভির সামনে দাঁড়ালে যত বিপ্লব।ঐ টিভির সামনে।মিছিল কোথায় করবেন?টিভি যেখানে থাকবে।মিটিং কোথায় করবেন? টিভি যেখানে থাকবে।প্রতিবাদ কোনখানে করবেন? টিভির সামনে করব।আমাকে মেরেছে কোথায় বলবেন? টিভির সামনে বলব।যত বিপ্লব টিভির বাক্সে গুটিয়ে গেছে।ওই ছোট্ট বাক্সটার মধ্যে গুটিয়ে গেছে।ওই বাক্সটা যখন প্রচার দেবে না এদের কোনও অস্তিত্বই থাকবে না।এটা মাথায় রেখে দেবেন।”
ভোটের ফলাফল নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, “রেজাল্ট যাই হোক আমি এখনও মনে করি মানুষ যা দেবে আমার কাছে সেটাই আশীর্বাদ।মাথা পেতে নেব। মানুষের প্রতি আমার ভরসা আছে, আশা আছে, বিশ্বাস আছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হলেও তাকে নিয়ে কাদা মাখতে হবে!এটা রুটিন হয়ে গেছে একটা।”
Published on: ফেব্রু ১, ২০১৮ @ ০১:০৮