সবক শেখালেন দলনেত্রী মমতা, তাঁর হুঁশিয়ারি- যে যত বড় নেতাই হোন না কেন কোনও বেয়াদপি আর বরদাস্ত করা হবে না

এসপিটি এক্সক্লুসিভ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: ফেব্রু ১, ২০১৮ @ ০০:২৭

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৩১ জানুয়ারিঃ এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জননেত্রী বলা হচ্ছে কিংবা তাঁকে নিয়ে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে চর্চা হচ্ছে তার প্রমাণ কিন্তু আজ আর একবার পাওয়া গেল আলিপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির মিটিং-এ। কয়েকশো সংবাদ মাধ্যমের সামনে বুধবার তিনি যা করলেন তা দেশের কেন বিশ্বের অন্য যে কোনও রাজনৈতিক দল করতে গিয়ে দুবার ভাববে। দলের বলা যেতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসের পরিবারের কথা তিনি প্রকাশ্যে তুলে ধরে বুঝিয়ে দিলেন তিনি আজও আছেন সেই একই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবেই। যেখানে নেই ধান্দাবাজি, বদমায়েশি, অস্বচ্ছতা, অন্যায় কাজ। আর তাই তো তিনি এদিনের সভায় ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে যেমন বার্তা দিলেন ঠিক তেমনই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বাসন্তি-ক্যানিং-ভাঙরের নেতাতদের নাম ধরে প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে শেষবারের মতো সতর্ক করে দিয়ে সাফ জানিয়ে দিলেন, আর নয় অনেক হয়েছে। এবার কোনও অভিযোগ পেলেই তোমাদের আমি সরিয়ে দেব।

আসলে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে তাঁর কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল।যা নিয়ে তাঁকে চিন্তায় পড়তে হয়েছিল। বাম আমলে তাদের ট্রেড ইউনিয়ন কিভাবে একের পর এক শিল্প বন্ধ করে দিয়েছিল সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাল মতোই জানা আছে। ইদানীং রাজ্যে বেশ কয়েকজন শিল্পপতি বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তারা মূলত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে তাকিয়ে টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।অথচ দলের কিছু নেতার আচরন এ ক্ষেত্রে বিরূপ হয়ে উঠছে। এমনকী দলের ব্যাপারেরো একে অন্যের ব্যাপারে নাক গলাচ্ছে। এটাও তিনি পছন্দ করছেন না।

আর তাই এদিন তিনি জানিয়ে দেন, “তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে একটাই ইউনিয়ন থাকবে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।যে যত বড় নেতা-ব্যক্তি হন না কেন তাদের অন্যায় একবারের বেশি কিন্তু বরদাস্ত করব না।এটা মাথায় রাখতে হবে।আমায় কেউ ইউজ করতে পারবে না।এটা মাথায় রাখবেন।ইউজটা মানুষের স্বার্থে। মানুষ যেটা ভাল বুঝবে সেটা করতে হবে।”

মমতা বলেন, ট্রেড ইউনিয়নের নাম করে কথায় কথায় বনধ-হরতাল-জ্বালিয়ে দাও-পুড়িয়ে দাও ওই কালচার সিপিএম তৈরি করেছে, কংগ্রেস তৈরি করেছে, বিজেপি তো তৈরি করেছেই ওদের তো সহিষ্ণুতা-অসহিষ্ণুতা কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না। সুতরাং, ওরা করতে পারে। ওরা-আমরা এক নই। এদিন তিনি তাঁর মতো করে দলের নেতাদের রাজনীতির সংজ্ঞা তুলে ধরেন। ছাত্র পড়ানোর মতো করে নেতাদের বুঝিয়ে বলেন, “মনুষ্যত্বের রঙ যেখানে বিকাশ হয় তার নাম রাজনীতি। মানবিকতার যেখানে বিকাশ হয় তার নাম রাজনীতি।মনুষ্যত্ব ধ্বংস করার নাম রাজনীতি নয়।এটা মাথায় রাখবেন।”

ফের তিনি ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের লক্ষ্য করে বলেন, তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের ব্যাপারে খুব স্ট্রংলি বলছি আবার- “কারও ইন্ডিভিজুয়াল নেতৃত্বে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন চলবে না।দলটা দল দলের মতো করেই গড়তে হবে।আমি কোনও এদিক-ওদিক করব না, আমি চেঞ্জ করে দেব একদিনেই।”প্রবীর ব্যানার্জীকে চেয়ারম্যান করে দোলা সেনকে প্রেসিডেন্ট করে কমিটি করা হল তারা অফিসে বসবেন।তৃণমূল কংগ্রেস অফিসে তারা টাইম-টু-টাইম তারা বসবেন।এবং বক্সিদা, পার্থদা, সুব্রতদা, শোভনদারা সকলে আছে কোনও প্রবলেম হলে কথা বলে নেবেন।এটা ভাবার কারণ নয় বা কারণ নেই শুধু মমতাদি একা করে আর অন্য কেউ করে না তৃণমূল কংগ্রেস তা নয়।

নিজের রাজনোইতিক কর্ম প্রক্রিয়া তুলে ধুরে নেতাদের ফের বলেন, “আমার একটা টিম আছে।এই টিমটা আছে বলে আমি কাজটা করতে পারি।বক্সির কাজ বক্সি দেখে।পার্থর কাজ পার্থ দেখে।সুব্রতদার কাজ সুব্রতদা দেখে।ববির কাজ ববি দেখে।সব জেলায় অবজার্বভার করে দেওয়া হয়েছে।ববি, অরূপ, শুভেন্দু থেকে শুরু করে সবাই অবজার্ভার আছে।তারা প্রত্যেকে কিন্তু জেলার কাজ করে।এক একটা জায়গায় এক একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।অবজার্ভারদের কথা শুনবেন যেটা বলবে সেটা মনে রাখবেন।এটা দলের কথা বলছি।অবজার্ভাররা যাই করুক না কেন আমার সঙ্গে অবজার্ভ করে কথা বলে তবেই তারা করে।” তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা সিস্টেম আছে।আমার পুরনো কর্মীরা যারা ভাল কাজ করেছেন তারা যাতে ডিপ্রাইভড না হন সেটা দেখবেন।

এরপর তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তি-ক্যানিং-ভাঙর নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। নাম ধরে বলে ওঠেন, “সৌকত তোমার বিরুদ্ধে আমার কমপ্লেন আছে। তোমার, জয়ন্ত নস্কর, গোবিন্দ নস্কর-তোমরা যা করছ ঠিক করছ না।সরি টু সে, মানে অনেকবার বলেছি আর কিন্তু বলব না এবার কিন্তু তোমাদের পজিশন থেকে সরিয়ে দেব। আমি শেষবারের মতো বলে দিলাম। লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে গেলাম।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “যদিও আমি জানি গণ্ডগোলটা তৃণমূল কংগ্রেসের নয়।একটি বাচ্চা মারা গেছে খুবই দুঃখের।দুটো পাড়ার গণ্ডগোল।কিন্তু টিভি চ্যানেল, সংবাদ মাধ্যম তাকে তৃণমূলের গণ্ডগোল বলে চালিয়েছেন।তোমাদের বাসন্তি-ক্যানিং-ভাঙরে এ রোজ রোজ গণ্ডগোল কিন্তু আর সহ্য করা হবে না।কয়েকটা ব্ল্যাক স্পট আছে।কোনও গণ্ডগোল হলে আমি তোমাদের ধরব।”

শেষে মমতা বলেন, আমাদের যদি ভুল-ত্রুটি থাকে তাহলে আমাদেরই সংশোধন করে নিতে হয়।এটা আমি বিশ্বাস করি।এ জন্য সব টভি চ্যানেলের সামনে কথাগুলি বলছি। কারণ, আমি যদি ওদের সামনে না বলি আপনাদের কার কাছ থেকে যে কি নিউজ নেবে আর সেটা এ-টাকে বি করবে আর বি-টাকে জেড করবে।তার থেকে বেটার সামনা-সামনি করা। আমি ডাইরেক্ট কাজ পছন্দ করি।আর কোনও দল মিডিয়ার সামনে দলের মিটিং করতে পারে না। আমরাই একমাত্র পারি। কারণ, আমরা স্বচ্ছ এবং সদর্থক।

Published on: ফেব্রু ১, ২০১৮ @ ০০:২৭

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

+ 9 = 10