এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ ছিল রাস্তায় পড়ে।পথ শিশুরা ইট ছুঁড়ে মারছিল।তখন সে শুধুই এক শিশু। ঠিক মতো ছোটারও সামর্থ্য ছিল না। ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেনিং সেন্টারের বাইরে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ কর্মীরা। যত্ন করে কোলে তুলে নিয়ে আসে প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ভিতর। এর পর যা হল তা এক কথায় ইতিহাস।
পথভ্রষ্ট নিঃসঙ্গ এক ভারতীয় কুকুর যে সঠিক প্রশিক্ষন পেলে নিজেকে এভাবে শুধু বদলেই ফেলতে পারে না সেরার শিরোপাও ছিনিয়ে আনতে পারে।তা করে দেখিয়েছে আজ থেকে ১৮ মাস আগে রাস্তা থেকে উঠে আসা পুলিশের সেবায় যত্নে পালিত হওয়া এক ভারতীয় সংকর-জাতের অতি সাধারণ মানের এক কুকুর।পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কাছে সে সত্যিই আজ হয়ে উঠেছে আশার আলো। “আশা” নাম রাখাও সার্থক হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ অভিজাত বোমা ও ড্রাগ স্নিফিং স্কোয়াডে দখল করে নিয়েছে শীর্ষ স্থানটি।
অসম্ভবকে সম্ভব করে “আশা”
১) পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ প্রশিক্ষন অ্যাকাডেমির সিনিয়র আধিকারিক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেন-“১৮ মাস আগে প্রশিক্ষন কেন্দ্রের বাইরে রাস্তার উপর একটি কুকুর ছানাকে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন আমাদের কর্মীরা। রাস্তায় কয়েকটি শিশু কুকুর ছানাটিকে সমানে ইট ছুঁড়ছিল। কুকুরটি এত ছোট ছিল যে ভয়ে সে কোনওদিকে দৌড়তে পারছিল না। এক ধারে গুটিশুটি হয়ে শিশুদের ইটের আঘাত সয়ে যাচ্ছিল। আমাদের কর্মীরা কুকুর ছানাটিকে যত্নের সঙ্গে প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ভিতর নিয়ে এসেছিলেন। সেই সময় কুকুরটির শরীর দিয়ে সমানে রক্ত ঝরছিল। প্রাথমিক সুশ্রুষার পর সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।”
২) পুলিশ আধিকারিকরা এরপর কুকুরটির নাম দেন “আশা”। রাস্তা থেকে উঠে আসা এক নিঃসঙ্গ কুকুর যত দিন যেতে লাগে সকলের মধ্যে আশা দেখাতে থাকে। তখন পুলিশ প্রশিক্ষন কেন্দ্রের আধিকারিকরা মনে করেন এবার যদি “আশা”কে ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুরু হয়ে যায় সেই ছোট্ট “আশা”র জীবনের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।
৩) পুলিশ আধিকারিক থেকে কর্মী সকলেই মনে করেছিল -ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সে কতটা নিতে পারবে নিজেকে কতটা তৈরি করতে পারবে সেটা তার ব্যাপার। এর বেশি কিছু কিন্তু পুলিশ কর্মীরা তখনও বুঝতে পারেনি। কিন্তু “আশা” সেই সময় থেকেই বুঝে গেছিলে এখানে থাকতে হলে মাথা উঁচু করে থাকতে হবে আর তার জন্য শীর্ষে থাকতে হবে। কিন্তু অত সহজ ছিল না এক ভারতীয় কুকুরের কাছে। যেখানে তার সামনে জার্মান শেফার্ড থেকে দূরন্ত ল্যাব্রাডর-এর মতো স্নিফার ডগ- যারা বম্ব এবং ড্রাগ স্কোয়াড-এ বিশেষজ্ঞ কুকুর বলে পরিচিত।
চ্যালেঞ্জ জিতে TOP SNIFFER DOG “আশা”
১) কঠিন লড়াই আর পরিশ্রম শুরু করে দিল “আশা”। রাস্তা থেকে উঠে আসা এক নিঃসঙ্গ সংকর-জাতির কুকুর “আশা” নিল চ্যালেঞ্জ। পুলিশ প্রশিক্ষকরা তাকে যেমন যেমন ভাবে প্রশিক্ষন দিয়ে গেছেন “আশা” তাদের প্রতি মুহূর্তে অবাক করে দিয়েছে। জার্মান শেফার্ড, ল্যাব্রাডর-রা যে ধরনের প্রশিক্ষন করে থাকে “আশা”ও তাদের সঙ্গে সমান তালে সেই একই প্রশিক্ষন নিয়ে গেছে। হাল ছাড়ে নি।
২) পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমির প্রধান সজল মণ্ডল বলেন, নানা ধরনের রঙ মিশিয়ে তা উড়িয়ে দিয়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হয় “আশা”কে। আশ্চর্যের বিষয় “আশা” সেখানে আমাদের অবাক করে দিয়েছে। দেখা গেছে সেখানে টিএনটির মত ড্রাগ ও বিস্ফোরকগুলি “আশা”-র গন্ধের অনুভূতির সঙ্গে মেলেনি।সেখানেও সফল হয়েছে আমাদের “আশা”।
৩) যত দিন গেছে “আশা” চ্যালেঞ্জই শুধু জিতে যায়নি নিজেকে জার্মান শেফার্ড আর ল্যাব্রাডরের চেয়েও আরও দক্ষ প্রমাণ করে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানেই ওর শ্রেষ্ঠত্ব। ওর জাতের কুকুরদের মধ্যে “আশা” অনেক বেশি দক্ষ তা সে প্রমাণ করেছে। বলেন সজলবাবু। “আশা” এখন ছয় ফুট পর্যন্ত লাফাতে পারে। অতিক্রম করতে পারে হার্ডলও। সে এখন আমাদের সবচেয়ে দ্রুতগামী রানার। যে কিনা আমাদের ৩০টি শক্তিশালী ইউনিটের সঙ্গে কাজে যোগ দিয়েছে।জানান অ্যাকাডেমির প্রধান সজল মন্ডল।ঐ এখন আমাদের TOP SNIFFER DOG।ছবি-এএফপি