উত্তরাখন্ড সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চারধাম ও হেমকুণ্ড সাহেব-এ মোট ৪৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৮৩জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছেন।
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৮ অক্টোবর: এ বছর চারধাম যাত্রায় রীতিমতো রেকর্ড সংখ্যক তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটেছে।গত কয়েক বছর সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গড়েছে এক নয়া রেকর্ড। তীর্থযাত্রীর সংখ্যা ৪৩ লক্ষ পার করে দিয়েছে। উত্তরাখণ্ড সরকারের হিসাব অনুযায়ী চারধাম যাত্রায় এবার সংখ্যাটা দাড়িয়েছে ৪৩ লক্ষ ৬ হাজার ১৯জন।এছারাও আছে হেমকুণ্ড সাহেব, সেখানেও এবার রেকর্ড সংখ্যক আগমন হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি তীর্থযাত্রী গিয়েছেন বদ্রীনাথ ধামে
উত্তরাখন্ড সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত চারধাম ও হেমকুণ্ড সাহেব-এ মোট ৪৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৮৩জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছেন। সবচেয়ে বেশি দর্শন করেছে বদ্রীনাথ ধাম। সেখানে এ পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৭৩জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছেন। তবে এখনও বদ্রীনাথ ধাম খোলা আছে। তবে বাকি তিনটি ধামই কিন্তু বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর। এরপরেই আছে কেদারনাথ ধাম- সেখানে দর্শন করেছেন ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৪০জন। এরপর তৃতীয় স্থানে আছে যমুনোত্রী। সেখানে দর্শন করেছেন ৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৩৭১জন। চারধাম যাত্রায় তীর্থযাত্রী আগমনের নিরীখে চতুর্থ স্থানে আছে গঙ্গোত্রী, সেখানে দর্শন করেছেন ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৩৫জন। তবে আরও এক তীর্থক্ষেত্র আছে হেমকুণ্ড সাহেব, এটি শিখদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও পবিত্র। সেখানে এ বছর ১ লক্ষ ৯০ হাজার ২৬৪ জন দর্শন করেছেন।
গঙ্গোত্রী
উত্তরাখণ্ডে উত্তরকাশী জেলায় অবস্থিত গঙ্গোত্রী একটি শহর ও নগর পঞ্চায়েত। এটি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত একটি হিন্দু তীর্থ শহর। গঙ্গোত্রী হিমাদ্রি হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে ৩,১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।এটি সেই জায়গা যেখানে গঙ্গা নদী একটি বরফ-সজ্জিত অববাহিকা থেকে চূড়া করে এবং ত্রিবেণী সঙ্গমে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়, যেখানে তারা এখন গঙ্গা নামে একটি নদী হিসাবে বিবেচিত হয়। গঙ্গোত্রী হল ভারতের ছোট চার ধাম তীর্থযাত্রা সার্কিটের চারটি স্থানের মধ্যে একটি, যেটি হিন্দুদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। হিন্দু দেবতা গঙ্গা মায়ের জন্মস্থান হিন্দুরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পূজা করে আসছে।এখানে এবার ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৩৫জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছেন।
যমুনোত্রী
যমুনোত্রী হচ্ছে যমুনা নদীর উৎস এবং হিন্দু ধর্মে যমুনা দেবীর আসন। এটি ৩,২৯৩ মিটার (১০,৮০৪ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। গাড়ওয়াল হিমালয়ের পাদদেশে এবং প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল)-এ অবস্থিত উত্তরকাশী উত্তর। এটি ভারতের ছোট চার ধাম তীর্থস্থানের চারটি সাইটের মধ্যে একটি। যমুনোত্রির পবিত্র মন্দির, যমুনা নদীর উৎস, গাড়ওয়াল হিমালয়ের পশ্চিমতম মন্দির, এটি বান্দর পুঞ্চ পার্বতের এক প্রান্তে অবস্থিত। যমুনোত্রির প্রধান আকর্ষণ হ’ল যমুনা দেবীকে উৎসর্গ করা মন্দির এবং জাঙ্কি চত্তির পবিত্র তাপ স্প্রিংস (৭ কিমি দূরে)। এখানে এ বছর ৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৩৭১ তীর্থযাত্রী দর্শন করেছেন।
কেদারনাথ ধাম
কেদারনাথ মন্দির হিন্দুদের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান। এটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গাড়োয়াল হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত কেদারনাথ শহরে মন্দাকিনী নদীর তীরে স্থাপিত একটি শিব মন্দির। এখানকার তীব্র শীতের জন্য মন্দিরটি কেবল এপ্রিল মাসের শেষ থেকে কার্তিক পূর্ণিমা অবধি খোলা থাকে। শীতকালে কেদারনাথ মন্দিরের মূর্তিগুলিকে ছয় মাসের জন্য উখিমঠে নিয়ে গিয়ে পুজো করা হয়। এই অঞ্চলের প্রাচীন নাম ছিল কেদারখণ্ড; তাই এখানে শিবকে কেদারনাথ (অর্থাৎ, কেদারখণ্ডের অধিপতি) নামে পূজা করা হয়। মন্দিরটি খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ-নবম শতাব্দীর তামিল নায়ানার সন্তদের দ্বারা পাডল পেত্রা স্থলম বা মহাদেশের ২৭৫টি অতি পবিত্র শিবক্ষেত্র হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।এখানে এ বছর ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৪০ জন তীর্থযাত্রী দর্শন করেছেন।
বদ্রীনাথ ধাম
বদ্রীনাথ মন্দির হল উত্তরাখন্ডের বদ্রীনাথ শহরে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির। এই মন্দিরের অপর নাম বদ্রীনারায়ণ মন্দির। এটি হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর মন্দির। বদ্রীনাথ শহর ও বদ্রীনারায়ণ মন্দির ‘চারধাম’ ও ‘ছোট চারধাম’ নামে পরিচিত তীর্থগুলির অন্যতম। বদ্রীনাথ মন্দির ‘দিব্য দেশম’ নামে পরিচিত ১০৮টি বৈষ্ণব তীর্থেরও একটি। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষভাগ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ছয় মাস এই মন্দিরটি খোলা থাকে। শীতকালে হিমালয় অঞ্চলের তীব্র প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য ওই সময় এই মন্দির বন্ধ রাখা হয়। উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় গাড়োয়াল পার্বত্য অঞ্চলে অলকানন্দা নদীর তীরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,১৩৩ মি (১০,২৭৯ ফুট) উচ্চতায় এই মন্দিরটি অবস্থিত। বদ্রীনাথ ভারতের জনপ্রিয় তীর্থগুলির মধ্যে একটি। এখানে এ বছর ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার ৪৭৩জন তীর্থযাত্রী দর্শন করতে এসেছেন।