ঘরে দু’বছের শিশু, শহীদ সিদ্ধার্থের চিতার সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা আঁকড়ে সমানে কেঁদে চলেছেন বায়ুসেনা পত্নী

Main দেশ
শেয়ার করুন

সংবাদদাতা-অনিরুদ্ধ পাল

Published on: মার্চ ১, ২০১৯ @ ২১:৪০

এসপিটি নিউজঃ   আজ এক ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় দিন হয়ে রইল আমাদের প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে। আজ এমন এক দিন যেদিন আমরা একদিকে অভিনন্দন ভর্তমানের বীর যোদ্ধাকে ফিরে পেলাম। আর এক দিকে আর এক বীর যোদ্ধা সিদ্ধ্ররথ বশিষ্টকে চিরদিনের মতো হারালাম। একদিকে যখন এক বায়ুসেনার বীর যোদ্ধার ঘরে ফেরা নিয়ে আমরা বাজি ফাটিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভেসেছি আর একদিকে তখন শ্মশানে চিতার আগুনে মানুষের চোখের জলে বিদায় জানালাম আমাদের আর এক বীর যোদ্ধা সন্তানকে।তবে দুটি স্থানেই একটা মিল দেখা গেল তা হল- ভারতবাসী উভয়ের উদ্দেশ্যে ভারত মাতার বীর সন্তা্ন বলেস্লোগান দিয়ে গেছে। স্যালুট জানিয়েছে উভয়কে একইভাবে।

আসলে সিদ্ধার্থের শহীদ হওয়ার খবর সংবাদ মাধ্যমে সেভাবে স্থান করে নিতে পারেনি । কারণ পাকিস্তানের হাতে বন্দি হওয়া উইং কম্যান্দার অভিনন্দঙ্কে নিয়ে সকলে খুব তেনশনে ছিলেন। কি করবে তাঁকে নিয়ে পাকিস্তান- ছেরে দেবে না কি অন্য কিছু। এই নিয়ে জল্পনা চলছিল। এরই মধ্যে শহীদ সিদ্ধার্থের খবর আসে। ভারতীয় সীমায় ঢুকে পড়া পাকিস্তানি বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা MI-17 দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ভেঙে পড়ে ওই হেলিকপ্টার। শহীদ হন ভারতীয় বায়ুসেনার সেক্টর- ৪৪ এর পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার সিদ্ধার্থ বশিষ্ট। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁর পার্থিব দেহ বৃহস্পতিবার চন্ডীগড়ে ১২ উইং এয়ারফোর্স স্টেশনে পৌঁছয়। এয়ার কম্যান্ডার এওসি জানান- অন্তিম সংস্কারের সময় তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে।

সিদ্ধার্থের কাকা সতীশ বশিষ্ট জানিয়েছেন- “বুধবার যখন টিভিতে হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ার খবর দেখি চমকে গেছিলাম। এরপর আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলার পরা আমরা আমাদের আশঙ্কাই সত্যি হয়।” তিনি জানিয়েছেন, “বুধবার সকালে ভারতীয় সীমায় ঢুকে পড়েছিল পাক বিমান। তার পিছনে ধাওয়া করার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে সিদ্ধার্থের হেলিকপ্টার। কিন্তু দুর্ঘটনাটি কিভাবে ঘটল সেটা ঘটনার তদন্তের পরই জানা যাবে।” তিনি আরও জানিয়েছেন- সিদ্ধার্থের পরিবার সেনাবাহিনীতেই সেবা করে গেছে।

আজ সন্ধায় সেনা বাহিনীর সম্মানের সহিত বীর যোদ্ধা স্কোয়াড্রন লিডার সিদ্ধার্থের অন্তিমসংস্কার হয়। এইসময় পাশে ছিলেন শহীদ সিদ্ধার্থের স্ত্রী আরতি বশিষ্ট। বাবা জগদীশ বশিষ্ট ৩১ বছরের শহীদ সন্তানের মুখাগ্নি করেন। সিদ্ধার্থ ২০১৮ সালে কেরলে আসেন। এরপর সেখানে রেস্কিউ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। চন্ডীগড়ে শহীদ সিদ্ধার্থের অন্তিম সংস্কারে বহু মানুষ যোগ দেন। চোখের জলে তারা বিদায় দেন ভারত মাতার বীর শহীদ পুত্রকে। এই সময় গোটা শ্মশান ঘাট ‘ভারত মাতা কি জয়’ ‘সিদ্ধার্থ অমর রহে’ এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। বায়ুসেনার তফে স্কোয়াড্রন লিডার শহীদ সিদ্ধার্থকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। শহীদের সম্মানে ২১বার গুলি ছোঁড়া হয়।

৩১ বছরের ছেলে এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যাবে এটা কেউ মানতে পারছেন না। বাবা পিএনবি ব্যাঙ্ক থেকে অবসর নিয়েছেন। ছেলের জন্য গর্ব করতেন। আগামিদিনেও করবেন। কিন্তু তাঁর আদরের সেই ছেলেকে আর কোথায় পাবেন? বাবা বলে আর তো শুনতে পাবেন না তাঁর বীর ছেলের গলার আওয়াজ। এসব বলতে বলতে চোখের জল মুছছিলেন জগদীশ বশিষ্ট। স্ত্রী আরতি এদিন শহীদ পতির মৃতদেহ জড়িয়ে ধরে সমানে কাঁদছিলেন। তিনি নিজেও একজন বায়ুসেনার স্কোয়াড্রন লিডার যোদ্ধা। কিন্তু আজ যে সব কিছু ওলোট-পালোট হয়ে গেল। ঘরে ভিতর থেকে একটা কথাই শোনা যাচ্ছিল-‘হামারা বনি কাহা গয়া’। বনি হল সিদ্ধার্থের বাড়ির নাম। এই নামেই তাঁকে সকলে ডাকতেন।

বৃহস্পতিবার শহীদ সিদ্ধার্থের পার্থিব শরীর দিল্লি থেকে নিয়ে চন্ডীগড় নিয়ে আসেন স্ত্রী আরতি। তিনি ভোপালে কর্মরত আছেন। তাঁদের একটি দু’বছরের সন্তান আছে।শুধু রইল না তাদের সবচেয়ে আপনজন। যে তাদের ছেড়ে চলে গেল অনেক দূর।

Published on: মার্চ ১, ২০১৯ @ ২১:৪০


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + 6 =