সংবাদদাতা-বাপ্পা মন্ডল ছবি-রামপ্রসাদ সাউ
Published on: মার্চ ৩০, ২০১৮ @ ২৩:১৯
এসপিটি নিউজ, গাডরাশোল, ৩০ মার্চঃ এই সেই গাডরাশোলের গভীর জঙ্গল। যেখানে দিনের বেলাতেও ঠিক মতো আলো পৌঁছয় না। এই জঙ্গলের ভিতর আজও রয়েছে সেই বড় পাইপ। যা এলাকায় ‘কিষেণজির গুপ্তঘাঁটি’ নামে পরিচিত। একদিন এই গুপ্তঘাঁটি থেকেই মাওবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে গেছিলেন তিনি। কিষেণজির সেই গুপ্তঘাঁটির ভিতর এদিন আস্তানা গেঁড়েছিল ধূর্ত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তাকে ধরতে আয়োজনের ত্রুটি রাখেনি বন দফতর। কিন্তু বাঘটি সব কিছু ব্যর্থ করে দিয়ে জাল ছিঁড়ে বন কর্মীদের মাথার উপর দিয়ে লাফ মেরে গভীর জঙ্গলের দিকে ছুটে পালিয়ে গেল। ফলে নাগালে পেয়েও বাঘ ধরা পড়ল না জালে।
শুক্রবার বন দফতরের কাছে খবর আসে বাঘটি মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল থানার ধেড়ুয়া অঞ্চলের বাঘঘরা গ্রাম সংলগ্ন গাডরাশোলের জঙ্গলে আছে। খবর পাওয়া মাত্রই স্থানীয় বন আধিকারিক পূরবী মাহাতোর নেতৃত্বে বন কর্মীরা সেই জঙ্গলের পথে পা বাড়ায়। যে দলে ছিলেন সুন্দরবন থেকে আসা একটি ট্র্যাঙ্কুলাইজেশন দল। যার নেতৃত্বে পোড় খাওয়া ট্র্যাঙ্কুলাইজেশন কর্মী মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস।
তাদের হাতে ছিল বন্দুক, মোটা তারের জাল। সঙ্গে ছিল বাঘটিকে অচেতন করার জন্য চেতনা নাশক ওষুধ। সব কিছু নিয়ে তারা পৌঁছে যায় সেই ‘কিষেণজির গুপ্তঘাঁটি’ নামে পরিচিত বিশাল আকারের কালভার্টের কাছে। বাঘটি তখনও সেখানে বর্তমান ছিল।মুখটি বন কর্মীরা জাল দিয়ে আটকে ফেলে।যাতে কোনওভাবেই সে পালাতে না পারে।এইসময় সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে গ্রামবাসী কাউকে সেখানে ভিড়তে দেওয়া হয়নি। এক কিলোমিটার আগে থেকে পুলিশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়।
এবার শুধু অপেক্ষার পালা। বিকেল ৪টে ২০ মিনিট নাগাদ ঐ কালভার্টের মুখে জাল দিয়ে আওটকায় বন কর্মীরা। বাঘটিকে দেখার জন্য অধীর আগ্রহে প্রহর গোনা শুরু হয়ে গেছে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে। এবার তাহলে বাঘ ধরা পড়ছেই। আর তার পালানোর জো নেই। একদিন এই গুপ্তঘাঁফট ঘিরে ফেলেই কিষেণজির বাহিনীরজ সঙ্গে পুলিশের গুলির লড়াইয়ের পর নিহত হয়েছিলেন ঐ মাওবাদী নেতা। এদিন অবশ্য বাঘটিকে কাবু করতে পারলেন না অভিজ্ঞ বন কর্মীরা। তারা যখন ভেবে নিয়েছে বাঘটি তাদের জালে ধরা পড়ছেই ঠিক সেই সময় ঘড়ির কাটায় তখন ৪টে ৪০ মিনিট। চারিদিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান করে ভয়ানক এক গর্জন করে সেই গুপ্তঘাঁটির ভিতর থেকে মারল এক ভয়ানক লাফ। যার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন উপস্থিত বন কর্মীরাও।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ তখন থর থর করে কাঁপছে। চোখের পলক ফেলার আগেই বাঘটি এমন লাফ মারল তাতে বন কর্মীদের সেই জাল ছিঁড়ে ছুটে পালিয়ে গেল। চোখের নিমেষে চাউলকুড়ার জঙ্গলের ভিতর মিলিয়ে গেল। বন আধিকারিক এত কাছ থেকে বাঘটিকে দেখে তখনও ভয়ে কাঁপছেন। সামান্য চোটও পেয়েছেন তিনি। তাঁর চোখে-মুখে তখনও আতঙ্কের রেশ লেগে আছে।
এই ঘটনার পর সেই কালভার্টের কাছে গিয়ে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। অনেকেরই জানা ছিল না এই সেই কিষেণজির গুপ্তঘাঁটি।
Published on: মার্চ ৩০, ২০১৮ @ ২৩:১৯