কিশোর কুমারের জীবন জুড়ে ছিল ৪ সংখ্যার দাপট

দেশ বিনোদন
শেয়ার করুন

Published on: আগ ৪, ২০১৮ @ ২২:১৩

এসপিটি নিউজ ডেস্কঃ এ এক অদ্ভূত কাণ্ড! কারও জীবনে এমনটা খুব কম দেখা গিয়েছে। কিন্তু কিশোর কুমারের জীবনে সেটাই ঘটেছে।আজ কিশোর কুমারের ৮৯তম জন্মদিনে অনেকেই তাঁর নানাভাবে স্মৃতিচারণা করছেন। তিনি হিন্দি গানে নিজেকে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন, হিন্দি সিনেমায় দেবানন্দ থেকে শুরু করে রাজেশ খান্না, অমিতাভ বচ্চনের লিপে তাঁর অজস্র গান জনপ্রিয় হয়েছে। এমন কত কি। কিন্তু তাঁর জীবন জুড়ে ছিল ৪ সংখ্যার দাপট। অনেকেই ভাবছেন সেটা আবার কেমন!

আসুন তাহলে খোলসা করে বলি। মহান এই সঙ্গীতশিল্পীর জন্ম হয়েছিল ১৯২৯ সালের ৪ঠা আগস্ট। ঠিক ৪টের সময়। এটা একটা।

তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান।সবথেকে বড় ছিলেন অশোক কুমার, তারপর দিদি সীতাদেবী, এরপর আর এক দাদা প্নুপ কুমার এবং চতুর্থ ছিলেন তিনি। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল আভাস কুমার গাঙ্গুলি।

এরপর তাঁর জীবনে যে ৪ সংখ্যা গ্রাস করে তা হল-তিনি ৪বার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে করেন রুমা গুহঠাকুরতাকে। এরপর বিয়ে করেন মধুবালাকে। এরপর যোগিতাবালীকে। সবশেষে অর্থাৎ চতুর্থ বার বিয়ে করেন লীনা চন্দাভারকরকে। তাহলে দেখা গেল কিশোর কুমারের ছিল চার বউ। এর মধ্যে কিশোরকুমার-রুমা গুহঠাকুরতার সন্তান হল অমিত কুমার। অর্থাৎ অমিত কুমার কিশোর কুমারের প্রথম সন্তান। তিনি বাবার মতো অত জনপ্রিয় না হলেও সঙ্গীত জগতে তিনিও বেশ কিছু হিট গান গেয়েছেন। কিশোর কুমারের ছোট ছেলে হলেন সুমিত কুমার। যাঁর মা হলেন লীনা চন্দাভারকর।

এরপর কিশোর কুমারের চার নম্বর কাহিনি হল তিনি ৪টি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে একটি সকলে প্রায় জানেন-লুকোচুরি।যেখানে তাঁর নিজের কণ্ঠে গাওয়া একটি গান “এক পলকে একটু দেখা…” আজও সকলের মুখে মুখে ফেরে।

ছোটবেলা থেকেই কিশোর বিখ্যাত গায়ক কুন্দনলাল সায়গলের একজন বড় ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন।তাঁর গান তিনি অনুকরণ করতেন। বাড়ির লোক তাঁকে সেসময় দাদা অশোক কুমারের বিখ্যাত গান “মেঁ বন কে পন্থী বন বন কে” গাইতে বলতেন।

দাদা অশোক কুমারের সাফল্য তাঁকে হিন্দি সিনেমামুখী করেছিল। যদিও তাঁর সিনেমায় খুব একটা আগ্রহ ছিল না যতটা ছিল সঙ্গীতে। সেইসময় কিশোর কুমার কে এল সায়গলে নকল করে গাইতেন। তাঁকে সে রাস্তা থেকে বের করে আনেন শচীন কর্তা। তিনি কিশোরকে বলেন-তুমি তোমার নিজস্ব স্টাইলে গাও। দেখবে তোমার ভালো হবে। কিশোর শুরু করেন তাঁর নিজস্ব স্টাইলে গাওয়া শুরু করেন।শুরু হয় পথ চলা।

কিশোর কুমারের গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল গলাকে ভেঙে গান গাওয়া। সেইসময় সঙ্গীত জগত দাপাচ্ছে রফি ও মুকেশ সাহেব। এরই মধ্যে কিশোর কুমার নিজের জায়গা করে নেন। সেসময় তাঁর প্রতিভাকে বুঝতে পেরেছিলেন খেমচাঁদ প্রকাশ। তাঁর সুরে গান গেয়ে কিশোর কুমার হিন্দি সিনেমায় পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পান। এছাড়াও তাঁর সঙ্গীত জীবন জুড়ে যাঁদের ছায়া ছিল তাঁদের মধ্যে রবি এবং দুই বিশিষ্ট গীতিকার মজরু সুলতানপুরি ও শৈলেন্দ্র।

ষাটের দশক কিশোর কুমারের কাছে দুঃসময় নিয়ে এসেছিল। ১৯৬৬সালে শচীন দেব বর্মনের পুত্র রাহুল দেব বর্মনের সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। যদিও তাঁর প্রথম সুপারহিট সিনেমা ‘তিসরি মঞ্জিল’এ কীশোর কোনও গান গাওয়ার সুযোগ পাননি। যদিও ১৯৬৮ সালে ‘পড়শন’ সিনেমায় রাহুল দেব বর্মনের সুরে তিনি বেশ কয়েকটি হিট গান গান।

এরপর কিশোর কুমার হয়ে ওঠেন সবার কাছে কিশোরদা। ধীরে ধীরে হিন্দি সিনেমায় সঙ্গীতের জায়গা পাকাপাকি করে নেন। ১৯৬৯ সালে শক্তি সামন্তর ‘আরাধনা’ শুভমুক্তি পায়। নায়ক ছিলেন নবাগত রাজেশ খান্না। যেখানে কিশোরদা তিনটি গান গেয়েছিলেন। আর তিনটি গান তো আজ ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। সুপারহিট হয় গান তিনটি। যার মধ্যে একটি গান-‘কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা’ লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে গান। তাঁর অপর দু’টি গান ছিল ‘রূপ তেরা মস্তানা’ এবং ‘মেরা সপনো কি রানী’। দ্বিতীয় গানটির জন্য কিশোরদা প্রথম বার ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান।

সেইসময় রাজেশ খান্না, শশী কাপু, ধর্মেন্দ্র, রণধীরজ কাপুর, সঞ্জীবকুমার এবং দেবানন্দের জন্য গান গেয়েছেন। রাহুল দেব বর্মনের সুরে ‘বম্বে টু গোয়া’ সিনেমায় প্রথমবারের জন্য অমিতাভ বচ্চনের জন্য গান। ১৯৭৩ সালে ‘অভিমান’ সিনেমায় কিশোর কুমারের গাঙ্গুলি তো লিজেন্ড হয়ে গিয়েছে।এরফলে মেগাস্টার অমিতাভের লিপে তিনি গান গেয়ে নেপথ্য গায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

এছাড়াও গীতিকার আনন্দ বক্সী, সুরকার লক্ষীকান্ত পেয়ারালাল আর কিশোরকুমার জুটি সেসময় রাজেশ খান্না অভিনীত সিনেমার জন্য একাধিক সুপারহিট গান উপহার দেন। যার মধ্যে নাম করতে দাগ, রোটি, হাথি মেরে সাথির মতো সিনেমা। দাগ সিনেমার সেইগান তো সেইসময় সুপারহিট হয়ে যায়-‘মেরে দিল মে আজ’।

কল্যানজী-আনন্দজীর সুরেও তিনি বেশ কয়েকটি সুপারহিট গান গান। যার মধ্যে অবশ্যই আসবে ‘কোরা কাগজ’ সিনেমার “মেরা জীবন কোরা কাগজ”, ১৯৭৫ সালে ‘ফারার’ সিনেমায় “ম্যা পেয়াসা তুম”, ১৯৭৮ সালে ‘মুকাদ্দর কে সিকান্দর’ সিনেমায় “ও সাথী রে” গাঙ্গুলি। যা আজ লিজেন্ড হয়ে আছে।

একই সঙ্গে কিশোরদা প্রচুর বাংলা চলচ্চিত্রে একাধিক হিট গান গেয়েছেন। উত্তম কুমারের জন্য তিনি একাধিক সুপারহিট বাংলা সিনেমাতেও সুপারহিট গান গেয়েছেন। যার মধ্যে আছে রাজকুমারী, অমানুষ, আনন্দ আশ্রম এবং ওগো বধূ সুন্দরী। কেরিয়ারের শেষদিকে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যাল্বাম রেকর্ড করেন।

আজ এই মহান সঙ্গীত শিল্পীকে তাঁর ৮৯তম জন্মদিনে সংবাদ প্রভাকর টাইমস-এর পক্ষ থেকে থাকল শ্রদ্ধা আর শুভেচ্ছা। আজও তিনি আমাদের মধ্যে তাঁর অসাধারণ সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বেঁচে আছেন। এভাবেই তিনি থাকবেন সঙ্গীতের মধ্যে।

Published on: আগ ৪, ২০১৮ @ ২২:১৩

 


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

− 1 = 4