মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন শিল্প। সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস যেভাবে মহামারীর আকার নিয়েছে তাতে এক গভীর সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলেই।কি অবস্থায় আছে তারা, কত টাকা ক্ষতি হয়েছে তাদের এই সমস্ত বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রভাকর টাইমস শুরু করতে চলেছে এক বিশেষ সিরিজ। আজ এভারেস্ট নিয়ে আমাদের প্রথম কিস্তি।
Published on: এপ্রি ২, ২০২০ @ ০১:০৬
Reporter: Aniruddha Pal
এসপিটি নিউজ, ২ এপ্রিলঃ বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ আজ পর্যটক শূন্য। এ বছর তাদের টার্গেট ছিল ২ মিলিয়ন পর্যটককে আকৃষ্ট করা, কিন্তু তা এখন হয়ে গেল শূন্য। তুষারশুভ্র গিরিরাজ হিমালয়ের উচ্চতম শৃঙ্গ এভারেস্টেও পড়েছে করোনাভাইরাসের ছায়া। এপ্রিল থেকে শুরু হয় এভারেস্ট অভিযান। বর্তমান বিশ্বব্যাপী মহামারী এখন এখানকার পর্যটন শিল্পকে গ্রাস করে নিয়েছে। পারমিট থেকে আয় হওয়া ৪ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।
হিমালয় পার্বত্য শহর খুমজং
হিমালয় পার্বত্য শহর খুমজং। প্রতিবছর এভারেস্টে আরোহণের মরশুমের আগেই এখানে মানুষের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে যায়।এবার ছবিটা বদলে গেছে। ভয়ানক করোনাভাইরাস বিশ্বের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গে যাত্রা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় শেরপাদের জীবিকা এক চরম বিপর্যয়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে এর থেকে মুক্তি মিলবে সেই প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে কারও জানা নেই। এই খুমজং শহরেই পর্বতারোহীদের সাহায্যকারী শেরপাদের বাড়ি। যাদের জীবিকা পর্বতারোহীদের উপরই নির্ভর করে। কিন্তু এখন বিশ্বজুড়ে যে মহামারী দেখা দিয়েছে বহু দেশে লকডাউন চলছে এবং আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার ফলে সব থমকে গিয়েছে। পর্বতারোহীদের আগমন একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেরপাদের রুটি-রুজি আজ চরম সংকটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
মাথায় হাত শেরপাদের
সংবাদ সংস্থা এএফপি তুলে ধরেছে এমনই কয়েকজন শেরপার বর্তমান অবস্থার কথা। সংবাদ প্রভাকর টাইমস তাদের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কত অসহায় অবস্থার মধ্যে তারা রয়েছে তা তাদের কথার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেয়েছে। পর্বতারোহীদের উপরেই তারা নির্ভরশীল থাকে। বছরের এই সময়টার দিকে তাকিয়ে তারা সারা বছর বসে থাকে। কবে এপ্রিল মাস আসবে। এবার সেই এপ্রিল মাসের শুরুতেই এভারেস্টের আকাশে কালো মেঘ জমেছে। যা তাদের ভবিষ্যৎকে এখন এক অনিশ্চয়তার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এখানকারই এক শেরপা হলেন ফুলবা নিমগাল শেরপা। যিনি ১৭ বছর বয়সে এভারেস্ট এবং অন্যান্য পাহাড়ে আরোহন করা শুরু করেন। বর্তমান পরিস্থিতে তাঁর এখন মাথায় হাত। তিনি জানেন না না এখন তাদের খাবার জুটবে কোথা থেকে।খুমজং-এর ঘরে ঘরে পড়ে আছে দড়ি, যা 8,848 মিটার (29,029 ফুট) উচ্চতায় আরোহনের সময় কাজে লাগে। স্থানীয় হস্টেল এবং চায়ের দোকানগুলি একেবারে খালি। নেই একজন পর্যটকও।
এভারেস্ট পারমিট করতে 11,000 ডলার খরচ হয়
নেপাল 12 মার্চ সমস্ত পর্বত অভিযানের অনুমতি বাতিল করে সরাকারিভাবে শৃঙ্গে আরোহন বন্ধ করে দিয়েছে। এর জন্য আরোহণের পারমিট থেকে সর্বনিম্ন চার মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। একার জন্য এভারেস্ট পারমিট করতে 11,000 ডলার খরচ হয়।এভারেস্টের মরশুম এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের শেষের দিক অবধি চলে।এই সময়ের দিকে চেয়ে থাকে শেরপাদের পরিবার। যারা এই সময় 5,000 থেকে 10,000 ডলার উপার্জন করে থাকেন। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের সামনে আজ নিয়ে এসেছে এক ঘন অন্ধকারময় জীবন।
শেরপারা যা বললেন
ফুলবা নিমগাল শেরপা খুমজুঙে তার বাসায় ছিলেন। এএফপিকে জানালেন তার কথা। তিনি বলেন, ” এটা আমাদের কাজের জায়গা।” তিনি তার স্ত্রী এবং ছয় বছরের এক সন্তানকে নিয়ে থাকেন।আরও এক শেরপা ইয়াক পালকের ছেলে। যিনি আটবার এভারেস্টে উঠেছেন এবং এক ডজন আরোহীকে এভারেস্টের শৃঙ্গে পৌঁছতে সাহায্য করেছেন। তিনিও বলছিলেন-“সবাই এখন আমরা একই সমস্যায় ভুগছি।” 14 বার এভারেস্টের শীর্ষে ওঠা পেম্বা গ্যালজেন শেরপা বলছিলেন তার কথা।
এক ভূতুড়ে শহর
গত বছরের বসন্ত মরশুমে 885জন এভারেস্ট শীর্ষে পৌঁছেছিল, যার মধ্যে 644জন নেপালের দিক থেকে গিয়েছিল।এবার পরিস্থিতি খুব খারাপ।করোনাভাইরাস বেস ক্যাম্পকে নির্জন স্থানে পরিণত করেছে।এর আগের শেষ শহর নামচে বাজারও সম্পূর্ণ খালি।গাইড নেই। দারোয়ানের দেখা নেই। রান্নাঘর খালি পড়ে আছে। এবং অন্যান্য সহায়তা কর্মীদের খালি হাতে পথে হাঁটতে দেখা গিয়েছে।চেনা নামচে বাজার আজ যেন কেমন অচেনা হয়ে পড়েছে। বলছিলেন ওই শেরপা।মরশুম বাতিল হয়ে যাওয়ায় চেনা ছবি কেমন রাতারাতি বদলে গেছে। সবাই কর্মচ্যুত হয়ে গিয়েছে।এ যেন সত্যিই এক ভূতুড়ে শহর।
সঠিক সিদ্ধান্ত
- বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু শেরাপারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না ক্ষতির মুখে নেপালের একটা বড় অংশ। এএফপি-র সূত্র বলছে- বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিল অনুসারে, নেপালের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় আট শতাংশ পর্যটনের সঙ্গে জড়িয়ে এবং এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়।নেপালে 2015 সালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আজ এখানে এসেছে।
- 2020 সালে রেকর্ড পরিমান দুই মিলিয়ন পর্যটককে আকৃষ্ট করার প্রত্যাশা নিয়ে তারা এগোচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই ফের বড় ধাক্কা।তবে এভারেস্ট অঞ্চলের বাসিন্দারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত। তাদের কাছে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। তারা মনে করেন- সংক্রমণের ঝুঁকিটি আরও মারাত্মক। একবার যদি এখানে এই ভাইরাস ঢুকে যায় তাহলে তার যে কি ভয়ানক পরিণতি হবে সেটা তারা ভালোই জানেন। এখানের আবহাওয়ার সঙ্গে রতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
- বিশেষ করে এখানে তেমন বড় মাপের কোনও হাসপাতাল নেই।তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক বলেই তারা মনে করছেন। 21 বার এভারেস্টে ওঠা প্রখ্যাত পর্বতারোহী ফুরবা তাশী শেরপা বলছিলেন যে হিমালয়ের গ্রামে এই ভাইরাস ঢুকে পড়লে তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।নেপাল পর্বতারোহণ সমিতির সভাপতি সান্তা বীর লামা বলেছেন, “যারা কেবল পর্বতারোহণে নয়, অন্যান্য সেক্টরেও কাজ করতে পারছেন না তাদের সাহায্য করার জন্য সরকারকে একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।” ছবি সৌজন্যে এএফপি