সংবাদদাতা– অনিরুদ্ধ পাল
Published on: জুলা ৬, ২০১৯ @ ০৯:১০
এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ৬জুলাই: যাঁর বাবা ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং মা ছিলেন যশস্বী মহিলা যোগমায়া দেবী তাদের সন্তান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তো সর্বগুণের অধিকারী হবেনই। আর তিনি জীবনে সেই গুণের প্রকাশও ঘটিয়ে গিয়েছেন। সারা দেশজুড়ে তিনি এমন অনেক ভালো কাজ করে গিয়েছেন যার জন্য তাঁকে ভারত কেশরী নামেও অভিহিত করা হয়।
শিক্ষাব্রতী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
ভারত কেশরী পন্ডিত ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন কৃতী মেধাবী ছাত্র। শিক্ষাজীবনে তাঁর মেধার প্রকাশ তিনি ঘটিয়ে গিয়েছেন বারংবার। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ তো তিনি দিয়ে গিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করার সময়। যখন সেখানে ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিযুক্ত ছিলেন স্বয়ং তাঁর পিতা স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। সেইসময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় অর্থাৎ নিজের বাবাকে শিক্ষাপরিকল্পনা প্রণয়নে সহয়তা করেছিলেন। এ থেকেই বোঝা যায় তিনি একজন কত বড় মাপের দূরদর্শী সম্পন্ন মানুষ ছিলেন।পরবর্তীকালে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব চেয়ে কম বয়সী ভাইস চ্যান্সেলর হয়েছিলেন ড. শ্যামাপ্রসাদ। এ তো গেল তাঁর একটি গুণের কথা।
মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন প্রভূত জ্ঞান ও আশীর্বাদ
১৯০১ সালের ৬ই জুলাই কলকাতায় এক উচ্চ সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও মা যোগমায়া দেবীর কাছ থেকে শ্যামাপ্রসাদ ছোট থেকেই অসামান্য পান্ডিত্য আর জ্ঞান এবং ঐকান্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনা লাভ করেছিলেন। তাঁরা তঁকে ‘পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ’ জীবন গঠনে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
শিক্ষায় অসামান্য সাফল্য
বরাবরই তিনি একজন কৃতী ছাত্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিয়ে গিয়েছেন। ১৯২১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরাজিতে সম্মান পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে উত্তীর্ণ হন এবং তাঁর পিতার সম্মান ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখেন। এরপর তিনি ভারতীয় ভাষায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এল পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেন।
তাঁর দেশভক্তি ছিল ঈর্ষনীয়
দেশ সেবায় তিনি নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। ভারত বিভাজনের তিনি তীব্র বিরোধী ছিলেন। ১৯৪১ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন-“মুসলিমরা যদি ভারতবর্ষের বিভাজন চায় তবে ভারতের সকল মুসলিমদের উচিত তল্পিতল্পা গুটিয়ে পাকিস্তান চলে যাওয়া।”জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ নং ধারা প্রয়োগ নিয়ে নেহেরু মন্ত্রিসভায় বিরোধিতা করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে আসেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। পরবর্তীকালে তিনি “এক প্রজাতন্ত্রের ভিতর আর এক প্রজাতন্ত্র থাকতে পারে না” এর বিরোধিতা করে আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন।
জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা
১৯৫১ সালের ২১শে আগস্ট শ্যামাপ্রসাদ ভারতীয় জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করেন।এর আগে দেশে এত বড় শৃঙ্খলাবদ্ধ পার্টি তৈরি হয়নি। হিন্দু সম্প্রদায়ের জাগরণের চেষ্টায় জনসঙ্ঘ আপ্রাণ সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছে। আজকের এই ভারতীয় জনতা পার্টির জন্মও হয়েছে এই জনসঙ্ঘের হাত ধরেই। এদেশে হিন্দুত্বের প্রতিষ্ঠার জন্য যারা আজও সমানভাবে কাজ করে চলেছে।
তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় নেহেরু সরকারকে
এমন একজন কৃতী মানুষের মৃত্যু ঘিরে আজও কিন্তু প্রশ্ন ওঠে তৎকালীন নেহেরু সরকারের বিরুদ্ধে। ভারত কেশরী পন্ডিত ড. শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুর জন্য সেইসময়কার নেহেরু সরকার দায়ী ছিল তা কিন্তু ২০০৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বাজপেয়ী সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছিল। কি হয়েছিল তাঁর মৃত্যু ঘিরে শুনুন তাহলে।
নেহেরু মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। সেইসময় অনুমতি ছাড়া কাশ্মীরে ঢোকা যেত না। যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। তাঁর বক্তব্য ছিল- এসব কেন হবে? আমাদের ডেশের মধ্যেই অবস্থিত একটি রাজ্যে ঢোকার জন্য কেন এমনটা হবে? তাই তো তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন-‘এক দেশ এক নিয়ম’। এরপর বিনা অনুমতিতে কাশ্মীরে ঢোকার কারণে তাঁকে গ্রেফতার করে রাজ্যের শেখ আবদুল্লা সরকার। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর পেনিসিলিন হাইপারসেনসিটিভিটি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে পেনিসিলিন দেওয়া হয়। তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আপত্তি গ্রাহ্য করেনি আবদুল্লা সরকার। যার ফল হয়েছিল মারাত্মক। মৃত্যু হয় তাঁর। শ্যামাপ্রসাদের মা নি্রপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে সেইসময়ে নেহেরুকে চিঠি লিখলেও তিনি তা কার্যকর করেননি। এমনই দুঃখজনক পরিণতি নেমে এসেছিল ভারত কেশরীর শেষজীবনে।
নবদ্বীপে আজ বিশাল কর্মযজ্ঞের আয়োজন
আজ তাঁর ১১৮তম জন্মদিনে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান। সংবাদ প্রভাকর টাইমস জানাচ্ছে বিনম্র শ্রদ্ধা।নবদ্বীপে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশন, নিউ দিল্লি এবং ড. শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি স্মৃতি রক্ষা কমিটির যৌথ উদ্যোগে এক মহতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আহ্বায়ক জীবন কৃষ্ণ সেন ও প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর জয়দীপ রায় জানিয়েছেন- এই উপলক্ষে আজ শনিবার সারা দিন ধরে চলবে নানা অনুশঠান। যার মধ্যে রয়েছে শিশুদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির, ড. শ্যামাপ্রসাদের ঊপর বিষয় ভিত্তিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা এবং সব শেষে আলোচনা সভা। যেখানে বক্তব্য রাখবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক শিবপ্রকাশজী, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ড. অনির্বান গাঙ্গুলি ও লোকসভার সাংসদ জগন্নাথ সরকার।
Published on: জুলা ৬, ২০১৯ @ ০৯:১০