ইতালির মেডিকেল-হিরো: মৃত্যুর মিছিল আটকাতে চলছে ওদের লড়াই

Main বিদেশ স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান
শেয়ার করুন

  • 67 কোটির জনসংখ্যার দেশে আজ মৃত্যুর হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচানোই যে ওদের কাছে এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
  • মৃতের সংখ্যা 9,134 এ উন্নীত করার জন্য আরও 969 জনকে যুক্ত করেছে।শুধু লম্বার্ডি্তে এর মধ্যে 541 জন ছিল।

 Published on: মার্চ ২৯, ২০২০ @ ২৩:৩৬ 

এসপিটি নিউজ ডেস্ক:  তাদের চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। তারা জানে না তাদের জন্য কি অপেক্ষা করে আছে। চোখের সামনে প্রতি মুহূর্তে দেখে চলেছেন মৃত্যুর হাহাকার আর আর্তনাদ। তবু লড়াই তাদের থেমে নেই। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তারা দিন-রাত এক করে নাওয়া-খাওয়া ভুলে সমানে চালিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধ। অ্যাসোসিয়েট প্রেস ইতালির এমনই 16জন ডাক্তার-নার্সদের ছবি তুলে জানাল অসীম শ্রদ্ধা। সংবাদ প্রভাকর টাইমস জানাল তাদের কুর্নিশ। ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে সব থেকে বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গেছে এই ইতালিতেই। সংখ্যাটা 10 হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু এখানে বয়স, রোগ, বার্ধক্য কোনওকিছুই মানেনি। এরাই আজ মেডিকেল হিরো ইতালিতে।

ইতালির লম্বার্ডি অঞ্চলের ছবি

ইতালির লম্বার্ডি অঞ্চলের বার্গামো, ব্রেসিয়া এবং রোমের হাসপাতালে নিরলস রোগীর সেবায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন এইসমস্ত ডাক্তার আর নার্সরা। মখে তাদের মাস্ক। হাতে দস্তানা।মাথা তাদের ঢাকা। প্রত্যেকেই যেন অচেনা অজানা। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তারা সমানে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে দিন-রাত এক করে। ওদের যে এই লড়াই জিততেই হবে। না হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। ভারতের কথা ছেড়েই দিন চিনের অবস্থাও ওদের চেয়ে ঢের ভালো। ওদের দেশে যে আজ মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে গেছে। 6-7 কোটির জনসংখ্যার দেশে আজ মৃত্যুর হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচানোই যে ওদের কাছে এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার ইতালিতে ছিল খুব খারাপ দিন

শুক্রবার ইতালিতে ছিল খুব খারাপ দিন। পাঁচ সপ্তাহ আগে দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ইতালি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ COVID-19 এ মৃতের সংখ্যা 9,134 এ উন্নীত করার জন্য আরও 969 জনকে যুক্ত করেছে। শুধু লম্বার্ডি্তে এর মধ্যে 541 জন ছিল।কত করুন সেই দিন বুঝতেই পারছেন।

ইতালিতে মোট নিশ্চিত হওয়া মামলায় চিনকেও ছাড়িয়ে গেছে এবং কেবল আমেরিকার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। তবে ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটস আরও বলেছে যে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে সংক্রমণের মাত্রা ধীরে ধীরে আগমন ঘটেছিল, যা কিনা 2/3 সপ্তাহ পরে একটি জাতীয় লকডাউনের চেহারা নিতে শুরু করে।

চিকিৎসা কর্মীরা জানেন তারা কোথায় লড়াই করছেন

চিকিৎসা কর্মীরা জানেন তারা কোথায় লড়াই করছেন। কাদের জন্য করছেন। আর কোন পরিস্থিতিতে করছেন। এখানে থেমে থাকার উপায় নেই। থেমে থাকা মানে সব শেষ হয়ে যাওয়া। আর একজনের সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া। তাই ভাইরাসকে আটকাতেই হবে। তারা এটাও জানে যে জরুরী অবস্থার শেষ বলে কিছু হয় না। বার্গামোর হিউম্যানিটাস গাভাজেনি হাসপাতালের আইসিইউ নার্স ড্যানিয়েলা টার্নো বলেছিলেন, “আমরা যেমন জীবনযাপন করছি তা ট্যাটুগুলির মতো।এটি চিরকাল থাকবে।”

সামান্য জল পর্যন্ত গলায় ঢালতে পারছেন না

হাসপাতালের এই সমস্ত কর্মীরা তাদের কর্তব্য সম্পর্কে এতটাই সচেতন যে তারা জানে একটু সময় নেওয়া মানে কত ক্ষতি হয়ে যাওয়া। তাই তারা সামান্য জল পর্যন্ত গলায় ঢালতে পারছেন না। 8, 10, বা 12-ঘন্টা ধরে কাজের সময় তারা জল কিংবা তরল জাতীয় কিছু পান করছেন না পাছে আবার যদি তাদের বাথ্রুমে ছুটতে হয়, রোগীর অসুবিধা তৈরি হয়। এখানেই থেমে নেই তারা- তারা তাদের স্বস্থ্যের পোশাক, মাস্ক, দস্তানার বিষয়েও গভীরভাবে সচেতন থাকছেন যাতে করে এজন্য তাদের ভোগান্তি না হয়। তারা ভালোমতোই জানেন যে একটু সামান্য ভুলের জন্য ভাইরাস তাদের শরীরে সংক্রামিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই তারা সাবধান থাকছে এবং নিজেরাও সাবধান হচ্ছে।

ইতালিতে সারা দেশে 7,100 এরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী

ইতিমধ্যে, ইতালিতে সারা দেশে 7,100 এরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী রয়েছেন। তাদের পুনরুদ্ধার করতে বাড়িতে পাঠানো হয় এবং নেতিবাচক পরীক্ষার সময় তারা কাজে ফিরে রিপোর্ট করেন। তাদের অনুপস্থিতিগুলি খুব বিরক্তিকরভাবে অনুভূত হয়। 50 জনেরও বেশি চিকিৎসক কখনই সুস্থ হন নি এবং তাদের মৃতদের মধ্যে গণনা করা হয়।আইসিইউ ওয়ার্ডগুলিতে চাপ খুবই স্পষ্ট, আছে নীরবতা। কান পাতলে শোনা যাবে হেলিকপ্টারগুলির শব্দ। তাদের অবতরন এবং রোগীদের নিয়ে আসা। তাদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

ইতালিতে করোনাভাইরাসের মহামারী

ইতালিতে করোনাভাইরাসের মহামারীটি এখন ভয়াবহ আকার নিয়েছে।  বীরাঙ্গনারা শুধু শ্বাসকষ্ট এবং অক্সিজেন দিয়েই অসুস্থদের চিকিৎসা করছে না তারা পুত্র এবং কন্যা, ভাই ও বোনদের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন, যারা সাধারণ পরিস্থিতিতে অসুস্থ প্রিয়জনের হাত ধরে তাদের সঙ্গে দেখা করতে এবং উৎসাহের কথা বলতে পারবেন।COVID-19 রোগীদের অবশ্যই বিচ্ছিন্ন হতে হবে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে। অসুস্থরা একা থাকেন, প্রায়শই বৃদ্ধ।

“এই রোগীরা যারা অনাহারে রয়েছেন,” ব্র্রেশিয়ার পাবলিক সিভিক হাসপাতালের আইসিইউর প্রধান ডাঃ গ্যাব্রিয়েল টমাসোনি বলছিলেন। তিনি বলেন যে তাঁর দল মেশিনগুলির সাহায্যে রোগীদের জীবন রক্ষাকারী সাহায্যই নয়, আরও কিছু আরও মানবিক দিক তুলে ধরছেন।টমাসনি শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ডিউটি শেষে বলেন, “আমরা জানি এ্ররা বয়স্ক রোগী, তাদের ঘনিষ্ঠতা প্রয়োজন। আবেগপ্রবণতা দরকার। আপনি তাদের দিকে তাকালেই সেটা বুঝতে পারবেন।”

ইতালির মানুষের ত্রাতারা আজ দেশের মেডিকেল-হিরো

ইতালির বার্গামোর হিউম্যানিটাস গ্যাভজেনি হাসপাতালের নার্স আনা ট্র্যাভেজানো (39),রোমের আইসিইউ ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের স্বাস্থ্যকর্মী ক্লৌডিয়া অ্যাকার্ডো, 43 বছর বয়সী রোমের নার্স মিরকো পের‍্যুজা, বার্গামোর হিউম্যানিটাস গাভাজেনি হাসপাতালের 24 বছরের নার্স লুসিয়া পেরোলারি, রোমের আইসিইউ-এর হেড ফিজিসিয়ান 48 বছরের ডা সেবাস্টিয়ানো পেত্রাক্কা, ইলেক্ট্রোফিজিলোজিস্ট 37 বছরে লুকা তারান্তিনো, রোমের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কর্মী 39 বছর বয়সী লৌরা ওরসিনি, রোমের আইসিইউ নার্স 48 বছরের অদ্রিয়ানো রডরিগেজ, আইসিইউ নার্স 34 বছরের ড্যানিয়েলা তুর্নো, অঙ্কোলজিস্ট অ্যালেসান্দ্রো ডিঅ্যাভেনি, 65 বছর বয়সী আই সিইউ-এর ডিরেক্টর গ্যাব্রিয়েল তমাসোনি, আইসিইউ নার্স 30 বছরের ড্যানিয়েল রন্ডিনেলা, নার্স 25 বছরের মার্টিনা পাপ্পোনেত্তি, ইমিউনোলজিস্ট 33 বছরের ডা মার্তা কাতোনি, 48 বছরের নার্স মিচেলা পেগাতি, 54 বছরের নার্স ফ্রান্সিস্কো তারান্তিনি।এরা সকলেই লড়াই করে চলেছে মহামারীর বিরুদ্ধে ।

Published on: মার্চ ২৯, ২০২০ @ ২৩:৩৬


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

33 − = 23