আজ রাতের জোয়ার নিয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Main আবহাওয়া দেশ রাজ্য
শেয়ার করুন

Published on: মে ২৬, ২০২১ @ ১৮:৫২
Reporter: Aniruddha Pal

এসপিটি নিউজ, কলকাতা, ২৬ মেঃ ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সরে গেলেও ভরা কোটালের ফলে আজ রাতে ভাররী বানের আশঙ্কা আছে। তাই মানুষদের সতর্ক করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি রাজ্যের ও কেন্দ্রের সমস্ত এজেন্সি যারা এই বিপর্যয়ে সমানভাবে কাজ করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে এবারের দুর্যোগে ১৫ লক্ষেরও বেশি মানুষকে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা ছাড়াও হাওড়া সহ আরও কয়েকটি জেলা আছে। তবে ফিল্ড রিপোর্ট এলেই ক্ষতির সঠিক তথ্য জানাতে পারবেন বলেও নবান্নের এদিনের বৈঠকেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন নবান্নে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন- “আমাদের অনেক গ্রামে বাঁধ ভেঙে গেছে। অনেক গ্রামে জল ঢুকে গেছে। অনেক এলাকা জলে প্লাবিত হয়েছে। কলকাতায় কালীঘাট, রাসবিহারি, চেতলা গঙ্গার আশপাশে যারা থাকেন সেখানে। এছাড়াও দীঘা, মন্দারমণি, নন্দীগ্রাম থেকে শুরু করে মেদিনীপুর পূর্ব ও পশ্চিম, দক্ষিণ ২৪ পগনার সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, গোসাবা, সন্দেশখালি, কুলপি থেকে শুরু করে এসব জায়গার মানুষরা সাবধানে থাকবেন। কারণ জোয়ার আসার সম্ভাবনা আছে। এই সময় জলের স্তর কিন্তু পাঁচ ফুট উঁচু হতে পারে।”

মুখ্যমন্ত্রী বলেন – “যেহেতু আমাদের হোম সেক্রেটারি একটা রিপোর্ট করলেন যে কাল পর্যন্ত নদীতে ভরা জোয়ার থাকবে, আর তাই যা জল আছে তা যদি আরও কয়েক ফুট বাড়ে সেটা কিন্তু সাঙ্ঘাতিক। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তাই যারা নদী, গঙ্গা কিংবা সমুদ্রের পাশে থাকেন তারা সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়।”

“আমরা ১৫ লক্ষ ৪ হাজার ৫০৬জনকে আমরা নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে গেছি। প্রায় এক কোটি মানুষ এই দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। তিন লাখের মতো বাড়ি এখনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ত্রাণ ১৪ হাজার চলছে। বাঁধ ভেঙে গেছে ১৩৪টি। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ১০ লক্ষ ত্রিপল, জামা-কাপড় ও কাপড়, জি আর চাল সমেত ১০ কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে।দুর্ভাগ্য বশতঃ একজনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু।আসলে তাকে উদ্ধার নিরাপদ আশ্রয়ে আরাখা হয়েছিল। সে পরে মাছ ধরতে গেছিল। তখনই মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটানার ফলেই মৃত্যু হয়েছে।”

“ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক জায়গা। উত্তর ২৪ পরগনার-সন্দেশখালি-১, সন্দেশখালি-২, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, হাড়োয়া ব্লক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার- নামখানা, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা, কুলপি, ফ্রেজারগঞ্জ, বাসন্তী, ক্যানিং-১ ও ২, বজবজ। পূর্ব মেদিনীপুরের- দীঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, রামনগর-১ ও ২, কাঁথি-১ ও ২, নদনীগ্রাম-১ ও ২, সুতাহাটা, মহিষাদল, দেশপ্রাণ, কোলাঘাট। হাওড়া জেলার- শ্যামপুর-১ ও ২, উলুবেড়িয়া-১ ও ২, বাগনান-১ ও ২, সাঁকরাইল। এছাড়াও কালীঘাট, চেতলা জলে প্লাবিত হয়েছে।”

“এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিজ সম্পদ লবনাক্ত জলে। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, হর্টিকালচার থেকেও রিপোর্ট এসেছে। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে তা আমরা ফিল্ড সার্ভের পর বলতে পারব। আমাদের জেলাশাসকরা ফিল্ডে আছে বলে আমরা এত তাড়াতাড়ি এটা জানাতে পারলাম।” বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

“জোয়ারের সময় বিদ্যুৎ দফতরকে বলা হচ্ছে তারা যেন কারেন্ট অফ রাখে। কারণ, ওই সময় বৈদ্যুতিকীকরণ হয়ে কেউ যেন মারা না যায়। সতর্ক না থাকার জন্য অনেক মানুষ প্রাণ হারায়।আমি আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছি।” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রতি বছরই এরকম দুর্যোগ আসছে। আর এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে নদীবাঁধের। মুখ্যমন্ত্রী এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে সেচ দফতরের কাছে জানতে চান এর সমাধান কি? “জল যদি জামশেদপুর, ধানবাদের দিকে চলে যায় আর সেখানে জল বেড়ে গেলে ওরা কিন্তু জল ছেড়ে দিতে পারে। তাই আমি সেচদফতরকে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলব। প্রতি বছরে এরকম বিপর্যয় হতে থাকলে তাহলে আমরা যা করছি তা পুরোটাই ভেস্তে যাচ্ছে। তাহলে এর থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান কি। সেটা দেখতে হবে। নদীমাতৃক রাজ্য হওয়ায় আমাদের এই ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। তাহলে এসব তৈরি করতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। কোথা থেকে আসবে। এটা নিয়ে চিন্তা করা দরকার। আজ থেকে একটা টাস্ক ফোর্স করে দিলাম। মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে এই দলে থাকবে বন দফতর, পরিবেশ দফতরের প্রতিনিধিরাও।”

Published on: মে ২৬, ২০২১ @ ১৮:৫২


শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

29 − = 23